যেমন কুকুর তেমনি মুগুর :
------------------------------------
পাঠক, কয়েকদিন আগে থেকেই লিখছি, ১৯৫০ এ আমার ঠাকুমার প্রায় অন্ধ দাদুকে আর তার ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে দেশ ত্যাগের কথা। বাবার মুখে শুনি ছোটবেলায়, এপার বাংলায় আসার পর তারা একবেলা ভাতের ফ্যান খেয়ে দিন কাটিয়েছিল। ১৯৫০ এর যেদিনে ঠাকুমা সকলকে সাথে করে দেশ ছেড়েছিল, তার প্রেক্ষাপট একটু জেনে নিন পাঠক :
➤ ৫–৮–১৯৪৬ : তারিখে কলকাতার মেয়র মহঃ উসমান উর্দুতে একটি প্রচার পত্র বিলি করে যার বক্তব্য ছিল 'আশা ছেড়োনা তলোয়ার তুলে নাও। ওহে "কা-র" তোমাদের ধ্বংসের দিন আর বেশীদূরে নয়।' প্রচার পত্রে ছাপা হয়েছিল তলোয়ার হাতে জিন্নাহ্র ছবি।
➤ ১৫ই আগষ্ট মাঝরাত থেকে চিৎপুরের বড় মসজিদ জেগে উঠল, ট্রাক বোঝাই হয়ে হয়ে মানুষ আসতে লাগলো ছোরা তলোয়ার লাঠি নিয়ে, ট্রাক থেকে মাঝে মাঝে পাকিস্তান জিন্দবাদ লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান ধ্বনিতে আকাশ বাতাশ মুখোরিত হচ্ছিল। এমনকি লেডি ব্রেবোন কলেজের মুসলমান ছাত্রীরা বোরখা পরিহিত অবস্থায় লীগের পতাকা হাতে পাকিস্তান জিন্দাবাদ ধ্বনি দিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিল। রাজাবাজারে গোশতের দোকানে হিন্দু মহিলাদের হাত পা কাটা উলঙ্গ ধড় মাংস ঝোলাবার হুকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। তদানিন্তন ইংরেজ পুলিস কমিসনার হার্ডউউক যে রিপোর্ট দেন তাতে কলকাতার দাঙ্গার ভয়াবহতার সংবাদ অবগত হবার পর ভাইসরয় ওয়াভেল লেখে: 'পলাসীর যুদ্ধে যত লোক নিহত হয়েছে তার থেকে অনেক বেশী লোক নিহত হয়েছে কলকাতায় মুসলীম লীগের তান্ডবে।'
➤ ওই সময় কলকাতা পুলিসের D.C. HQ. ছিলেন সামসুদ্দোহা । কলকাতায় হিন্দু গনহত্যায় সুরাবর্দ্দির দোসর পুলিসের D.C. HQ. সামসুদ্দোহাকে পাক সরকার কলকাতায় পাকিস্তানের প্রথম ডেপুটি হাই কমিশনার নিযুক্ত করে। এই সংবাদ পেয়ে তৎকালীন পুলিস কমিসনার হীরেন সরকার সামসুদ্দোহাকে একটা অত্যন্ত গোপনীয় চিঠি লেখে। লেখা হয় : “খবর পেলাম পাক সরকার তোমাকে কলকাতার ডিপুটি হাইকমিশনার নিযুক্ত করেছেন। আমার কাছে সংবাদ আছে কলকাতার হিন্দু যুবকরা ডাইরেক্ট এ্যাকসন ডেতে তোমার কার্য্যকলাপের উপর এতই উতপ্ত হয়ে আছে যে কলকাতা পুলিসের সমস্ত সদস্যদেরকে তোমার সিকিউরিটিতে নিয়োগ করলেও তোমাকে রক্ষা করতে পারবে কিনা সন্দেহ।এই পরিস্থিতিতে তুমি কলকাতায় কাজে যোগ দেবে কিনা সেটা তোমার বিবেচ্য।” চিঠি পাওয়ার পর সামসুদ্দোহা আর কাজে যোগ দেননি।
➤ এই ভাবে ১৬,১৭,১৮ই আগষ্ট অবধি একতরফা হিন্দু নিধনের পর যখন হিন্দু,শিখ এবং বিহারী গোয়ালারা মিলিতভাবে দাঙ্গা প্রতিরোধ আরম্ভ করল তখন মুজিব বাধ্য হয়ে হিন্দু প্রতিরোধ কমিটির কর্ণধার গোপাল মুখার্জীর মঙ্গলা লেনের বাড়িতে কড়জোরে অনুরোধ জানাল রক্তপাত বন্ধ করার জন্য !
তাহলে একটা ব্যাপার স্পষ্ট, বাঁদরের সাথে বাঁদরামি করলে, তবেই বাঁদর জব্দ হয়। যেমন কুকুর তেমনি মুগুর !
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................