নবী পত্নী হযরত সাফিয়াকে নিয়ে আমার অনেক প্রশ্ন ছিলো। কারণ তিনি পরিস্থিরি শিকার হয়ে নবীর স্ত্রী হয়েছিলেন।

নবী পত্নী হযরত সাফিয়াকে নিয়ে আমার অনেক প্রশ্ন ছিলো। কারণ তিনি পরিস্থিরি শিকার হয়ে নবীর স্ত্রী হয়েছিলেন এবং তিনি ইহুদী ছিলেন, তার পিতা ও ভাইরা মুসলমান বাহিনীর হাতে মারা গিয়েছিলেন যেদিন, সেদিনই নবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিলো। এসব কারণে সাফিয়াকে জানতে আমি অনেক অনুসন্ধান করি। কিন্তু ইসলামী সোর্স ছাড়া ভিন্ন কোন সোর্স থেকে কোন কিছু পাওয়া প্রায় অসম্ভব। আর ইসলামী সোর্স তো নিজেদের কোন বদনাম করতে যাবে না। এরকম অনুসন্ধান করতে করতে বেশ কিছুদিন আগে একটা হাদিস পাই। যে হাদিসে আছে সাফিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিলো তিনি ইহুদীদের মত শনিবার দিনকে পবিত্র মনে করেন এবং ইহুদীদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন। গুরুতর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাফিয়ার কাছে এর কারণ জিজ্ঞাসা করতে ওমর তলব করেন। বুঝাই যাচ্ছে নবী তখন বেঁচে নেই কারণ নবী জীবিত থাকলে সাফিয়াকে ওমর কৌফিয়ত চাইত না, এবং আবু বকর খলিফা থাকলে তিনিই সেই কৌফিয়ত চাইতেন। মানে হচ্ছে, নবীর মৃত্যুর বেশ পরের ঘটনা এটা। যাই হোক, আগে পুরো হাদিসটা পড়তে হবে। না হলে কিছু বুঝা যাবে না-

“আল ইসাবা, ৪/৩৪৭ এবং সীরাতুল মুস্তফা (সা),৩/৩০৬, আল্লামা ইদরীস কান্ধলবী (রহ): হযরত উমর (রা) বলেন সাফিয়ার এক দাসী হযরত উমর (রা) এর নিকট গিয়ে অভিযোগ করলো যে, হযরত সাফিয়া ইহুদী সংস্কৃতি অনুকরনে শনিবারকে গুরুত্ব দেন এবং ইহুদীদের সাথে ভাল আচরণ করেন । হযরত উমর (রা) হযরত সাফিয়া (রা) থেকে বিষয়টি জানতে চাইলেন। হযরত সাফিয়া (রা) জবাবে জানালেন, যখন আল্লাহ্‌ তা'লা হযরত মুহাম্মদ (সা) কে শনিবারের পরিবর্তে শুক্রবার দান করেছেন তখন থেকে আমি শনিবারকে আর পছন্দ করি না । অন্যদিকে আমার কিছু ইহুদী আত্মীয় আছে । আমি তাদের আত্মীয়তার হক অনুযায়ী ভাল আচরণ করি । তিনি হযরত উমর (রা) কে এই জবাব জানিয়ে পাঠালেন অন্যদিকে সেই বাদীকে জিজ্ঞেস করলেন তোমাকে আমার বিরুদ্ধে এই কাজে কে উস্কে দিয়েছে? সে সত্যি সত্যি জবাব দিল শয়তান আমাকে প্ররোচনা দিয়েছে । হযরত সাফিয়া (রা) বললেন ঠিক আছে । আমি তোমাকে মুক্ত করে দিলাল"।

এখানে যেটা খেয়াল করতে হবে, অভিযোগ উঠেছে দাসীর কাছ থেকে তার মানে সাফিয়ার ইহুদী রীতির প্রতি দুর্বলতা যে ছিলো সেটি বুঝা যায় কারণ একমাত্র দাসীই অন্দরমহলে যেতে পারত। ওমরের পক্ষে তো আর সাফিয়ার জীবনযাপন দেখা সম্ভব নয়। আরেকটি দিক হচ্ছে, ‘ইহুদীদের সঙ্গে ভালো আচরণ’ এটি যে একটি অপরাধ সেটিও জানতে পারলাম। সাফিয়া এই অভিযোগের উত্তরে বলেছেন, তার ইহুদী আত্মীয়দের সঙ্গেই কেবল আত্মীয়তার সূত্রে ভালো আচরণ করেছেন। মানে বলতে চাইছেন, সাধারণ অনাত্মীয় ইহুদীদের সঙ্গে তিনি ভালো আচরণ করেননি...। ইসলাম যে কি পরিমাণ ভ্রাতৃত্ববোধে বিশ্বাস করে এটি তার একটি নমুনা হতে পারে। সাফিয়া সম্পর্কেও আমি একটি ধারনা পেলাম যেমনটা আমি আশংকা করেছিলাম। সাফিয়ার সঙ্গে যেদিন নবী বাসরঘর করেন, সেদিন একজন সাহাবী সারারাত নবীর তাঁবুর বাইরে জেগে পাহারা দিয়েছিলেন। কারণ তার শংকা হচ্ছিল যদি ইহুদী কন্যা (সাফিয়া) প্রতিশোধ নিতে নবীর উপর আক্রমন চালায়! ইবনে হিশামে এভাবেই সাফিয়া ও নবীর বিয়ের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা সুন্দরী হিন্দু মেয়েদের উঠিয়ে নিয়ে বিয়ে করত। সেইসব মেয়েদের জীবন কেটে গেছে রাজাকারের ঘরে। পুত্র কন্যা নিয়ে তাদের সেই সংসার দেখলে কে বলবে একদিন ঘৃণার মধ্যে দিয়ে যে লোকটাকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলো এটি সেই সংসার! আমি এরকম এক নারীকে চিনতাম। তাকে অবশ্য রাজাকাররা নয়, একজন মুক্তিযোদ্ধা অস্ত্রের মুখে তুলে এনে বিয়ে করেছিলো। অপরূপা সেই নারী সম্পর্কে এলাকায় বদনাম ছিলো, মহিলার মধ্যে হিন্দু রীতি নাকি এখনো বিদ্যমান। তিনি নাকি হিন্দুদের মত অনেক নিয়ম মানেন। মহিলার স্বামী মারা যাবার সময় মহিলাকে কাঁদতেও দেখেছি! আসলে সীতার সময় থেকে ধরলে আজকের যুগ পর্যন্ত নারীদের জীবন এতটুকু বদলায়নি। কারণ নারীর একা একা বেঁচে থাকার পথ এই সমাজ বন্ধ করে রেখেছে। সীতাকে যদি রাম উদ্ধার করতে না পারত তাহলে রাবণের বাচ্চার মা হয়ে সীতাকে সেখানেই বেঁচে থাকতে হত। রাবণের মৃত্যুতে বুক চাপড়ে কাঁদতেও শিখে যেত। রাম যখন তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় তখন রামের অসতি অপবাদে আত্মহত্যা করে নিজেকে শেষ করে দিলেও পারেনি একা স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে। সাফিয়া সীতা-  আসলে তাদের কোন ধর্ম নেই। সমাজ নেই। যুগ নেই। তারা সকলে নারী! তারা ভিকটিম! খুব একটা বদলায়নি কোন সমাজই...।

#সুষুপ্ত_পাঠক

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted