কিছু কিছু রাগ বড় সংক্রামক - ছোঁ‍য়াচে ভীষণ।

কিছু কিছু রাগ বড় সংক্রামক - ছোঁ‍য়াচে ভীষণ —

ইন্দিরা হত্যার পর, দাঙ্গা ফলানোর ঘটনায় কংগ্রেস পড়েছিল একসময় শিখদের কু-নজরে। সেই ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে খুব চালাকি করে প্রণব-বাবুর মত তুখোড় নেতাদের সাইড লাইনে বসিয়ে‍‍ মনমোহন সিংকে করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী। এতে কাজও হয়। কংগ্রেসের এই মোক্ষম চালে তারা ধীরে ধীরে তাদের জমি ফিরে পেতে শুরু করে পাঞ্জাবে এবং দেশ বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিখদের মধ্যে। বস্তুত শিখেরা তাদের পুরানো ব্যথা ভুলে, ধীরে ধীরে কংগ্রেস-মুখী হতে শুরু করে। স্বজাতির এই টান স্বাভাবিক। বাঙালি-তামিল-ওড়িয়া-গুজরাটি, মুসলমান, খ্রিষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, আদিবাসী, দলিত প্রভৃতি প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্যেই এ প্রবণতা কম বেশী লক্ষ্য করা যায় ভারতীয় চালচিত্রে। প্রণব-বাবুকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পেয়ে, আমরা বাঙালিরা যেমন খুব আনন্দিত ও গর্ববোধ করেছিলাম, কিম্বা প্রণব-বাবু ও জ্যোতি বসুকে দোরগোড়ায় এসেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে না দেখতে পাওয়ার, সৌরভের মাঝ পথে অধিনায়কত্ব চলে যাওয়ার একটা আক্ষেপ যেমন রয়ে গেছে বাঙালিদের মধ্যে, বলাই বাহুল্য পাঞ্জাবীদের ক্ষেত্রেও তাইই হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে ঘিরে।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য মনমোহন সিংহ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পর ভোটে হেরে পদ হারানোর পর থেকেই কিন্তু শিখদের একটা বড় অংশের চাপা ক্ষোভ ঘনীভূত হতে থাকে বর্তমান শাসককুলের ওপর এবং অবশ্যই টার্গেট হয়ে দাঁড়ান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। আর তা পঞ্জাবের বিধানসভা ভোটের মতনই কৃষক আন্দোলন শিরোনামের এই বিদ্রোহেও অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত। শুধু পাঞ্জাব বা ভারতীয় শিখদের মধ্যেই নয় এই ব্যাপারটি আজ বিদেশে বসবাসকারি শিখদের মধ্যেও সংক্রামিত। এর আগে ঠিক এমনই সংক্রমণ আমরা ৩৭০ বাতিলে লক্ষ্য করেছি একটি সম্প্রদায় বিশেষের মধ্যে। এমন সব সুযোগকে ক্যাশ করাতে বিরোধী পক্ষ যে উঠে পড়ে লাগবে সেটাই স্বাভাবিক। এই আন্দোলনের বারুদে বিরোধী রাজনৈতিক উস্কানির কৌশলটাকে বাদ দিয়ে যদি নজর দেওয়া হয়, তাহলে এটা ভীষণ স্পষ্ট যে পাঞ্জাবের মানুষ এর বিরুদ্ধে যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ভারতের অন্যান্য প্রদেশে তা মোটেও লক্ষ করা যাচ্ছে না। বরং পাঞ্জাবের বাইরে কিষান আন্দোলনের নামে রাজনীতিটাই মুখ্য।

কিছু কিছু রাগ বড় সংক্রামক হয় এবং ভীষণভাবে তা ছোঁয়াচে। উদাহরণ স্বরূপ একটি অরাজনৈতিক ঘটনার উদাহরণ দিয়ে বলি - একদা ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে তার পদ থেকে ‘হঠাৎ করে’ বাদ দেওয়ার ফলে ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড, দ্রাবিড়, ধোনির ওপর আপামর বাঙালিদের একটা একটা চাপা ক্ষোভ প্রত্যক্ষ করা গিয়েছিল। কলকাতার একটি প্রথম সারির বাংলা খবরের কাগজের শিরোনাম হয়েছিল ‘বাঙালি সৌরভ বাদ’ । এ ধারা চলছে –চলবে।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted