সত্য সেলুকাস, বড় বিচিত্র এই দেশ ! ভারতের বিশেষ করে পশ্চিমবাংলার বেশ কিছু তথাকথিত পাবলিক খ্যাত বুদ্ধিজীবী ইদানিং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে লিখিত প্রতিবেদন দিয়ে দরবার করেছিল যে, ভারত নাকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হুমকির মুখে।
এই প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবীরা সকলেই আত্মস্বীকৃত সেকুলার। এই আত্মস্বীকৃত সেকুলারদের কাছে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে : ভারতে কি এমন ঘটছে যা ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে ?
দ্বিজাতিতত্ত্বের ভাওঁতাতে যখন অখণ্ড ভারত দুভাগ হয়ে ভারত আর কুলাঙ্গারদের পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল, সেই সময়ের আগে পরে যা কিছু ঘটেছিল সেই সময়ের রাজনৈতিক নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায়, সেই সকল ইতিহাস স্বীকৃত ঘটনাগুলো কি সম্প্রীতির আদর্শ নিদর্শন ?
১৯৪৬-৪৭ বড্ড আগে হয়ে যাচ্ছে না ? বাদ দিন ! '৯০ এর দশকে যখন কাশ্মীরের ভূমি সন্তান পন্ডিতদের কচুকাটা করে, ধর্ষণ করে নিজভূমে পরবাসী করা হয়েছিল, তখন এই সকল বুদ্ধিজীবীদের যে কজন দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন, তারা সেই সময়ের ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত প্রতিবেদন নিয়ে দরবার করতে গিয়েছিলেন ? মনে পরছে না তো !
তা বুদ্ধিজীবীগণ আপনারা আদতেই সেকুলার না বিশেষ ধর্মীয় কম্যুনিটি তোষণকারী সেকুলাঙ্গারের দল ? নিজেদের সততা নিজেরা কখনো যাচাই করে দেখেছেন ? বেক্তি জীবনে একজন সৎ মানুষ দাড়িপাল্লায় পুরোটা মাপে, অর্ধেক নয়। এই লেখা বেক্তি কুৎসার নয়, তবুও এই সেকুলাঙ্গার বুদ্ধিজীবীদের এক বাঙালি মধ্যমণির কথা না বললেই নয়। ইনি সেই অতি পরিচিত অপর্ণা সেন। অপর্ণা সেন ঝালেও আছেন, ঝোলেও আছেন !
ভারতের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হুমকির মুখে মনে করা অপর্ণা সেন নিজে কি সমাজের জন্য একটি মূর্তিমান হুমকি নন ? আসুন দেখে নিই :
অপর্ণা ম্যাডাম জীবনের বহু ঘটনার মধ্যে সেই লস্যি আর শশার ঘটনাটা মনে পরছে ? '৭০ এর দশক, কলকাতার নামকরা ইস্কুলগুলোর মধ্যে 'সাউথ পয়েন্ট' একদম উপরের দিকে। ইন্দ্রনাথ গুহ ছিলেন ঐ সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রিন্সিপাল। ইন্দ্রনাথ গুহর স্ত্রী সুরূপা গুহ।
১৯৭৬ খৃষ্টাব্দ, ৪ঠা মে রাত্রি ১০টা থেকে ১০:১৫র মধ্যে সুরূপা গুহ হিন্দুস্তান পার্কের তার শ্বশুরবাড়িতে ফিরলে তার বাড়ির কাজের লোক ঝন্টুচরণ বৌদিদিমনিকে এক গ্লাস লস্যি ও শশা দিয়ে যায়। শশাও লস্যি খাবার ১ ঘন্টা পর থেকেই সুরূপা বমি করতে থাকে। সুরূপাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানেই সুরূপার মৃত্যু হয়। কাহিনী এখান থেকেই শুরু।
সুরূপার বাবা রমেন্দ্রমোহন মুখার্জি থানায় অভিযোগ করেন যে তার মেয়েকে অর্থাৎ সুরূপাকে তার জামাই ইন্দ্রনাথ ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে, কিন্তু এই মামলার তদন্তকারী অফিসারদের এত সাহস ছিল না যে গুহ পরিবারের বিরুদ্ধে সঠিক ভাবে তদন্ত করে। কারা এই গুহ পরিবার ? কোলকাতার বিখ্যাত সাউথ পয়েন্ট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ছিল ইন্দ্রনাথ গুহের পিতা সতীকান্ত গুহ।
কোলকাতার গল্ফগ্রিনের, হিন্দুস্তান পার্কের হাই সোসাইটির ধনী ও প্রভাবশালী ব্যাক্তি ছিলেন সতীকান্ত ও তার স্ত্রী প্রীতিলতা। রাজনৈতিক নেতা থেকে, মুখ্যমন্ত্রী যাদের হাতের মুঠোয় তাদের বিরুদ্ধে তদন্তকারী অফিসারেরা অসহায় বোধ করছিল। কোনো রকম করে রমেন্দ্রনাথ লাহিড়ী বলে একজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট তৈরী করে তাকে অপরাধী সাজিয়ে গ্রেফতার করে কোর্টে পেশ করলো পুলিশ।
বিচারপতি কিন্তু কিছুতেই মানতে নারাজ, কারণ হাসপাতালের চাদরে সুরূপার বমির নমুনা থেকে এটা আদালতের কাছে পরিস্কার হয়ে যায় যে সুরূপার খাবারের মধ্যে মারক্যুরিক ক্লোরাইড বিষ পাওয়া গেছে। বিচারপতি বেঁকে বসে, তিনি সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন।
সিআইডি তদন্তে নেমেই চাকর ঝন্টুচরণকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কব্জায় নেয়। এদিকে তখনকার খবরের কাগজে এই ঘটনা নিয়ে ঝড় উঠে গেছে। দৈনিক বসুমতি, যুগান্তর, ইংরেজি স্টেটসম্যানএর প্রথম পাতায় প্রথম খবর সুরূপা গুহ হত্যা মামলা।
কুলাঙ্গার মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায় পরিষ্কার জানালো সঠিক তদন্ত হবে, কোনো রকম প্রভাব বরদাস্ত হবে না। সিআইডির চাপে ঝন্টুচরণ মুখ খোলা শুরু করে। আর তার থেকেই আসতে আসতে বেড়িয়ে আসে আসল
তথ্য :
অপর্ণা সেনের অদম্য যৌনতাই ছিল সুরূপার হত্যার কারণ। সুরূপার বিয়ে হয় কলকাতার ঐ ধনী প্রভাবশালী গুহ পরিবারে। ভালই ছিল, কিন্তু বাধ সাধলো ইন্দ্রনাথের সঙ্গে বাংলা সিনেমার লাবন্যময়ী যৌনোষ্ণ নায়িকা অপর্ণা সেনের অবৈধ সম্পর্ক। অপর্ণা সেন তখন সিনেমার ১নং নায়িকা।
কিন্তু সেই সময় সিনেমা করে খ্যাতি অর্জন করলেও, আজকের মত এত টাকা রোজগারের সুযোগ ছিলো না। অপর্ণা সেনের মত উচ্চাকাঙ্ক্ষী মহিলার টাকার চাহিদা ছিল প্রচুর, তাই ইন্দ্রনাথ গুহের মতো একজন প্রতিষ্ঠিত ধনী প্রভাবশালী ব্যক্তি তার খুব প্রয়োজন ছিল।
ইন্দ্রনাথকে তো অপর্ণা ম্যাডাম তার প্রেমজালে ফাঁসিয়ে নিয়েছিলেন। ইন্দ্রনাথ তখন নায়িকার যৌবন নদীতে প্রতিদিন স্নান করছে। ইন্দ্রনাথের পিতা ও মাতার ও ইচ্ছে নায়িকাবধু ঘরে আনার কিন্তু বাধা একমাত্র ঐ সুরূপা। শুরু হলো শ্বশুর, শাশুড়ির অত্যাচার, স্বামীর অবহেলা, কিন্তু সুরূপা মাথা নিচু করে মুখ বন্ধ রেখেই শ্বশুরবাড়িতে পরে থাকলো। এদিকে অপর্ণার তাড়া - আর কত দিন ইন্দ্র ? শেষে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলো। ইন্দ্রনাথ, অপর্ণা, সতীকান্ত ও প্রীতিলতা ঠিক করলো সুরূপাকে সরিয়ে ফেলতে হবে। সুরূপার মৃত্যুই অপর্ণা সেনের বড়লোক হবার চাবিকাঠি।
নিশ্চিত প্ল্যান মাফিক হত্যা করা হলো সুরূপাকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। বিচারপতি প্রমাণের অভাবে অপর্ণা সেনকে ছেড়ে দিলেও গুহ পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও হত্যার চক্রান্তে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেয়। ইন্দ্রনাথকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কি অপর্ণা ম্যাডাম সব ঠিক বললাম তো ? কি যে করি ম্যাডাম, আমার সব থেকে বড় দোষ আমি আপনাদের মত সেকুলাঙ্গার হতে পারিনি কিন্তু খুঁটিয়ে পড়ে অনেক কিছু বার করে ফেলি। যে নিজে বেক্তি জীবনে অসৎ, সে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করতে গেছে।
সত্য সেলুকাস, বড় বিচিত্র এই দেশ !
Case Reference :
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................