আপনার কখনো মনে হয়েছে ‘রেডক্রস’ কেন মুসলিম দেশে ‘রেডক্রিসেন্ট’ হয়ে গেছে? হেনরী ডুনান্ট আর্ত মানবতার সেবায় যে সংগঠন বিশ্বব্যাপী জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য গঠন করেছিলেন সেটাই কেন সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত হলো?
১৮৬৩ সালে ২৬ অক্টোবর জেনেভায় রেডক্রস যে ২৫ জন নাগরিককে নিয়ে কমিটি গঠন করে তাতে সিদ্ধান্ত হয়, সামরিক ও বেসামরিক জনগনের সেবায় যুদ্ধক্ষেত্রে চিকিৎসা ও ফিল্ড হাসপাতালের ব্যবস্থা করা হবে। সুইজারল্যান্ডে রেডক্রসের স্থায়ী সদর দপ্তর গঠন করা হয় এব্ং বিশ্বব্যাপী এমন একটি প্রতীকের কথা চিন্তা করা হয় যা দেখে যেন বুঝা যায় এরা চিকিৎসা সেবাদানকারী বা ডাক্তার টিম। সেই ভাবনা থেকে সাদা জমিনের উপর লাল রঙের ক্রস চিহ্ন প্রচলন করা হয়। সুইজারল্যান্ডে যেহেতু এর স্থায়ী সদর দপ্তর করা হয়েছে, সুইজদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও সন্মানের চিন্তা থেকে সুইজারল্যান্ডের পতাকা অনুকরণে বিপরীত রঙে ক্রসটি নেয়া হয় সুইজ পতাকা থেকে। সেই থেকে বিশ্বব্যাপী মানুষ লাল রঙের ক্রস দেখলেই বুঝতে পারে এখানে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে। কিন্তু ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়া ও তুরস্ক যুদ্ধ লাগার সময় তুরস্ক প্রথম আপত্তি তোলে এই প্রতীক নিয়ে। তারা এটাকে খ্রিস্টান ক্রুশের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলে এবং সেটা মুসলমানদের পক্ষে মেনে না নেয়ার ঘোষণা দেয়। তুরস্ক তখন তাদের পতাকায় থাকা অর্ধেক চাঁদের প্রতীকটি ব্যবহারের ডাক দেয় যা মুসলিমদের চন্দ্র ধারণার সঙ্গে যোগসূত্র। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে রেডক্রসের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে কিছু বিরোধীতা স্বত্ত্বে অবশেষে মুসলিম দেশেগুলোর জন্য ভিন্ন প্রতীক ও ভিন্ন নাম (রেড ক্রিসেন্ট) নির্ধারণ করা হয়।
সারা পৃথিবীতে যারা ‘ইসলামী সংস্কৃতি’ ‘ইসলামী ব্যাংকিং’ ‘ইসলামী টুরিজম’ ‘ইসলামী অর্থনীতি’ ‘ওআইসি’ ‘মুসলিম বিশ্ব’ ‘মুসলিম শাসন’ জাতীয় বিভক্তি ও সাম্প্রদায়িকতাকে নিজেদের অধিকার বানিয়ে ফেলেছে তারা একটি ধর্মনিরপেক্ষ আর্ত মানবতার সেবার সংগঠনের মধ্যে খ্রিস্টানিটি খুঁজে পেয়ে বয়কটের ডাক ঠিক যেন ভূতের মুখে রাম নাম! ভাবতে বিবমিষা লাগে, এই চিন্তা আর চেতনা যদি পৃথিবীতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হত তাহলে পৃথিবীকে তারা কোন জায়গায় নিয়ে যেত! ৫৭টা মুসলিম দেশে যে পরিমাণ মুসলিম জাতীয়তাবাদ চর্চা হয় সেটা দেখেই অনুমান করতে পারেন গোটা বিশ্বকে তারা কি করে ফেলত!
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................