সংস্কৃত ভাষা নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা। সংস্কৃত ভাষা ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা গোষ্ঠীর এক ভাষা। ভাষাটি কয়েকটা স্তরের মধ্যে দিয়ে যায়। প্রাচীন স্তরটি হলো বৈদিক - বেদ রচনা বা লেখার ভাষা হলো বৈদিক ভাষা।
বেদের রচনা কবে শুরু হয় এই নিয়ে পন্ডিত দের মধ্যে মত বিরোধ রয়েছে। এর মধ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য- উভয় দলের পন্ডিত রয়েছে। তাদের কারো মতে,বেদ রচনা শুরু হয় 4000 খ্রীষ্ট পূর্বে,কারো মতে, 10000 খ্রীষ্ট পূর্বে,কারো মতে,20000 খ্রীষ্ট পূর্বে। মোট কথা হলো ,এই গবেষণা পদ্ধতি বহু বছর ধরে ভারতীয় উপ মহাদেশে চলে আসছিল, বংশ পরম্পরায় বা গুরু শিষ্য পরম্পরায়। তবে,যে সময় টা নিয়ে অধিকাংশ পন্ডিত এক মত, সেটা হলো, বেদের রচনা কাল 4500 খ্রীষ্ট পূর্ব থেকে শুরু হয়। সেই মত,বেদের সময় বলতে গিয়ে,4500 খ্রীষ্ট পূর্ব থেকে 800 খ্রীষ্ট পূর্ব সময় টিকে নির্দিষ্ট করেছেন। এই সময় টির মধ্যে ই বেদ রচনা ও লেখার কাজটি সম্পূর্ণ হয়। সেই বেদ রচনা ও লেখার ভাষাটি হলো বৈদিক ভাষা। কিন্তু বৈদিক ভাষার আদি রূপ বা বেদ রচনা কালের বৈদিক ভাষার রূপ কেমন ছিল সে আমরা জানতে পারি না। শুধু বেদের লিখিত ভাষার রূপটাই পাই। এই সময় এর ব্যবধান হলো 2500 বছর। সুতরাং সহজেই অনুমেয় যে, এই 2500 বছরের মধ্যে একটি ভাষা কতো রকমের রূপ ধারণ করতে পারে!! ভাষা নদীর মত স্রোতস্বিনী,সদা পরিবর্তনশীল।
পরবর্তীতে পাণিনি ভাষা টিকে ব্যাকরণের নিয়মে বাঁধেন। তখন থেকে ভাষা টি একটি নতুন রূপ পায়। যেটিকে সংস্কৃত ভাষা বলে। এটি সাহিত্যের ভাষা। এটি ভাষাটির আরেক টি স্তর। এই ভাষাটির সাথে পূর্বের ভাষাটির বা ভাষা রূপ টির কিছু কিছু পার্থক্য লক্ষ্যনীয়। এই নতুন সৃষ্ট রূপ টিকে আমরা মোটামুটি 6ষ্ঠ খ্রীষ্ট পূর্বে ফেলতে পারি। অবশ্য অনেকের মতে, পাণিনির জন্ম অষ্টম খ্রীষ্ট পূর্বে।
সংস্কৃত ভাষা টি সাধারণত কথ্য ভাষা নয়। লেখার ভাষা। যদিও অনেকে সংস্কৃতে কথা বলে থাকেন। সংস্কৃত ভাষা টির চেয়ে কথ্য রূপ পাওয়া যায়, তাকে পালি,প্রাকৃত বা অপভ্রংশ বলে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, দেব্যা (সংস্কৃত),দেবিয়া(পালি),দেহিআ(প্রাকৃত), দেহীয়(অপভ্রংশ)।
প্রসঙ্গত,অনেকের মতে তামিল ভাষা বেশি প্রাচীন। কিন্তু, যত নিদর্শন পাওয়া যায় তাতে জানা যায় সংস্কৃত ভাষা তুলনামূলক প্রাচীন। তামিল সাহিত্যের থেকে সংস্কৃত ভাষার সাহিত্য কম করেও 400 বছর প্রাচীন। তামিল সবচেয়ে প্রাচীন শিলালিপি টির থেকে সংস্কৃত ভাষার শিলালিপি টি 200 বছর প্রাচীন।
সংস্কৃত ভাষাতে কোনো ভাষারই কোনো নির্দিষ্ট নাম ছিল না। পরবর্তী কালে পণ্ডিতরা এই ভাষার বিভিন্ন স্তর গুলির নির্দিষ্ট নাম করণ করেছেন। যদিও সংস্কৃত ভাষাটিকে অনেকে ছান্দস ভাষা বলেন। ভাষাটির কোনো নির্দিষ্ট লিপি ছিল না। অন্যান্য ভাষার মত সংস্কৃত ভাষা টিও প্রথমে ব্রাহ্মী লিপি ও পরে নাগরী হরফে লেখা হতো। পরবর্তী কালে দেব নাগরী লিপির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হতো বলে,সংস্কৃত ভাষা টি দেব নাগরী হরফে ই লেখা হতো। পরবর্তী কালে বেদ,বেদান্ত, সাহিত্য,ব্যাকরণ ইত্যাদি দেব নাগরী হরফে লিপিবদ্ধ করা হয়।
খুব স্বল্প পরিসরে লিখলাম ভাষাটি সম্পর্কে। আশা করি,আপনাদের ভালো লাগবে। 🙏
তথ্য - সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাস।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................