যশোরেশ্বরী কালীমন্দির পরিদর্শনে আসছেন ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

আগামী ২৭ মার্চ  ৫১ শক্তিপীঠের অন্যতম বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত  যশোরেশ্বরী কালীমন্দির পরিদর্শনে আসছেন ভারতের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিষয়টি নিয়ে জল্পনা কল্পনা থাকলেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
.....আসুন মন্দিরটি সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেয়।
একবার এক মহাযজ্ঞ আয়োজন করেন দক্ষ রাজা। সেই যজ্ঞে শিব ছাড়া ত্রিভূবনের সবাইকে নিমন্ত্রণ জানানো হয়। শিবের মূর্তি বানিয়ে রাখা হয় প্রাসাদ ফটকে প্রহরী হিসেবে।
খবর পেয়ে ছুটে আসেন দক্ষ রাজারই কন্যা শিবপত্নী সতী। শিবের দারোয়ান মূর্তি দেখে লজ্জায় দেহত্যাগ করেন তিনি। উন্মত্ত শিব তখন সতীর মরদেহ কাঁধে নিয়ে শুরু করেন প্রলয়নৃত্য। কাঁপতে থাকে পৃথিবী। নিরুপায় হয়ে বিষ্ণু তখন তার চক্র দিয়ে সতীর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করতে থাকেন।
সতীর শরীরের মোট ৫১টি খণ্ড পতিত হয় ভারতবর্ষের ৫১টি স্থানে। সেই স্থানগুলো পরিচিতি পায় শক্তিপীঠ হিসেবে। এমনই শক্তিপীঠ চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ পাহাড়, মহেশখালীর আদিনাথ পাহাড়। আর এই ঈশ্বরীপুর। এখানে পতিত হয় দেবীর করকমল। যা পরে মন্দিরের প্রেক্ষিত রচনা করে দেয়।   
যশোরেশ্বরী নামে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ধরা হয় যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যকে। যার বাবা বাংলায় পাঠান বংশের শেষ স্বাধীন সুলতান দাউদ খান কররানীর ধন-সম্পদের তত্ত্বাবধায়ক শ্রী হরি। মুঘলদের সঙ্গে যুদ্ধে দাউদ খানের মৃত্যু হলে যিনি ধনসম্পদ নিয়ে চলে যান খুলনা অঞ্চলের ভাটিতে। বিক্রমাদিত্য নাম নিয়ে নিজেকে ঘোষণা করেন মহারাজা।সেই বিক্রমাদিত্যেরই ছেলে প্রতাপাদিত্য। যিনি মুঘলদের সঙ্গে সন্ধির নামে দীর্ঘদিন ঝামেলাহীনভাবে নিজের রাজ্য শাসন করে যান। গড়ে তোলেন মন্দির, অতিথিশালা, হাম্মাম, প্রাসাদ। রাজধানী গড়েন ধুমঘাটে। যার অবস্থান বর্তমান সাতক্ষীরার শ্যামনগরে। তিনি যশোরের জমিদার হলে ওই ধুমঘাটই তার রাজধানী। আর রাজধানী সুরক্ষার জন্য গড়া প্রতাপাদিত্যের সেই বিখ্যাত নৌদুর্গও ধুমঘাটের কাছেই। তবে মন্দিরটি কখন নির্মিত হয় তা জানা যায়নি। 
কিন্তু কালের বিবর্তনে অনেক নিদর্শনই আজ হাওয়া। সন্ধির শর্ত নিয়ে গড়িমসির কারণে ইসলাম খানের নির্দেশে মির্জা নাথান এসে গুঁড়িয়ে দেন প্রতাপাদিত্যের নৌবহর, দুর্গ, প্রাসাদ। বন্দী অবস্থায় দিল্লি যাওয়ার পথে বেনারসের কাছে প্রতাপাদিত্যের মৃত্যুর পর তার রাজ্যেও নামে ঘোর অমানিশা। পরিত্যক্ত হয়ে অস্তিত্ব হারাতে থাকে তার গড়া নিদর্শন।
তবে এখানে, এই ঈশ্বরীপুরে যশোরেশ্বরী ছাড়াও প্রতাপাদিত্যের হাম্মামখানার সদম্ভ অস্তিত্ব বর্তমান। অতিথিশালা আর চণ্ডা মন্দির বিলুপ্ত হলেও সাক্ষী রয়ে গেছে ইতিহাসে। আর রয়ে গেছে বিশাল বটবৃক্ষের নিচে যশোরেশ্বরী। 
ভগ্নপ্রায় হলেও মন্দিরটা যে প্রাচীর বেষ্টিত ছিলো তা বুঝে নিতে কষ্ট হয় না। মাঝখানে ম‍ূল মন্দির ও নাট মন্দিরের ভগ্নাবশেষ এখনো বর্তম‍ান। শক্তিপীঠের গল্পও প্রচলিত লোকমুখে। সে গল্পের বিস্তৃতি দেশ-কালের সীমানাকেও অতিক্রম করে গেছে।  
কিন্তু যশোরেশ্বরী সব কিছুর উধ্র্বে উঠে টিকে গেলেও নাম নামে গড়া মন্দির এখন ধ্বংসের দ্বরপ্রান্তে। এখনো যেটুকু মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে তাতেও মধ্যযুগীয় স্থাপত্যশৈলীর সমৃদ্ধ নিদর্শন আছে বটে, কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিদিনই কমছে ইতিহাসের চিহ্ন।
ঐতিহাসিক ও পুরান বর্ণিত ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকায় মন্দিরটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে। অতিতে রানী রাসমনী সহ জমিদারেরা এখানে নিয়মিত পূজা দিতে আসতেন। 
বর্তমানে এই মন্দিরটি বিশেষ ধর্মের উর্ধে গিয়ে বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে রয়েছে। যা আমাদের সাতক্ষীরা বাসিকে গর্বিত করেছে।
তথ্য সূত্রঃ banglanews24.com

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted