বেদাদি শাস্ত্রে 'যোনি' শব্দটি, সর্বদা স্ত্রীচিহ্ন অর্থেই ব্যবহৃত হয়নি।।।

বেদাদি শাস্ত্রে 'যোনি' শব্দটি,
সর্বদা স্ত্রীচিহ্ন অর্থেই ব্যবহৃত হয়নি

ইদানীং বাংলাদেশে ইউটিউব এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর নব্য বেদচর্চাকারীর জন্ম হয়েছে। এই নব্য বেদচর্চাকারীরা বেদের বিভিন্ন মন্ত্র খণ্ডিত করে ইচ্ছামত বিকৃত অর্থ করে মানুষকে নিয়মিত বিভ্রান্ত করছে, প্রতারিত করছে। এই নব্য বেদচর্চাকারীর বিশাল একটা অংশ অন্য ধর্মাবলম্বী। ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করে তারা এই সংঘবদ্ধ প্রচারণা করছে আজ বহুদিন থেকেই। অন্যের ধর্মীয় বিশ্বাসে অযৌক্তিক বামহাত দেয়া ব্যক্তিগুলোর তৈরি করা ভিডিওগুলো হাস্যকর। নিজের ধর্মমতকে প্রতিষ্ঠা করতে তারা পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন গ্রন্থ বেদ এবং বেদের রেফারেন্সকে খণ্ডিন এবং বিকৃত অর্থ তৈরি করে নিজদের মতবাদ প্রচারের স্বার্থে ব্যবহার করছে।

বেদের মধ্যে আরবি ভাষার কোন শব্দের উচ্চারণগত কাছাকাছি শব্দ পেলেই তারা, সেই শব্দের সাদৃশ্যে বেদের মধ্যে তাদের ধর্মপ্রবর্তকের নাম, তাদের ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত সৃষ্টিকর্তার নাম আবিষ্কার করে ফেলছে। বিষয়টি হাস্যকর। তাদের এ বিকৃতি আজ বহুদিন থেকেই সংঘবদ্ধ প্রক্রিয়ায় চলছে। এর অন্যতম কারণ এ সংঘবদ্ধভাবে মিথ্যাচারের বিষয়গুলো নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের খুব একটা মাথাব্যথা নেই। বেদচর্চা জনপ্রিয় না থাকায়, অনেকে বিষয়গুলো সঠিকভাবে জানেও না। এই কারণেই এই মিথাবাদী প্রবঞ্চক জ্ঞানকানাদের আস্ফালন। একটি কথা প্রচলিত যে মিথ্যা কানের কাছে বারবার কেউ বললে, তা সত্যের মত শোনায়। এই জ্ঞানকানা অন্ধদের সঠিক বৈদিক জ্ঞানের মুগুরপেটা প্রয়োজন। জ্ঞানকানাদের মুগুরপেটা করে ঠিক করতে লালন সাঁইয়ের মত বাংলা সাহিত্যে বোধহয় কেউ এমন সুস্পষ্টভাবে বলতে পারেনি। তিনি তাঁর কয়েকটি গানে বিষয়টি বলেছেন। জ্ঞানপাপীরা অন্ধরা আন্দাজে অন্যের জমিতে অহেতুক খুঁটি গেড়ে, পরে আর সীমানা চিনতে পারে না। নিজেও জানে না কাদের জমিতে চলে এসেছে। পরে নিজের কর্মকাণ্ডে নিজরই বিপদ ডেকে আনে।

"আন্দাজে এক খুঁটি গেড়ে,
চেনে না সীমানা কার।।
এক কানা কয় আর এক কানারে
চল এবার ভবপারে।
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বারে বার।।
কানায় কানায় উলামিলা
বোবাতে খায় রসগোল্লা।"

আন্দাজে অন্যের জমিতে খুঁটি গেড়ে, সীমানা লঙ্ঘন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। গবেষণার নামে বেদ এবং সনাতন ধর্ম দর্শন নিয়ে যারা মিথ্যাচার করছে তাদের লালন সাঁইয়ের ভাষায় বলতে হয়, "কানায় কানায় উলামিলা।" তাদের উচিত তাদের নিজদের সীমানার মধ্যে যথাসম্ভব থাকা। দিনের পর দিন বেদ এবং সনাতন ধর্ম দর্শন নিয়ে মিথ্যাচারের পরেও বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের থেকে কোন বৌদ্ধিক প্রতিবাদ আসবে না ; এ কথা যদি কেউ ভেবে থাকে তবে সে বোকার স্বর্গে বসবাস করে। প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি প্রতিক্রিয়া আছে। বেদমন্ত্রকে খণ্ডিত করে যারা ইচ্ছামত বিকৃত অর্থ করে।

বর্তমানে আমরা শাস্ত্রীয় শব্দগুলোকে বর্তমান আধুনিক চিন্তা, মানসিকতা এবং দৃষ্টিতে দেখতে গিয়ে সেই পরম্পরাগত শাস্ত্রীয় শব্দগুলোর সাথে একপ্রকার অন্যায় করে ফেলছি। এমন একটি বহুল প্রচলিত শব্দ হচ্ছে 'যোনি'। এ শব্দটি আক্ষরিক অর্থ যেমন স্ত্রীভগচিহ্ন, তেমনি শব্দটি আরও বিবিধ অর্থে বেদান্ত শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। স্ত্রীভগচিহ্ন ছাড়াও যোনি শব্দটির অন্যান্য অর্থ হলো: উৎপত্তিস্থান, কোন বিশেষ কার্যের কারণ,মাতৃস্থানীয়া, জাতি, আকর, জল, বীজ বা শস্যবীজ ইত্যাদি। বেদান্তে 'যোনি' শব্দের দ্বারা জগতের উপাদান ব্রহ্মকে বোঝানো হয়েছে। মহর্ষি বাদরায়ণ প্রণীত বেদান্তসূত্রের প্রকৃত্যধিকরণে যোনি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :

যোনিশ্চ হি গীয়তে৷৷
(ব্রহ্মসূত্র ১.৪.২৭)

শাঙ্করভাষ্য অনুসারে এই সূত্রের ভাবার্থ হলো, এইহেতুবশতঃও ব্রহ্ম জগতের উপাদান কারণ, যেহেতু উপনিষৎ সকলে ব্রহ্ম 'যোনি', এইরূপেও পঠিত হইতেছেন।

মুণ্ডক উপনিষদে দুটি মন্ত্রে ব্রহ্মের কারণ এবং সকল সৃষ্টির উৎস অর্থে যোনি শব্দটি প্রযুক্ত হয়েছে।এইরূপ লক্ষণবিশিষ্ট ভূতযোনি অর্থাৎ প্রাণিগণের সৃষ্টির কারণস্বরূপ, স্থাবর-জঙ্গমের কারণস্বরূপ পৃথিবীর ন্যায় যাঁহাকে তথা সকলের স্বরূপভূত সেই অব্যয়কে বিবেকিগণ সর্বত্র উপলব্ধি করেন।

যদা পশ্যঃ পশ্যতে রুক্মবর্ণং
কর্তারমীশং পুরুষং ব্রহ্মযোনিম্।
তদা বিদ্বান্পুণ্যপাপে বিধূয়
নিরঞ্জনঃ পরমং সাম্যমুপৈতি।।
(মুণ্ডক উপনিষৎ-৩.১.৩)

" সাধক যখন জ্যোতির্ময় সৃষ্টা, ব্রহ্মার কারণ (হিরণ্যগর্ভ), সেই পরমপুরুষ ঈশ্বরকে উপলব্ধি কিরেন, তখন তিনি পাপপুণ্যের ঊর্ধ্বে চলে যান এবং নির্লিপ্ত ও পবিত্র হয়ে পরম সাম্য লাভ করেন।অর্থাৎ সাধক তখন জগতের সকল কিছুর সাথে একাত্মতা অনুভব করেন।"

যত্তদদ্রেশ্যমগ্রাহ্যমগােত্রমবর্ণ-
মচক্ষুঃশ্রাত্রং তদপাণিপাদম্।
নিত্যং বিভুং সর্বগতং সুসূক্ষ্মং
তদব্যয়ং যদ্ভুতযােনিং পরিপশ্যক্তি ধীরাঃ।।
(মুণ্ডক উপনিষৎ-১.১.৬)

"যিনি অদৃশ্য (জ্ঞানেন্দ্রিয়ের অতীত), অগ্রাহ্য (কর্মেন্দ্রিয়ের অতীত), স্বয়ম্ভু, অরূপ, সকল ইন্দ্রিয়ের উর্ধ্বে (জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয়) অবিনাশী এবং সর্বব্যাপী (আকাশের মতাে) এবং যিনি সূক্ষ্মতম ও সকল সৃষ্টির উৎস—সেই ব্রহ্মকে জ্ঞানী ব্যক্তিরা সর্বস্তুতে এবং সর্বত্র দেখেন।"

'যোনি' শব্দটি প্রকৃতির উপাদানকারণ বাচক। ইহা লোকমধ্যে অবগত হওয়া 'পৃথিবী ওষধি ও বনস্পতিসকলের যোনি' ইত্যাদি।কোন কোন স্থলে 'যোনি' শব্দ স্থানের বাচকরূপেও পাওয়া যায়।

যোনিষ্ট ইন্দ্র নিষদে অকারি
তমা নি ষীদ স্বানো নার্বা।
(ঋগ্বেদ সংহিতা:১.১০৪.১)

"হে ইন্দ্র!, তোমার উপবেশনের জন্য আমি যোনি বাস্থান নির্মাণ করেছি, শব্দায়মান অশ্বের ন্যায় তথায় উপবেশন কর।"

বেদানসূত্রের শুরুতেই বেদাদি শাস্ত্রকে অখিল জ্ঞানভাণ্ডারের যোনি বা উৎস বলা হয়েছে। 
"শাস্ত্র যোনিত্বাৎ।" (বেদান্তসূত্র :১.১.৩)

অখিলশাস্ত্রের যোনি বা উৎস বেদ। যোনি শব্দটি উৎস অর্থে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। জগতের সকল জ্ঞানের উৎস পরমেশ্বর, বিষয়টি এ সূত্রে সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়। যোনি শব্দটির মধ্যে যদি লজ্জা পাওয়ার কিছুই থাকত, তাহলে শব্দটি বেদান্তসূত্রে থাকত না। ঠিক একইভাবে জগতের সকল জীবের জন্মধাত্রী হলেন আদ্যাশক্তি মহামায়া; তাঁর সেই সৃষ্টির প্রতীক হিসেবে যোনিরূপে পূজা করা হয় তাহলে সমস্যা কোথায়? তাই মাতৃরূপে, পরমেশ্বরীরূপে পৃথিবীর উপাসনা সারা পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত ছিল।

মম যোনির্মহদ্ব্রহ্ম তস্মিন্ গর্ভং দধাম্যহম্৷
সম্ভবঃ সর্বভূতানাং ততো ভবতি ভারত৷৷
সর্বযোনিষু কৌন্তেয় মূর্তয়ঃ সম্ভবন্তি যাঃ৷
তাসাং ব্রহ্ম মহদ্ যোনিরহং বীজপ্রদঃ পিতা৷৷
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা:১৪.৩-৪)

"হে ভরতবংশীয় অর্জুন, আমার মহৎব্রহ্মরূপ মূল প্রকৃতি সকল জীবের উৎপত্তির কারণ গর্ভাধানস্থান, এবং সেই ব্রহ্মে আমি চেতনরূপ গর্ভদান করি। ফলে সেই জড়-চেতনের সংযোগেই সর্বভূতের উৎপত্তি হয়।

হে কৌন্তেয়, সমস্ত যোনিতে যত মূর্তি প্রকাশিত হয় বা দেহধারী প্রাণী উৎপন্ন হয়, ব্রহ্মররূপ যোনি প্রকৃতিই তাদের জননী স্বরুপা এবং আমি তাদের বীজ প্রদানকারী পিতা।"

ব্রহ্ম বলতে এখানে নারীকে বুঝানো হয়েছে কারন সৃষ্টির বিকাশ নারীদেহ থেকেই হয়৷ এবং সে নারীগর্ভে তথা ব্রহ্মে গর্ভধান করেন পরম পিতা পরমাত্মা। ব্রহ্মরূপ যোনি বলতে ইউটেরাস তথা জরায়ু যেখানে ডিম্বাণুর সাথে শুক্রাণুর মিলন হয়। এবং পরমাত্মা পিতা স্বরূপ সেখানে বীজ প্রদান করে তথা শুক্রাণুর কথা বলা হয়েছে।কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের প্রথম অধ্যায়ের দ্বিতীয় মন্ত্রটি সম্পূর্ণ অর্থ সহকারে দেখব। আমাদের উল্লেখ্য সম্পূর্ণ মন্ত্র এবং মন্ত্রটির অর্থটিতে কোথাও ভূতপ্রেত বা যোনি প্রসঙ্গ নেই। শুধুই আছে সৃষ্টির কারণ এবং জীবাত্মার সাথে এর সম্পর্কের কথা।

কালঃ স্বভাবো নিয়তির্যদৃচ্ছা 
ভূতানি যোনিঃ পুরুষ ইতি চিন্ত্যা।
সংযোগ এষাং ন ত্বাত্মভাবা-
দাত্মাপ্যনীশঃ সুখদুঃখহেতোঃ।।

"কাল, বস্তুর স্বভাব, কারণ এবং তার কার্য, আকস্মিক ঘটনা, ক্ষিতি, অপ ইত্যাদি মহাভূত অথবা জীবাত্মা, এই সবের কোনও একটি কি জগতের কারণ? 
এইটিই প্রশ্ন।( বস্তুত এর কোনটিই কারণ নয়।) উপরিউক্ত সবগুলি সমষ্টিগতভাবেও জগৎকারণ নয়, কারণ কেবলমাত্র জীবাত্মাই এগুলিকে একত্রিত করতে পারে। কিন্তু আবার (কর্মফলের জন্য) সুখ-দুঃখের অধীন কোন জীবাত্মাই নিজের প্রভু অর্থাৎ স্বাধীন নয়।" 

এদের বিষয়গুলো বোঝানোর স্বার্থে কৃষ্ণ যজুর্বেদীয় শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের একটি মন্ত্রের উদাহরণ দেয়া যায়। মন্ত্রটির দ্বিতীয় পাদে আছে, "ভূতানি যোনিঃ পুরুষ ইতি চিন্ত্যা।"এ খণ্ডিত অংশটির যদি আক্ষরিক অর্থ করতে হয়, তবে মন্ত্রের খণ্ডাংশটির আক্ষরিক অর্থটি আপাত বেশ আপত্তিকর অর্থ প্রদান করে। মন্ত্রের আক্ষরিক অর্থ হয়, "ভূতেদের যোনি পুরুষের এরূপ চিন্তা।" সম্পূর্ণ মন্ত্রের অর্থ না শুনে অনেকেই হয়ত বলে উঠবেন, ছিঃ! অনেকে ভেবে থাকবেন, বেদে এমন অশ্লীল কথাবার্তা কি করে আছে? ভদ্র সমাজে এ মন্ত্র উচ্চারণই সম্ভব নয় ইত্যাদি। বেদমন্ত্রের খণ্ডিত অংশকে খণ্ডিত অর্থ করে এরকম অসংখ্য বিকৃত অর্থের সংঘবদ্ধ প্রচারণায় প্রতারিত হচ্ছি আমরা। এ প্রতারণার অন্যতম কারণ, আমাদের জীবনে সামান্যতম বেদচর্চা নেই। শুধু পাঠ্যক্রমে পড়েছি এবং মুখে মুখেই আমরা বলে থাকি, বেদ আমাদের প্রধান এবং আদি ধর্মগ্রন্থ। মন্ত্রের আরো ব্যাখ্যা দেওয়া যায় কিন্তু সেটা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। যেটি প্রাসঙ্গিক তা হল, আপনি নিজের খেয়ালখুশি মত অন্ধের হস্তিদর্শন করতে পারেন না। আপনাকে হাতির চেহারা বুঝতে হলে, চোখকে খোলা রেখে সম্পূর্ণ হাতিটিকেই দেখতে হবে। কিন্তু চোখ খোলা থাকা সত্ত্বেও যদি আপনি হাতির বিভিন্ন অঙ্গ- প্রত্যঙ্গকে দেখে ; সম্পূর্ণ একটি হাতি বলে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তবে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। একে দর্শনের পরিভাষায় "অন্ধের হস্তিদর্শন বলে।" তাই অতি বুদ্ধিমান সেজে, বেদ ভাষ্যকারদের পরম্পরাহীন নিজের মত করে বেদমন্ত্রের অর্থ তৈরি করা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। 

সেনাতন বেদাদি শাস্ত্রে যোনি শব্দটি সর্বদা স্ত্রীচিহ্ন অর্থেই ব্যবহৃত হয়নি। বিবিধ প্রকারের অর্থ রয়েছে যোনি শব্দটির। শব্দটি ব্রহ্ম অর্থে ব্যবহৃত। শব্দটির মধ্যে কোন নেতিবাচকতা না থাকার পরেও শব্দটি ব্যবহার করতে লজ্জিত হই, কিছুটা কুণ্ঠিত হই। এর কারণ আমরা নিজেরাই নিজেদের সম্পর্কে যথাযথভাবে জানি না। শিবলিঙ্গের নিচের অংশকে বলে যোনিপট্ট বা গৌরীপট্ট। এ গৌরীপট্ট আদ্যাশক্তি মহামায়ার প্রতীক। শিবলিঙ্গ শব্দটি ব্যবহার করার সময়েও আমারা অজ্ঞানতার কারণে  সংশয়াচ্ছন্ন হয়ে যাই। মনে মনে ভাবি,  ধর্মীয় ক্ষেত্রে এ সকল বিষয় কেন? আমরা নিজেরাও বুঝতে পারছি না যে, দিনেদিনে আমাদের চিন্তা সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা থেকে ঊষর মরুভূমির মত কণ্টকাকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আমারা নিজেদের অজ্ঞাতসারের নিজেরাই নিজেদের কৃষ্টি, ঐতিহ্য এবং স্বাভিমানকে পরিত্যাগ করা শুরু করে দিয়েছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘৃণা করা শুরু করে দিয়েছি। এর অভিঘাতে আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেকেরই ধর্মীয় বোধ নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। 

সনাতন ধর্ম নিয়ে যেকোন আলোচনা সমালোচনার আগে এ শ্বাশত ধর্মটি সম্পর্কে আগে সম্যক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। এটা বোঝা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে, এ ধর্মের ভিত্তি ঈশ্বর অন্বেষণের ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে। ঈশ্বর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা এখানে জ্ঞান অর্জনের এক সুসংবদ্ধ প্রক্রিয়া। এখানে স্রষ্টা এবং তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে প্রশ্ন করতে কোথাও নিষেধ করা হয়নি। বরং বারেবারেই বিষয়টিতে উৎসাহিত করা হয়েছে। এই ধারণা কারো যদি বোধগম্য না হয়, তাহলে তাদের উর্বর মস্তিষ্কের জন্য একরাশ সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কিছুই করার নেই। ভারতবর্ষে স্রষ্টাকে নিয়ে প্রশ্ন করলে, নাস্তিক বলে কেউ তার গলা কেটে হত্যা করার প্রয়াস করে না। সকল মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এখানে অনন্তকাল ধরে চলে, তা আজও সদা বহমান। ষড়দর্শনের অন্যতম একটি দর্শন, কপিল মুনির প্রবর্তিত সাংখ্যমত ঈশ্বরকে সরাসরি স্বীকার না করেও বেদানুগত আস্তিক দর্শন। চিন্তার স্বাধীনতা ভারতবর্ষীয় দার্শনিক কাঠামোতে সদা জাগ্রত এবং বহমান।

কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী 
সহকারী অধ্যাপক, 
সংস্কৃত বিভাগ, 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted