অভিজিৎ রায়ের জন্ম ১৯৭১ সালে
অভিজিৎ রায় আর বাংলাদেশ সমবয়সী
অভিজিৎ রায়ের জন্মের সময় পিতা অজয় রায় স্ত্রীর পাশে ছিলেন না। তিনি তখন মুক্তিযুদ্ধে।
লড়াই করছেন। সন্তানের জন্মের সময়টা তিনি স্ত্রীর পাশে থাকতে পারলেন না। দেশের জন্মটা ওনার কাছে বড় বিষয় ছিল। তিনি চাইছিলেন তার সন্তানের জন্ম কোন অধীন কলোনিতে হবে না, হবে একটা স্বাধীন দেশে। পিতা অজয় রায়ের সাধ মিটেছিল। অভিজিৎ রায়ের জন্মসনেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।
অভিজিৎ রায় আর বাংলাদেশ ছিলেন সহোদর। অভিজিৎ রায়ের বয়স যখন ৪৪ বছর বাংলাদেশের বয়সও তখন ৪৪ বছর।
জীবনের ৪৪ বছরের মাথায় কি নির্মম যন্ত্রণা দিয়ে অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছিল তা আজ ৬ বছর পরেও কল্পনা করতে গেলে গা কেঁপে ওঠে। অথচ বড় সাধের বড় সন্তানের মৃত্যুর খবর পেয়ে প্রফেসর অজয় রায় সেই বার্তাবাহকে বললেন 'যা হয়েছে সত্যি সত্যি আমাকে বল, এতো ভেঙে পড়লে চলবে নাকি?'
অভিজিৎ রায়ের মৃত্যুর দুদিন বাদে আয়োজিত স্মরণ সভায় পিতা অজয় রায় বললেন, 'অভিজিৎ একটা আদর্শের জন্য জীবন দিয়েছে। আদর্শের জন্য সবাই জীবন দিতে পারে না। আমার ছেলে আমাকেও ছাড়িয়ে গেছে।'
নীরবে-নিভৃতে কাউকে একটুও কষ্ট না দিয়ে অধ্যাপক অজয় রায় পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন দু'বছর আগে। দান করে গেলেন নিজের দেহ। প্রথমে ছেলে, এরপর মা, এরপর পিতা; একই পরিবারের তিনজন মরণোত্তর দেহদানের ঘটনা বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ঘটালেন এই পরিবার।
অজয় রায় জীবনের পুরোটা দেশকে দিয়ে গেলেন। মৃত্যুর পর ধুলো হয়ে যাওয়া পর্যন্ত সবটা দেশকে দিলেন। সন্তানকে দিলেন। স্ত্রীকে দিলেন। অজয় রায়ের কথা মনে পড়লে বারবার আমার কবিগুরুর আমার সোনার বাংলা গীতিকবিতার একটা লাইন মনে পড়ে-
'তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি...'
শোষণ, শাসন, কণ্ঠরোধ, গুম-খুন, লুটতরাজের পুণ্যভূমি আজকের বাংলাদেশ নিয়ে আমি আর স্বপ্ন দেখি না, স্বপ্ন দেখতে ইচ্ছে করে না। আবার মনে পড়ে যে এই দেশটা অজয় রায়ের মত মানুষদের পবিত্র আমানত। এই দেশটারে টিকিয়ে রাখতে হবে। দেশটারে লাইনে আনার জন্য কাজ করতে হবে। অভিজিৎ রায় আর অজয় রায়দের হারতে দেয়া যাবে না। চলমান অসম লড়াইয়ে আমরা হারি আর জিতি, এই লড়াই আমাদের চালিয়ে যেতেই হবে।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................