হিন্দুর চরিত্র ফুলের মত পবিত্র
আমি পূর্ববঙ্গের যে গ্রামটিতে বেড়ে উঠেছি, সেই গ্রামটিতে তখন ৯৮% হি*ন্দু ছিল। আশপাশের বহু গ্রামে হি*ন্দুদের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। আমি জ্ঞান হওয়ার পর গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছি যে, হি*ন্দু সমাজের মাত্র তিনটি দুষ্ট লোকের কারণে, শত শত হি*ন্দু বিষয়-সম্পদ ফেলে, খালি হাত-পায়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এই তিনটি লোকের কাজই ছিল― রাষ্ট্রীয় বৈষম্যমূলক 'শত্রু সম্পত্তি' ও 'অর্পিত সম্পত্তি' আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে, প্রতিবেশী সমাজের ভূমিদস্যুদের হাতে হি*ন্দু-সম্পত্তি তুলে দেওয়া।
হি*ন্দুদের ভিটেমাটি ছাড়া করতে প্রতিবেশী সমাজের ভূমিদস্যুরা হেন হীনপন্থা নেই- যা তারা অবলম্বন করে নি। রাতে ডাকাতির নামে হি*ন্দুদের ঘরে ঢুকে বীভৎস নারী ধর্ষণ, নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করা, ক্ষেতের ফসল - বাগানের গাছ কেটে নেওয়া, পুকুরের মাছ ধরে নেওয়া অথবা বিষ দিয়ে মেরে ফেলা, গাছের ফল পেড়ে নেওয়া। এছাড়াও হি*ন্দুসমাজের মানি লোকদের বাজারে বা জনসমক্ষে চড় থাপ্পড় লাথি ঘুষি মারা, রাস্তঘাটে স্কুল-কলেজগামী হি*ন্দু মেয়েদের গায়ে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করা ইত্যাদি।
হি*ন্দুদের ভিটেমাটি ছাড়া করতে প্রতিবেশী সমাজের ভূমিদস্যুরা হেন হীনপন্থা নেই- যা তারা অবলম্বন করে নি। রাতে ডাকাতির নামে হি*ন্দুদের ঘরে ঢুকে বীভৎস নারী ধর্ষণ, নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করা, ক্ষেতের ফসল - বাগানের গাছ কেটে নেওয়া, পুকুরের মাছ ধরে নেওয়া অথবা বিষ দিয়ে মেরে ফেলা, গাছের ফল পেড়ে নেওয়া। এছাড়াও হি*ন্দুসমাজের মানি লোকদের বাজারে বা জনসমক্ষে চড় থাপ্পড় লাথি ঘুষি মারা, রাস্তঘাটে স্কুল-কলেজগামী হি*ন্দু মেয়েদের গায়ে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করা ইত্যাদি।
গ্রামের হি*ন্দুরা একটা প্রতিরোধ-বাহিনী গড়ে তোলে; সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আমি ঐ বাহিনীতে সক্রিয় ছিলাম। তখনকার দিনে ইলেকট্রিসিটি কি জিনিস- তা গ্রামের মানুষ জানত না; টেলিভিশন সম্পর্কে তাদের কোন ধারণা ছিল না। গণ-সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে, আমি কিছু সমাজ সংস্কারমূলক নাটক ও উদ্দীপনামূলক যাত্রাপালার বই সংগ্রহ করি। গ্রামের একজন প্রবীণ নাট্য-অভিনেতা এবং পেশাদার যাত্রাদলের সঙ্গে কিছুদিন যুক্ত ছিল- এরকম একজন খেয়ালী প্রকৃতির যুবকের সহায়তায় - বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা তুলে, কয়েকটি সামাজিক নাটক ও ঐতিহাসিক যাত্রাপালা মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করি।
অস্পৃশ্য শ্রেণীর এক সুঠামদেহী দরিদ্র যুবক, বউ-বাচ্চা ফেলে ধর্মান্তরিত হয়ে ভিন্ন ধর্মের নারীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর, অপরিণত বয়সেই আমার মাথায় এই চিন্তা আসে যে― হি*ন্দুজাতির যদি অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়- তাহলে বর্ণভেদপ্রথা তথা অস্পৃশ্যতা নির্মূল করতে হবে। এই বিষয়ে দীর্ঘ পড়াশোনা ও চিন্তাভাবনা শেষে আমি দু'টো সমাধান সূত্র খুঁজে পেয়েছি―
১) পদবী উঠিয়ে দেওয়া।
২) অতীতে সবাই ব্রাহ্মণ ছিল, আবার যদি সবাই ব্রাহ্মণ হয়ে যায়- তাহলে হি*ন্দু সমাজে ভেদ-বিদ্বেষ-অস্পৃশ্যতা থাকবে না।
সেইসঙ্গে আরেকটি চিন্তা আমার মাথায় আসে ― যদি সামাজিক অর্থায়নে দরিদ্র-বিপন্ন হি*ন্দুদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা না যায়, তাহলে ধর্মান্তর ও দেশান্তর ঠেকানো যাবে না। আমি আমার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে সামাজিক উদ্যোগ গ্রহণের প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়েছিলাম। কিন্তু হি*ন্দুরা আমাকে সহ্য করতে পারেনি। এমনকি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা পর্যন্ত আমার প্রতি ঈর্ষাপরায়ন হয়ে ওঠে। আমি মাটিতে বসে, বন্ধুদের চেয়ারে বসাতাম; তবুও আমি তাদের মন জয় করতে পারিনি।
এক ক্রিমিনাল হি*ন্দু আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে থানায় রওনা দিয়েছিল। বেইমান হি*ন্দুরা আমার সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে- আমাকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে, পিছন দিয়ে কেটে পড়েছিল। আমি অলৌকিকভাবে প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। তবুও আমার বোধোদয় হয়নি।
এক পর্যায়ে দেখি, ফলাফল শূন্য; দু'হাত খালি। আমার চরমতম দুর্দিনে, কোন হি*ন্দু আমাকে চার আনা পয়সা দিয়ে উপকার করেনি। একনকি যারা আমার দ্বারা উপকৃত হয়েছে, তারাও আমার অসহায়ত্ব নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করেছে এবং পাওনা টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করে নি।
ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি আমাকে যথেষ্ট সমাদর করেছে, সম্মান দিয়েছে। তারা বলেছে, "আপনি আমাদের সমাজে আসুন। তারপর দেখুন, আপনার অগ্রসর চিন্তার যথাযথ মূল্যায়ন হয় কিনা..."
শহরের হি*ন্দুপাড়ায় বসবাস করতাম। সেখানকার এক হি*ন্দু ব্যক্তির কাছ থেকে জায়গা ভাড়া নিয়ে, সেখানে পরিবারিক উদ্যোগে একাধিক ব্যবসা পরিচালনা করতাম। সেই হি*ন্দু লোকটি জায়গা বিক্রি করবে শুনে, লোকটিকে বায়নার টাকা পর্যন্ত দিয়েছিলাম। সেই হি*ন্দু লোকটি বায়নার টাকা ফেরৎ না দিয়ে, আমাদের সঙ্গে ঐ জায়গার যে মূল্য স্থির হয়েছিল - তার থেকে অনেক কম দামে ভিন্নধর্মের এক লোকের নিকট ঐ জায়গা বিক্রি করে। শুধু তা-ই নয়, ভিন্ন ধর্মের যে ব্যক্তিটি সেই জায়গা কিনেছিল- তার কাছে গিয়ে পাড়ার গণ্যমান্য হি*ন্দুরা বলে, আমাদের কাছে যেন ঐ জায়গা ভাড়া না দেয়। উত্তরে সেই মুসলিম ভদ্রলোকটি তাদের বলেছিল, "আমি যদি জায়গা ভাড়া দেই, তাহলে ওদের কাছেই দেবো; কারণ ওদের থেকে ভালো ভাড়াটিয়া আমি এই শহরে পাবনা।..."
আমাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পণ্য বহনকারী একটি ট্রাক, পাড়ার গলির মধ্যে একটা প্রাইভেট কারকে সাইড দিতে গিয়ে, কংক্রিটের রাস্তা থেকে পাশের মাটির অংশে নেমে যায়, ফলে চাকার চাপে নরম মাটি অনেকটা ডেবে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পাড়ার বিশিষ্ট হি*ন্দুরা পৌরসভায় ছুটে গিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। পৌরসভা থেকে তদন্ত করতে আসা ইসলাম ধর্মালম্বী এক কর্মকর্তা - উল্টো পাড়ার বিশিষ্ট হি*ন্দুদের বুঝায়, "এতে উনাদের দোষ কোথায়! রাস্তা তৈরি করা হয়েছে যানবাহন চলাচলের জন্য। রাস্তার যদি কোন ক্ষতি হয়, তার জরিমানা দেবে ট্রাক-কোম্পানি..."
আমি তখন পাড়ার বিশিষ্ট হি*ন্দুদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, "আমাদের দ্বারা আপনাদের কী কোন অনিষ্ট হয়েছে? না আমরা কী আপনাদের কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছি?"
তখন এত রবাহুত লোক বলেছিল, "এক হি*ন্দুর ভালো অন্য হি*ন্দু দেখতে পারেনা।"
অনেক হি*ন্দুই আমাকে বলে, "আপনি যে এত লেকচার মারেন, নিজে কী করেছেন?.." তাদের উদ্দেশ্যে আমার এই নিবেদন। পরিশেষে আর একটি কথা শুধু বলবো, 'আর যা-ই হোক, ছাগল দিয়ে হালচাষ করা যায় না।'
কৃত্তিবাস ওঝা ২৩/১/২০২১খ্রিঃ
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................