পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বিধ্বস্ত রমনা কালীবাড়ি পুনর্নির্মাণের দাবি কোনো সরকারই পূরণ করেনি।

১৯৬৪ সালে ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজার খানেক মানুষ সাম্প্রদায়িক হামলায় মারা গেলো অথচ সেই ঘটনা নিয়ে কেউ উপন্যাস লিখল না!

১৯৬৪ সালের ১৮ জানুয়ারি ইত্তেফাকের রিপোর্টে থেকে জানা যায় পুরান ঢাকার হিন্দুদের ৯৫ ভাগ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত এবং ১ লক্ষ হিন্দু জনগোষ্ঠি ঢাকা শহরে গৃহহীন অবস্থায় বসবাস করছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায় ১০০০ মানুষ এই হামলায় মারা গেছে! ঢাকা মেডিকেলে ৬০০ লাশ দেখার কথা একজন নার্স জানায়। ঢাকা শহরের স্কুলগুলো শিক্ষক ও স্টুডেন্ট শূন্য হয়ে যায়। কারণ তখনও শিক্ষক ও স্টুডেন্টের ৮০ ভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের ছিলো। তুচ্ছ একটি চুলের জন্য এতবড় ঘটনা এত মৃত্যু ঘটে গেলো তবু লেখক শিল্পীদের মত সংবেদনশীল গোষ্ঠীর মনে দাগ কাটল না? মানুষগুলো হিন্দু ছিলো বলে? 

এদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্য থেকেও বড় বড় সাহিত্যিক কবি এসেছে। তারাও কেউ ৫০ ৬৪ ৬৫ সালের হিন্দু নিধন নিয়ে উপন্যাস নাটক কবিতা লিখেননি মুসলমানদের কাছে "সাম্প্রদায়িক" সন্দেহভাজন না হতে এবং জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে।

৬৪ সালে ভারতের হযরতবাল মসজিদ থেকে কথিত প্রফেট মুহাম্মাদের চুল চুরি যাবার অভিযোগে বাংলাদেশের নিরহ হিন্দুদের উপর হামলে পড়ে তৌহিদী জনতা। এরা নাকি 'গুটিকয়েক' সাম্প্রদায়িক কীট। বাকী ৯৯ ভাগ নাকি অসাম্প্রদায়িক!  তাহলে ৬৪ সালের ঘটনা নিয়ে কেউ সিনেমা বানাল না কেন?  সৈয়দ শামসুল হক ৬৩ সালে আনারকলি নামে উপন্যাস লিখলেন দেশভাগের উপর। তাও উপন্যাসের প্রেক্ষাপট পাঞ্জাব ও লাহোর। কিন্তু পরের বছরের দাঙ্গা চাক্ষুষ করে কিছু লিখেননি। 

৯০ এর বাবরী মসজিদ ভাঙ্গার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ভয়াবহ হিন্দু নিধন নিয়ে উপন্যাস লিখেন তসলিমা নাসরিন। শুধুমাত্র এই উপন্যাস লেখার কারণ তসলিমার উপর বাংলাদেশের সমস্ত কবি সাহিত্যিক তাদের সমর্থন তুলে নেয়। তারা বলতে থাকে বাংলাদেশে এরকম সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেনি তসলিমা বিজেপির টাকা খেয়ে 'লজ্জ্বা' উপন্যাস লিখেছে।

বাংলাদেশে কখনও কোনদিন একটিও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেনি। এরকম একটি ঘটনার প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না। দাঙ্গা হয় দুই দল বা সম্প্রদায়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। বাংলাদেশে ঘটেছে একতরফা হিন্দু বিরোধী তান্ডব। বৌদ্ধ খ্রিস্টান পল্লীতে হামলা। ৪৬ ৪৭ ৫০ ৬৪ ৬৫ ৭১ ৯০ এগুলো দাঙ্গা ছিলো না। দাঙ্গা হয় ভারতে। পাকিস্তান বাংলাদেশ আফগানিস্তানে কখনো মুসলমানদের সঙ্গে কারোর দাঙ্গা হয়নি। ওআইসি ভুক্ত ৫৭টি মুসলিম দেশের তাই 'দাঙ্গার' ইতিহাস নেই। ঠেকায় পড়ে ঘটনাগুলিকে স্বীকার করে নিলেও  একতরফা হামলা তান্ডবকে 'দাঙ্গা' বললে একটা ব্যালেন্স হয়! 

বলতে পারেন সে সময় পাকিস্তান আমল ছিলো। আমাদের কিছু করার ছিলো না। তাদের মুখে ঝামা ঘঁষে দিয়েছেন আনিসুজ্জামান। তিনি লিখেছেন, "১৯৭১ সালে যাঁরা বাস্তুত্যাগী হিন্দুর সম্পত্তি দখল করেছিলেন, ১৯৭২-এ তা কেউ কেউ ফেরত দেননি এবং এ-বিষয়ে সরকার থেকেও প্রতিকার পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক বিধ্বস্ত রমনা কালীবাড়ি পুনর্নির্মাণের দাবি কোনো সরকারই পূরণ করেনি। ১৯৭২-৭৩-এ পুজোর সময়ে এদিকে ওদিকে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল যে, তুলনায় পাকিস্তানের কালে সাম্প্রদায়িক সহনশীলতা ও নিরাপত্তা বেশি ছিল বলে ভাবার কারণ ছিল। (অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, প্রথম আলো, ০৬ নভেম্বর ২০১৩)।

#সুষুপ্ত_পাঠক

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted