বাংলাদেশের আদৌ সর্বনাশের কিছু বাকী এখানো আছে?

একবার একজন ‘হুমায়ূন আহমেদ একটা লেখক হইল’ বললে আমার সামনে হুমায়ূন ভক্ত সেই লোকটিকে অশিক্ষিত, সাহিত্য কি বুঝেই না, বেয়াদপ, আজেবাজে নোংরা বইয়ের পাঠক ইত্যাদি বলে রেগেমেগে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলো।
‘হুমায়ূন কাল্ট’ একটা ছোট্ট উদাহরণ। ফুটবল টিম নিয়েও এরকম কাল্ট ফ্যান দেখা যায়। এসবের চাইতে কয়েক হাজার গুণ বেশি সেন্টিমেন্ট ভক্ত রয়েছে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়ার। গোটা উপমহাদেশের রাজনৈতিক নেতা ও পরিবারগুলির পিছনে যে বিশাল ভেড়ার পাল সেটা কাল্ট সংস্কৃতির কারণে। এখানে রাজনৈতিক নেতারা রীতিমত ঈশ্বরের অবতার! তাদের জীবনে কোন ভুল নেই। তারা কখনো অন্যায় করেননি। অথচ রাজনীতিতে চিরকালের শঠতা, কুটকৌশল, প্রতিপক্ষকে ফাঁদে ফেলার জন্য নোংরা পলিট্রিক্স করতে হয় নেতাদের।

আল জাজিরা ডকুমেন্টে এমন কিছুই বলেনি যেটা এদেশে ঘটে না। ২০০১ সালেও সরকার চালিয়েছিলো বিএনপি জামাতের মাফিয়ারা। দশ ট্রাক অস্ত্র এসেছিলো বাংলাদেশের সরকারের যোগসাজশে। বাংলাদেশের বিশেষ বাহিনীর হাতেই দেশের স্থপতি পরিবার সমেত নিহত হয়েছিলেন। আর বর্তমান বাংলাদেশ যে উত্তর কোরিয়ার শাসন চলছে তাতে কি ভক্তরা তাদের ভক্তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে? নাস্তিক ব্লগার হত্যাগুলোর বিচার হয় না কাদের খুশি রাখতে? সাগর রুনি হত্যাকারীদের বিচার করা যায় না কোন সত্য ঢাকতে? ত্বকী হত্যাকারী পরিবার কেন আইন আদালতের উর্ধ্বে? তামিল তেলেগু সিনেমার চাইতে এইদেশের রাজনীতি কম কিসে?

আজকে আল জাজিরার ডকুমেন্টটা প্রকাশের পর থেকে বিএনপি জামাতের মাফিয়া রাজনীতির ভেড়ারা সরকার পতনের স্বপ্ন দেখছে! অথচ সবাই ভেড়ার পালই জানে এই দেশে আইন সবার জন্য সমান নয়। এখানে চোর ডাকাত গুন্ডারা কোটি টাকার দিয়ে পার্টি থেকে মনোনয়ন ফর্ম কিনে। এখানে বড় বড় ক্রিমিনালদের রাজনৈতিক পরিচয়ে ’রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমা’ পাওয়া নতুন কিছু নয়। এখানে যিনি একদিনে শেয়ার বাজারের সমস্ত টাকা লোপাট করেছে সে থাকে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে। নরেন্দ মোদিকে আগামী ভোটে জনগণের ইচ্ছা অনিচ্ছার বলি হতে হবে। ডোনাল্ড ট্রামকে আমেরিকানরা বিদায় করে দিয়েছে। অথচ এই দেশে সেই ব্যবস্থাই বন্ধ হয়ে গেছে চিরতরে! এই অবস্থায় আওয়ামী সরকার পল্টি খেলে কি হবে?  নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ইসলামিক ব্রাদারহুড টাইপ একটা সরকার আসবে পাবলিক ভোটেই। হেফাজত জামাত চরমোনাই ঘরনার ইসলামিকরা তো রইলই। আল জাজিরা টেলিভিশন আওয়ামী সরকার ফেলে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছে কথাটা আমি মেনে নিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ কি সেরকমভাবেই চলে না? তবু সারাদিন ধরে চিল্লাচ্ছেন, আল জাজিরা বাংলাদেশের সর্বনাশ করতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এখানে উশকানি দিয়ে সেনা ক্যু করাতে চাচ্ছে…।

তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, বাংলাদেশের আদৌ সর্বনাশের কিছু বাকী এখানো আছে? এদেশে কেউ সেনাবাহিনীকে ক্ষমতার ভাগাভাগি না দিয়ে ক্ষমতায় থাকতে পেরেছে? তাহলে আপনারা ক্ষুব্ধ কেন?

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted