লেখক অভিজিত প্রকাশক দীপন হত্যা ফৈজদারী অপরাধ, সেই অপরাধেরই বিচার হয়েছে মাত্র। কিন্তু খুনটা যে আইডোলজিতে হয়েছে সেই আর্দশকে প্রতিষ্ঠিত করতেই বইমেলায় পুলিশ চেকপোস্ট বসেছিলো ‘অনুভূতিতে আঘাত’ লাগার মত কোন বই যাতে প্রকাশ হতে না পারে। আলী দস্তির, এম এ খানের মত আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত লেখকদের বই অনুবাদ করে গ্রেফতার হয়েছিলেন ব-দ্বীপ প্রকাশনির প্রকাশক শামসুজ্জোহা মানিক। এরপর অনুবাদ বই প্রকাশ করতে এবং অনুবাদকরা অনুবাদ করতে সাবধান হয়ে যান। এই তো চেয়েছিলো অভিজিতের খুনি মেজর জিয়াউল হকরা তাই না? কাজেই ফৈজদারী অপরাধের বিচার হলেও তাদের আদর্শ ঠিকই বাস্তবায়ন ঘটেছে।
বাংলাদেশের কোন প্রকাশক এখন আর অভিজিত, অনন্ত বিজয়ের মত লেখকদের বিষয়বস্তু নিয়ে বই প্রকাশ করতে রাজি নন। বোদেলা প্রকাশনী ‘নবী মুহাম্মদের ২৩ বছরের’ মত পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদিত বই প্রকাশ করে বাংলা একাডেমির কাছ থেকে সে সাজা পেয়েছে তারা কি আর সেরকম বই প্রকাশ বাকী জীবনে করতে রাজি হবে? এটাই তো চেয়েছিলো আইএস ওরফে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। সেটাই বাস্তাবয়ন হয়েছে।
আপনি বলেন তো আইসিটি আইনে একজনও আলেম ওলামাকে কেউ গ্রেফতার করেছে? ইউটিউবে হাজার হাজার ওয়াজগুলোতে যেভাবে অমুসলিম, নারী, নাস্তিকদের উপর হামলা খুনের উশকানির উপাদান আছে সেগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করার মত দেশে একজনকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। নাস্তিক বা কথিত ইসলাম অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে কেউ আদালতে গেলে তার হয়ে কোন উকিল পাওয়া যায় না। মৌলবাদের বিরুদ্ধে দেশ এখন একটি শব্দ লিখতেও মানুষ ভয় পায়। হেফাজত ইসলামের প্রায় সব দাবীই মেনে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের কোন সিনেমা পরিচালকের এখন সাহস হবে টুপি দাড়িওয়ালা একজন রাজাকারকে ধর্ষক হিসেবে দেখানোর? সেন্সর পাবে সেই সিনেমা? যদি পুলিশকে ধর্ষণ মামলা নিতে না দেখানোর অভিযোগে একটি সিনেমার সেন্সর বাতিল ও পরিচালক গ্রেফতার হতে পারে তাহলে রাজাকারের সুন্নতী লেবাস আঁকলে পরিণতি কি হবে সেটা নাটক সিনেমা পাড়ার লোকজন ভালো করেই জানে।
অভিজিতের খুনিদের আদালতে রায় শুনে হাসতে হাসতে প্রিজন ভ্যানে উঠার ছবি অনেকেই দেখেছেন। তাদের সেই নির্ভিক হাসি, মৃত্যু ভয়হীন এই দৃঢ়চেতা মুখোচ্ছবি কেবল সম্ভব শক্তিশালীভাবে কোন আর্দশকে বিশ্বাস করলে। সেই আদর্শের সৈনিক তৈরি হওয়া কারখানাগুলোকে পৃষ্টপোষকতা করে যে শক্তি বৃদ্ধি করা হচ্ছে তাতে বাকী মামলাগুলোতে অন্যান্য জঙ্গিদের মৃত্যু হলেও কোন কিছু আসবে যাবে না। ফেইসবুকে অভিজিতের খুনিদের ছবি দিয়ে তাদের পক্ষ সমর্থন করে নাস্তিক হত্যাকারীদের বীর মহান মুসলিম মুজাহিদ বলে যারা লিখছে তারা জানে এসব নিয়ে লিখলে কেউ তাদের হিন্দি চুলও ছিড়তে সাহস করবে না। কিন্তু অভিজিতের বাবাকে পুত্রের মৃত্যুতে ফোন করেও সেটা গোপন রাখার চেষ্টা হয়েছিলো!
যে দেশের মানুষ নাস্তিক হত্যা হলে হাসে, অমুসলিমদের উপর হামলা হলে জাস্টিফাই শুরু করে, তাদের মাইন্ড সেটআপ পরিবর্তন কি ৫৬০টি মডেল মসজিদ করবে? পাড়ায় পাড়ায় ওয়াজ মাহফিলের বিপরীতে রিতা দেওয়ান, শরীয়ত বয়াতী, সামসুজ্জামান চিশতি বাউলদের ইসলাম অবমাননার অভিযোগে গ্রেফতার করে তাদের কন্ঠ থামানোর প্রতিযোগীতা তো ঘরে ঘরে জঙ্গির জন্ম দিবে। দেশের মানুষের প্রধান উত্সব পহেলা বৈশাখকে হুমকি দিয়ে, হিন্দুদের উত্সব নাম দিয়ে, মুসলমানদের ঈমান থাকবে না বলে’ কি করে জাতীয় টেলিভিশনগুলোতে ইসলামী টকশো সম্ভব? এদেশের মানুষ রাষ্ট্রধর্ম চায়নি বা দাবী করেনি। তবু তাদের মুখের কাছে এরশাদ তুলে ধরেছিলো। এখন কি কেউ সেটা বাতিল করতে সাহস করবে? তাহলে কেন না চাইতেই ইসলামীকরণের এই হুজুগ? খবরে প্রকাশ হযরত মুহাম্মদ এর জন্ম ও ওফাত দিবস ১২ রবিউল আওয়ালকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে এখন থেকে দিনটিতে বাংলাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি ভবন ও অফিস প্রাঙ্গণে জাতীয় পাতাক উত্তোলন করা হবে। সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর দিবসটিতে বাংলাদেশের সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন ও অফিস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। (সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন)।
আপতত নিরহ মনে হলেও এই আচরণে এই দেশে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি রাষ্ট্রের প্রতিফলন প্রকাশিত হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রধর্মের দেশে যদিও এটা বৈসাদৃশ্য কোন ঘটনা নয়। কিন্তু নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবী করে এরকম না চাইতেই জলের মত কেন মিছিমিছি জনগণকে ইসলামের সুরসুরি দেয়া?
#সুষুপ্ত_পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................