নিজ ধর্মের মধ্যেই ঘৃণাকে হিন্দুরা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলো।যার প্রভাব এখনো এই আধুনিক সমাজেও প্রবল ভাবে বিদ্যমান।

 

ভারতবর্ষে মুসলমানদের জয় করার অনেক কারণ ছিলো, কিন্তু বিশ্ব জুড়ে ইসলাম বিস্তারের মূল কারণ ছিলো হিন্দু দমন।ভারত আক্রমণের আগে মুসলমান নেতারা কাবুল, পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন।ভারতবর্ষে অন্তগর্ত বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যবর্তী বিদ্রোহ গুলো মুসলমানদের পরাস্ত করতে সাহায্য করেছিলো।


মুসলমান আগ্রাসনের সময় ৪০০ মিলিয়ন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছিলো এবং আক্রমণের আগে ৬০০ মিলিয়ন হত্যা করা হবে বলে ধরা হয়েছিলো, পরে হিন্দু হত্যার সংখ্যা ২০০ মিলিয়ন কমে গিয়েছিলো।হিন্দুদের জোরপূর্বক ইসলামে রূপান্তরিত করা হয়েছিলো এবং তাদেরকে মুসলিম সংস্কৃতির আওতায় আনা হয়েছিলো।কেউ যদি এই নিষ্ঠুরতার বিরোধিতা করতো তাহলে 'পবিত্র যুদ্ধের' নামে ক্ষত-বিক্ষত হতে যেতো।

হিন্দুরা সুদূর অতীত থেকে ঐতিহাসিক ভাবে এবং বর্তমানেও প্রতিনিয়ত শুধু মাত্র ধর্ম বিশ্বাসের কারণে পুরো ধর্মীয় সম্প্রদায় নিশ্চিহ্নকরণ এবং নিয়মতান্ত্রিক ভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার।হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায় নিশ্চিহ্নকরণের শিকার হয়েছে কয়েকটি পদ্ধতিতে সংক্ষেপে বললে বলা যায়- বাধ্যতামূলক ধর্মান্তরকরণ, হিন্দু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে গণহত্যা, হিন্দুদের মন্দির, মন্দিরের মূর্তি ধ্বংস করে মসজিদে রূপান্তর এবং মন্দিরের বিগ্রহ, স্বর্ণালংকার, অর্থ-সম্পত্তি-জমি দখল করে এবং শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে।

প্রাচীন আর্যদের বৈদিক সাহিত্য এবং সংস্কৃতিকে ধারণ করে বেড়ে ওঠা ধর্মটির ঐতিহ্য যেমন সুপ্রাচীন তেমনি এই ধর্মের অনুসারীরা আক্রমণের শিকারও হয়েছিল অতীত কাল থেকেই বিশেষত ইসলামের আগমনের সাথে-সাথে। ৮শ শতক থেকেই আফগানিস্তানের গিরিপথ পার হয়ে দলে-দলে মুসলিম সেনা, ধর্ম প্রচারক, সুফি আসতে থাকে ভারতীয় উপমহাদেশের এই বিস্তৃত অঞ্চলে।এই অঞ্চলের প্রধান সুবিধা এবং সমস্যা হলো উর্বর জমি, নির্বিঘ্নে বসবাসের উপযোগী ভূপ্রকৃতি, আরামদায়ক জলবায়ু, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি।এতো সব সুবিধার কারণেই এই লোকেরা কিছুটা অলস, যুদ্ধবিদ্যায় অনভিজ্ঞ এবং তাদের জীবন যাত্রা সহজ সরল।

ইসলামের আগমনের আগে এই বিশাল অঞ্চলের সামাজিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশ কেমন ছিলো তার দিকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিপাত অত্যন্ত আবশ্যক।হিন্দু ধর্মতখন থেকে প্রচণ্ড ব্রাহ্মণ্যবাদী আর বর্ণের অন্ধকারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত।নিজ ধর্মের মধ্যেই ঘৃণাকে হিন্দুরা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলো।যার প্রভাব এখনো এই আধুনিক সমাজেও প্রবল ভাবে বিদ্যমান।

উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের এতো অত্যাচার, নিপীড়ন করতো যে, যখন কোন মুসলিম বাহিনী আক্রমণ করে তখন ক্ষেত্রবিশেষে আক্রমণকারীকে স্বাগত জানায় শুধু অত্যাচার থেকে মুক্তির আশায়।ছোট-ছোট সামন্ত রাজন্যবর্গ আন্তঃ-কলহে এতো ব্যস্ত ছিলো যে বহির্শক্তির আক্রমণ থেকে রক্ষার নুন্যতম প্রস্তুতিও তাদের ছিলো না।কিন্তু সাধারণ হিন্দুদের কপালে সুখ নেই, ব্রাহ্মণ্যবাদী রাজাদের অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে ধর্মান্তরিত কিংবা মুসলিম শাসনের অধীনে আসলেও সামাজিক জীবনে তাদের অর্থনৈতিক ভাবে কোন পরিবর্তন আসেনি।

ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের আবির্ভাব, রাজ্য বিস্তার নিয়ে লিখিত সব থেকে নির্ভর যোগ্য তথ্য সূত্র পার্সিয়ান ভাষায় লিখিত চাচনামা/ফতেহ নামা সিন্ধ এবং তারিখ আল-হিন্দ ওয়া আস-সিন্ধ(সিন্ধু বিজয়ের কাহিনী) গ্রন্থ থেকে জানায় যায় খলিফা উমাইয়ার নিয়োজিত মেসোপটেমিয়ার(বর্তমান ইরাকের) গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ভাতিজা/জামাতা সেনাপতি মুহম্মদ বিন কাশিম ৬০০০ সিরিয়ান সৈন্য নিয়ে ৭১২ সালে সিন্ধু আক্রমণ করে।সিন্ধু যে একেবারে বিনা বাধায় মুসলিমরা জেতে নিয়েছেিলো তা কিন্তু নয়, ইতিপূর্বে তিন বার আক্রমণ হয়েছিলো।কিন্তু ১৭ বছরের তরুণ মুহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধুর রাজা দাহিরকে পরাজিত করে প্রতিবেশী বিভিন্ন শহর যেমন দেবল(করাচি), নিরুন, রেওয়ার, ব্রাহ্মণাবাদ(মনসুরাবাদ), আলোর, মুলতান দখলে নিয়ে প্রথম বারের মতো ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের চাঁদ তারা পতাকা তুলে ধরতে সক্ষম হয় এবং তারা সমগ্র অঞ্চলে তাদের প্রাধান্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়।

যুদ্ধে পরাজিত সব সৈন্যদেরকে এক বারে হত্যা করা হয় এবং নিহত সৈনিকদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদেরকে দাস হিসেবে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে ইরাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়।সাধারণত রাজ্য জয়ের সপ্তাহ থেকে মাস খানেকের মধ্যে মুহম্মদ বিন কাশিম শহরের গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক, ব্যবসায়ীদের ডেকে ট্যাক্সের হার নির্ধারণ এবং ব্যবসা বাণিজ্য পুনরায় স্বাভাবিক করতে চুক্তির ব্যবস্থা করতো।চুক্তিতে নগর বাসীর জন্য কয়েকটি সুযোগ আছে যেমন সবাইকে শান্তিপূর্ণ ভাবে ইসলামের কাছে আত্মসমর্পণের জন্য আদেশ দেয়া হয়, অথবা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করো, অথবা যুদ্ধে জিতলে বা মরলে তো ভালো কথা কিন্তু হারলে দাস হয়ে যাও।হাজ্জাজ বিন ইউসুফ জামাতা কাশিমকে একটা চিঠি লিখে নির্দেশ দেন যারা অস্ত্র বহন করবে(আহি-আল-হার্ব) তাদের সবাইকে হত্যা করো, অস্ত্রধারীর স্ত্রী সন্তানদের বন্দী করে দাস বানাও, যারা যুদ্ধ করেনি সাধারণ নাগরিক তাদেরকে ধর্ম রক্ষার কর(ধিম্মাহ) প্রদানের চুক্তিতে ছেড়ে দাও। 
কিন্তু রাজ্য জয়ের কাশিমের বাহিনী স্থানীয় হিন্দু, বৌদ্ধদেরকে দুটো সুযোগ দিলো, হয় প্রাণ বাঁচাতে ইসলাম গ্রহণ করো না হয় তরবারির নিচে মাথা পেতে দাও।

কাশিম যেসব অঞ্চলে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়, মুসলিম-বাহিনীর সৈন্য-ক্ষয়ের সম্ভাবনা ছিলো সেখানে অবরোধ আরোপ করে আস্তে-আস্তে ক্ষমতা নগর দখলের চূড়ান্ত মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতো।

অবরোধ কৌশলের কারণেই মুসলিম-বাহিনীর তেমন সৈন্যক্ষয় ছাড়াই আরমাবিল, নিরুন, আলোর দখল করতে সক্ষম হয়।চাচ নামা গ্রন্থে বলা হয়েছে মুহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধু অববাহিকার প্রায় ৬০% নগর দখল করতে পেরেছিলো অবরোধ রণনীতির কারণে।যদিও হাজ্জাজ বিন ইউসুফ জামাতা কাশিম যথেষ্ট নির্দয় না হওয়ার কারণে দূর্বল হৃদয়ের মানুষ বলে তিরষ্কার করে।হাজ্জাজ বিন ইউসুফ দেবল(করাচি) দখলের পর কড়া নির্দেশ দেয় একটা বয়স্ক পুরুষও যেন বেঁচে না থাকে।

সিন্ধু জয়ে মুহম্মদ বিন কাশিমের নিজের কৃতিত্ব থেকেও বেশি কৃতিত্ব স্থানীয় অত্যাচারী রাজা দাহিরের নিপীড়নের শিকার নিম্নবর্ণের হিন্দু এবং বৌদ্ধ প্রজা।স্থানীয় বিদ্রোহী জাট এবং মেধ সৈন্যরা অতিষ্ঠ হয়ে রাজা দাহিরকে পরাজিত করতে কাশিমের সাথে যোগ দেয়।মুহম্মদ বিন কাশিমের সহজেই সিন্ধু জয়ের আরও কিছু কারণ আছে যেমন-

১. উন্নত সমরাস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম(কাশিম বাহিনীর কাছে দুর্গের শক্ত দরজা ভাঙার যন্ত্র এবং আধুনিক তীর ধনুক ছিলো)

২. সৈন্যদের মাঝে কঠোর নিয়ম শৃঙ্খলা এবং সময়োপযোগী নেতৃত্ব

৩. মুসলিম সৈন্যদের উজ্জীবিত করেছিলো জিহাদের ধারণা।তাদেরকে বলা হয়েছিলো বেঁচে থাকলে তারা হবে গাজী, ভোগ করতে পারবে অবাধ নারী লুণ্ঠিত ধনরত্ন সামগ্রী।(ঘুচে যাবে তাদের অভাব, কারণ সিরিয়ান সৈন্যদের বেশির ভাগই ছিলো দারিদ্রে কোন মতে দিনাতিপাত করা ভবঘুরে দস্যু।)

৪. সিন্ধু অঞ্চলে আগে থেকেই ইসলামের দিগ্বিজয়ের গুজব বাতাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছিলো।

৫. অধিকাংশ বৌদ্ধ, হিন্দুরা যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানায়, যুদ্ধে নর হত্যার থেকে আত্মসমর্পণ শ্রেয় মনে করে।

৬. প্রজাদের রাজা দাহির এবং তার মন্ত্রী আমলাদের সীমাহীন অত্যাচার, নিপীড়ন।

৭. নিম্নবর্ণের হিন্দু ও বৌদ্ধদের সাথে সামাজিক বৈষম্য।

ইতিহাসবিদ স্যার হেনরি মিলার ইলিয়ট তার “History of India” ইতিহাস বইতে অন্যান্য মুসলিম আক্রমণকারীদের তুলনায় কাশিমকে কম ধ্বংসাত্মক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।যদিও মন্দির ধ্বংস, লুট এবং স্থানীয় হিন্দুদেরকে হত্যা থেমে থাকেনি।সিন্ধুর সব অধিবাসীদেরকে বলপূর্বক ধর্মান্তর করা হয়। 

বোম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত উপেন্দ্র ঠাকুরের “Sindhi Culture” বইতে সেই সময়টাকে অন্ধকার ইতিহাস বলে চিহ্নিত করেন।সিন্ধুতে গণ ধর্মান্তর করার সময়ে মন্দির ভাঙ্গা হয়েছে যেখানে যা পাওয়া গিয়েছে সব এবং ধর্ম ত্যাগ করতে অস্বীকার করায় হিন্দু বৌদ্ধ সবাইকে জবাই করে হত্যা করে।
রাজা দাহিরের ‘গো হত্যা’ নিষিদ্ধের প্রতিশোধ হিসেবে দেবলের(করাচি) ব্রাহ্মণদের জোরপূর্বক খতনা করানো হয়।সিন্ধু বিজয়ের পরে মুহম্মদ বিন কাশিম তার সংক্ষিপ্ত শাসনামলে হানাফি এবং শরিয়া আইন বলবত করে হিন্দু, বৌদ্ধদেরকে জিজিয়া করের বিনিময়ে স্বধর্ম পালনের সুযোগ দেয়।

সিন্ধু আক্রমণের মধ্য দিয়েই ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের যাত্রা শুরু।এরপরই দলে-দলে আক্রমণকারী, পর্যটক, সুফি, ধর্মপ্রচারক আসতে লাগলো এই অঞ্চলে, শুরু করলো স্থায়ী বসবাস।
পাকিস্তানের জনক মুহম্মদ আলি জিন্নাহ পাকিস্তান আন্দোলনের সময় বলে, যেদিন মুসলিমরা প্রথম সিন্ধুর মাটিতে পা রেখেছে সেদিনই ভারতে ইসলামের প্রবেশ পথ রচিত হয়েছে।
#বিন_কাশিম
#BinQasim
#রাজা_দাহির
#RajaDahir
#FirstMuslimAttackInIndia
#TheHistoryOfHinduGenocide 
#WeAreIndian

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted