মাত্র ১৮ জন সৈনিক নিয়ে বখতিয়ার, লক্ষণ সেনে কে পরাজিত করেছিলেন।এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

মাত্র ১৮ জন সৈনিক নিয়ে বখতিয়ার, লক্ষণ সেনে কে পরাজিত করেছিলেন।এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?

প্রশ্নটা একটা ইতিহাসের গ্রউপে করেছিলাম। অনেকেই উত্তর দিয়েছেন তার মধ্যে থেকে দু'জনের কমেন্ট এখানে দিলাম।আপনার পড়ে বিচার করে নিন।


রাইবাতক সেনগুপ্তের কমেন্ট... 
(১),  নদীয়া সেন রাজধানী ছিল না, এমনকি কোন প্রশাসনিক কেন্দ্রও ছিল না। 
2) বৃদ্ধ লক্ষ্মণ সেখানে বিশ্রাম করছিলেন, প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সৈন্যদল ছিল প্রায় অনুপস্থিত। 
3) সেন রাজসভার অন্তর্ঘাতকারীদের কাছ থেকে সংবাদ পেয়ে হানাদার খিলজী পরিকল্পনা করে বৃদ্ধ রাজাকে অতর্কিতে হত্যা করার।
4) সেই সময় যেটা যুক্তিসঙ্গত ছিল, লক্ষ্মণ তাই করেন, তিনি নিকটবর্তী প্রশাসনিক কেন্দ্র যশোরের শঙ্খহট্টে দ্রুত অপসরণ করেন। এটা যুদ্ধে বহুলব্যবহৃত পন্থা। একে পলায়ন বলা নিতান্তই মূর্খামি।
5) বক্তিয়ার প্রথমে সপ্তদশ অশ্বারোহী নিয়ে প্রবেশ করলেও তার পশ্চাতে পূর্ণ সৈন্যদল ছিল। 
6) জয়দেব শুধু গীতগোবিন্দ লেখেননি, তিনি একটি রণকাব্যও লিখেছিলেন, যা বর্তমানে পাওয়া না গেলেও তার প্রক্ষিপ্ত পংক্তিগুলি অন্য সংকলনে পাওয়া যায়। সেখানে জানা যায়, লক্ষ্মণ পূর্ণ বাহিনী নিয়ে ফিরে এসে বক্তিয়ারকে পরাজিত করেন, বক্তিয়ার পশ্চাদাপসরণে বাধ্য হন।
7) এরপরেও বক্তিয়ার আরো কয়েকবার হামলা চালায়, কিন্তু আড়াইখানা জেলার বেশী জয় করতে পারেনি। এরপর তিব্বত অভিযান করতে গিয়ে তার রহস্যমৃত্যু হয়। 
8) মিনহাজের গ্রন্থ ছাড়া এই হানাদার বক্তিয়ারের 'বীরত্ব'-র কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না, তাও মিনহাজের সূত্র হল খিলজির প্রথম হানার ষাট বছর পর শোনা কাহিনী, যা বক্তিয়ারের বাহিনীর এক বৃদ্ধ সৈনিক তাকে শুনিয়েছিল। 
9) সমগ্র উত্তরভারত তুর্কো-পাঠান নিয়ন্ত্রণে চলে আসায় তাদের বাংলা দখল ছিল একার্থে সময়ের অপেক্ষা, তবুও লক্ষ্মণের পুত্রদ্বয় কেশব ও বিশ্বরূপ দৃঢ়হস্তে বহিরাক্রমণ প্রতিরোধ করে রাজত্ব করে গর্গযবনপ্রলয়কালরুদ্র উপাধি ধারণ করেন। 

তাই, বঙ্কিমের ভাষায়, "সপ্তদশ অশ্বারোহী লইয়া বখ্তিয়ার খিলিজি বাঙ্গালা জয় করিয়াছিল, এ কথা যে বাঙ্গালীতে বিশ্বাস করে, সে কুলাঙ্গার"।

দেবাঞ্জন মুখার্জি কমেন্ট... 
(২). বখতিয়ার খলজি সেই অশিক্ষিত দস্যু টা না যে নালন্দা পুড়িয়েছিলো ? যাই হোক ইতিহাসবিদ ভিনসেন্ট স্মিথ মত দেন, এ সময়কালে লক্ষণ সেন মারা গিয়েছিলেন। তাহলে কি করে বখতিয়ার খিলজির ভয়ে লক্ষণ সেন খিড়কি দিয়ে পলায়ন করেছিলেন? মুসলিম ঐতিহাসিক মিনহাজ-ই-সিরাজ- তার ইতিহাস বইতে লক্ষণ সেনের কাপুরুষের মতো পলায়নের কাহিনি লিপিবদ্ধ করেন বখতিয়ারের নদীয়া জয়ের ৪৩ বছর পর নিজামউদ্দীন ও সামসুদ্দীন নামক দুই ভ্রাতৃদ্বয়ের মুখে শুনে। এই একই বইতে তিনি নিজেই লিখেছেন তখন পর্যন্ত লক্ষণ সেনের বংশধররা পূর্ববঙ্গ রাজত্ব করছিল। ‘তবকাৎ-ই-নাসিরী গ্রন্থ মিনহাজ শেষ করেন ১২৬০ সালে। ১১৭০ থেকে ১২০০ সালের মধ্যে লক্ষণ সেনের তিন পুত্র মাধব সেন,বিশ্বরূপ সেন ও কেশব সেনের পূর্ববঙ্গ শাসনের তাম্রলিপি নিদর্শন পাওয়া গেছে। তাছাড়া মিনহাজ নিজেই ১২৬০ পর্যন্ত বঙ্গে সেন রাজাদের শাসন চলার কথা স্বীকার করছেন। বুঝাই যাচ্ছে বখতিয়ার খিলজি সুবিশাল বঙ্গের নদীয়া ও নবদ্বীপের খানিকটা দখল করেছিলেন স্থানীয় সেন রাজাদের অনুগত কোনো সামন্তকে পরাজিত করে। এই নদীয়া জয়ের কাহিনিও যে অতিরঞ্জিত ও কাল্পনিক সেটা বখতিয়ারের ১৮জন সৈন্য নিয়ে বঙ্গ বিজয়ের কথা শুনলেই বুঝা যায়। এই কাহিনি বিশ্বাস করতে হলে প্রচুর কল্পনা শক্তির অধিকারী হতে হয়। লক্ষণ সেনের বিরাট সৈন্যবাহিনীর কথা জেনেও বখতিয়ার কি করে মাত্র ১৮জন সৈন্য নিয়ে নদীয়া-নবদ্বীপ দখল করতে সাহস করবেন? এ কারণেই পরবর্তীকালের সমস্ত ঐতিহাসিকরাই লক্ষণ সেনকে ‘বঙ্গ বিজয়ী’ বলেননি। আসল সত্য হচ্ছে ত্রয়োদশ শতাব্দীর পূর্বে বাংলায় মুসলিম শাসনের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। ১২৮৯ সালেও মধু সেন নামের একজন শাসকের নাম পাওয়া যায় যিনি পূর্ববঙ্গ শাসন করছিলেন। কাজেই বেশির ভাগ ঐতিহাসিকের মতে বখতিয়ার খিলজির বঙ্গের রাজধানী নদীয়া বিজয়ের কাহিনি অলীক, কল্পনাশ্রয়ী।

লেখক দেবাঞ্জন মুখার্জি। 
 https://shuddhashar.com/bangla-bangali-musolman/

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted