হে ভারতীয় চীনপন্থীরা! বাংলাদেশে ইসলামের উত্থানে তোমাদের ভূমিকা একসময় ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ইসলাম নিয়ে গণমাধ্যমে আর কোনো বক্তব্য দেবেন না বলে পণ করেছেন। তিনি একজন হুজুরের কাছে গিয়ে ইসলাম শেখা শুরু করেছেন। জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ইসলাম নিয়ে কথা না বলার পণ করাটা যতটা না ধর্মীয় তারচেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক।
প্রথমে কায়দা, তারপরে আমপারা, তারপরে কোরআন এভাবেই জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার কুরআন শিক্ষা পর্ব শুরু করবেন এবং একপর্যায়ে হয়তো রাজনৈতিক কারণে তিনি হুজুর হয়ে যাবেন। বিএনপিতে আমরা জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং শফিক রেহমান এরকম মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে প্রগতিশীল মনে করতাম, কিন্তু এখন আর কোন আলো দেখা যাচ্ছে না। কোন আশা দেখা যাচ্ছে না। জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা ইসলাম নিয়ে যুদ্ধ করেনি। ইসলামের পক্ষেও যুদ্ধ করেনি। বরং ইসলামের পক্ষ নিয়ে লড়াই করতে আসা পাকিস্তানিদের তারা পরাজিত করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে যদি মুসলিমদের দুই পক্ষের মধ্যে লড়াইয়ের কোন ইতিহাস ঘেঁটে দেখা হয় তাহলে খুব সম্ভবত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকেই একমাত্র পাওয়া যাবে যেখানে বিবদমান উভয়পক্ষই মৌলবাদী ছিলনা, বরং এখানে একপক্ষ মৌলবাদের আশ্রয় নিলেও অন্যপক্ষ মোটেই মৌলবাদের আশ্রয় নেয়নি। এছাড়া দুনিয়ার যেখানেই মুসলিমদের সাথে অমুসলিমদের কিংবা মুসলিমদের দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই হয়েছে সেখানেই সমস্ত মুসলিমরা জিহাদকে ধারণ করেছে। যুদ্ধটা জিহাদে রূপ নিয়েছে। শহীদ হওয়ার জন্য সব মুসলিম উদগ্রীব থেকেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী মৌলবাদের আশ্রয় নিলেও বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ কখনোই মৌলবাদী নীতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেনি। তাঁরা কেউই আল্লাহু আকবার বলে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ ধর্মবিশ্বাসী সেখানে থাকতেই পারে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের যুদ্ধটা ইসলামিক জিহাদ হয়ে যায়নি। এজন্যই আর যাই হোক, মুক্তিযোদ্ধাদের বেশিরভাগই প্রগতিশীল ছিলেন। যদিও সেই প্রগতিশীলরাই ক্রমশঃ ইসলামের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন; সৌদি আরবে হজ্ব করেছেন, ইসলামের সুমহান (?) বাণী প্রচার করেছেন। হাল আমলে ইসলামের আদম শিকার পদ্ধতি অনেক উন্নত হয়েছে। ইসলামের প্রচারকেরা কোন অঞ্চলে বা পেশাজীবীদের মধ্যে ঢুকতে চাইলে প্রথমে সেখানকার মানুষ বা সতীর্থদের মধ্যে কাউকে শিকার করে। তারপর ক্রমশ ইসলামের সৌন্দর্য (বিষ) চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে থাকে। ভারতীয় তাবলীগী ইসলামিক গোষ্ঠী পাকিস্তানের ক্রিকেট অঙ্গনে প্রথমে ঢুকেছে ক্রিকেট তারকা সাঈদ আনোয়ারের মাধ্যমে। সাঈদ আনোয়ারের হাত ধরে পাকিস্তানে সব ক্রিকেট তারকাই মৌলবাদী হয়ে গেছে। পাকিস্তানের সঙ্গীত অঙ্গনে ওরা ঢুকেছে জুনায়েদ জামশেদের মাধ্যমে। আর ক্রিকেট ও সংগীতের মত প্রগতিশীল দুটি অঙ্গন যখন ইসলামের ‘শায়াতলে’ ঢুকে গেছে তখন অন্যান্য অঙ্গন ঢুকতে আর বাকি থাকার কথা না। ভারতীয় তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের ডাক্তার এবং ইঞ্জিনিয়ারদের মধ্যে ইসলামের বিষ ঢুকিয়ে দিতে পেরেছে স্বাধীনতার পরপরই। টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার জন্য শেখ মুজিব যখন ভারতের মৌলবাদী তাবলীগ জামাত গোষ্ঠীকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন তখন থেকেই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পতনের সূচনা হয়েছে। বিগত ১০ বছরে ভারতের তাবলীগ জামাত গোষ্ঠী বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে ঢোকার চেষ্টা করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশের ক্রিকেট তারকা মুশফিকুর রহিম থেকে শুরু করে প্রত্যেককেই তারা ইসলামের ‘শায়াতলে’ নিতে পেরেছে। এজন্যই আজ থেকে কুড়ি বছর আগেও ক্রিকেট তারকাদের ‘বোরকাওয়ালী বউ’ দেখা যায়নি, কিন্তু এখন সব ক্রিকেট তারকাদেরই বোরকাওয়ালী কিংবা হিজাবি বউ আমরা দেখতে পাচ্ছি। আজ থেকে কুড়ি বছর আগের ক্রিকেট তারকাদের বেলায় বাঘের লোগো মুছে দিয়ে ছবি আপলোড করা, কোরবানির চাপাতি হাতে নিয়ে ছবি আপলোড করা, আপাদমস্তক হিজাবি বউ নিয়ে ছবি প্রকাশ করা, ফেসবুকের প্রত্যেকটা পোস্টে ‘মাশাল্লাহ সুবহানাল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ’ বলা ইত্যাদি দেখা যেত না কিন্তু এখন এ সবকিছুই ঘটছে। এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের মুসলিমদের ঘৃণার হিটলিস্টে থাকা এক নম্বর দেশ ভারতের তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে। আর বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ এবং প্রফেসরদেরকে শিকার করা হয়েছে ভারতের আরেক জঙ্গি জাকির নায়েকের মাধ্যমে। বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদের শেকড় যতটা গভীরে ভারতে ইসলামী মৌলবাদের শেকড় তারচেয়েও ৫০ গুণ গভীরে।

নাইন ইলেভেনের পরপরই ভারতীয় কংগ্রেস এবং চীনপন্থী দলের সংখ্যালঘু চোষনের ফলশ্রুতি হিসেবে জাকির নায়েকের প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়তে থাকে। জাকির নায়েকের হাত ধরে ভারতের মুসলিম সমাজে তো বটেই, এর পাশাপাশি বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলংকা সহ পুরো এশিয়া জুড়েই এক ধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাসবাদ তৈরি হয়। সবচেয়ে বেশি সর্বনাশ হয় বাংলাদেশের। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী ও সেলিব্রেটি যাদের মধ্যে হুজুরদের প্রতি এক ধরনের নাক সিঁটকানোর ব্যাপার ছিল সে ব্যাপারটা জাকির নায়েকের মাধ্যমে উঠে গেছে। হুজুর এবং অহুজুরের পার্থক্য এখন ঘুচে গেছে। এখন বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক দলের নেতা এবং সরকারি আমলা সবাইই হুজুরদের ছোঁয়ায় হুজুর হয়ে গেছে। জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ইসলামের পথে আনতে হলে উনার মতই একজন একজন মুক্তিযুদ্ধের গবেষক লাগবে। ইসলামের সেনানীরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোস্তফা আনোয়ার খানের মাধ্যমে ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে হুজুরের কাছে নেয়ার চেষ্টা করে সফল হয়েছেন।

সবশেষে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কাছে আমার অনুরোধ রইল - আপনি ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা করার পাশাপাশি আমরা যারা ইসলামের হিংস্রতার শিকার তাদের বক্তব্যও শুনুন। আশা করছি আপনি ইসলাম ও মোহাম্মদ সম্পর্কে জানতে পারবেন। 

হে ভারতীয় চীনপন্থীরা! বাংলাদেশে ইসলামের উত্থানে তোমাদের ভূমিকা একসময় ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted