খোমিনিকে ইরানের ক্ষমতায় আনার জন্য সমর্থন করা এই কমিউনিস্টদের কুকুরের মত গুলি করে হত্যা করেছে।

ইরানের ইতিহাসে দুইজন নারী মন্ত্রী ছিলেন। এখন এটা শুনলে রূপকথা মনে হবে অবশ্য। কারণ এখন ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের সরকার চলছে। মাত্র ৫০ বছর আগের ইরানে যে নারীরা পশ্চিমা নারীদের মত স্বাধীন ছিলো সেটা রীতিমত বিস্মৃত হয়ে গেছে। রেজা শাহ পাহলভি সরকারে দুজন নারী মন্ত্রীর একজন মাহনাজ আফকামি।






তিনি ইরানের নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে যুগান্তকারী কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যেমন বিবাহবিচ্ছেদে নারীদের পুরুষদের মত সমান অধিকার- ইসলামী আইনে যা মানা হয় না। মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করে দেন ১৮ -ইসলামে যেখানে মেয়েদের বিয়ের কোন নির্দিষ্ট করা নেই। শিশু অবস্থায়ও বিয়ে করা তাই ইসলামে জায়েজ। কর্মজীবী নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ধার্য করে দেন।

এরকম সময় রেজা শাহ’র সরকারের পতন ঘটে এবং খোমিনির ইসলামিক বিপ্লব ইরান জয় করে নেয়। মাহনাজ আফকামি তখন আমেরিকাতে সরকারি সফরে ছিলেন। খোমিনির হাত থেকে তিনি বেঁচে যান। কিন্তু রেজা শাহ’র মন্ত্রী সভার আরেক নারী মন্ত্রী ফারুক পারসা, যাকে নিজের গুরু মানতেন মাহনাজ আফকামি, তাকে ফাঁসি দেয়া হলো। তাকে বলা হলো সে বেশ্যা, কারণ সে ও মাহনাজ আফকামি আল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে নারীদের ঘর থেকে বের করে এনে। ফারুক পারসার ফাঁসি কার্যকর করা হলো ইরানের একটি পতিতালয়ে!

ইরানে খোমিনির মত একটা জিহাদী ক্ষমতায় আসলে ইরানের চেহারা কি রকম হতে পারে এটা ইরান ও পশ্চিমা বামপন্থিরা থোড়াই কেয়ার করেছে। পশ্চিমা বামপন্থি বুদ্ধিজীবী মিশেল ফুকো রেজা শাহের মার্কিন সমর্থিত সরকারের পতন ও প্রলেতারিয়েতদের সরকার কায়েম হয়েছে এই খুশিতে সোজা ইরান এসে খোমিনিকে শুভেচ্ছা জানায়। এদিকে সেক্যুলার রাষ্ট্র সমাজের পথিকৃত ফ্রান্স যারা রাষ্ট্র থেকে গির্জা ও খ্রিস্টান ধর্মকে আলাদা করেছিলো তারা খোমিনির মত একটা জিহাদী জঙ্গিকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে মদত দিয়ে গেছে বছরের পর বছর। ফ্রান্সে বসেই খোমিনি জিহাদের কলকাঠি নাড়ত। মিশেল ফুকো খোমিনি বিপ্লবকে সমর্থন করে তখন বলেছিল, "ইরানের এই বিপ্লবকে ‘ইসলামিক’ বা ‘মৌলবাদী’ তকমায় না ফেলে এটাকে সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদের আধিপত্যের বিরুদ্ধে ইরানের মহান এক বিপ্লব হিসেবে দেখা উচিত"…।

তো সেই মহান বিপ্লবের ফলে ইরানের নারীদের জীবনে কি নেমে এসেছিলো? খোমিনি সমগ্র ইরানে ঘোষণা করে দিলেন, কুফরি পারিবারিক আইন বাতিল করে কুরআনের নিয়ম অনুয়ায়ী নারীদের বিবাহ, তালাক, সম্পত্তির অধিকার ও অন্যান্য বিষয় মান্য করা হবে। নারী পুরুষকে পৃথক করে দেয়া হলো। হিজাব বা বোরখা ছাড়া নারীদের ঘর থেকে বের হওয়া নিষিদ্ধ করে দেয়া হলো। বস্তুত সমগ্র ইরানে ইসলামিক বিপ্লব তাদের এক হাজার বছর পিছনে টেনে নিয়ে গেলো। একজন স্বৈরশাসকের পতন যদি একটি ফ্যাসিস্ট শক্তির নেতৃত্বে ঘটে থাকে তার পরিণতি কি হতে পারে তার উদাহরণ ইরান ও আফগানিস্থান। বামদের আক্কেল এ জন্যই কম বলা হয়। ‘সাম্রাজ্যবাদ’ এদের কাছে ইসলামের ‘কাফের’ ঘৃণার সমতুল্য! কমিউনিস্টদের কাছে তাদের ‘কাফেরদের’ পতনই শেষ কথা। বিনিময়ে কোন সমাজের নারীরা হাজার বছর পিছনে চলে গেলে কিছু যায় আসে না। ইসলামিক জিহাদী জঙ্গি শক্তিগুলো আমেরিকা ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বলেই তাদেরকে ফিডমফাইটার বলতে তাদের বাধে না। ওহাবী তিতুমীরকে স্বাধীনতাকামী বলা, কাস্মিরের ইসলামিক জঙ্গিবাদকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সমর্থন তাদের বেয়াক্কেল চরিত্রের নমুনা।

বাংলাদেশে যে চরম স্বৈরশাসন, বাক স্বাধীনতা হীনতা, দুর্নীতি, গুম, রাজনৈতিক নৈরাজ্যবাদ চলছে তার পরিবর্তন যদি কেউ হেফাজত ইসলামের শক্তির বলে ঘটবে বলে সমর্থন করে থাকে তাদের পরিণতি হবে ইরানী কমিউনিস্টদের মত। খোমিনিকে ইরানের ক্ষমতায় আনার জন্য সমর্থন করা এই কমিউনিস্টদের কুকুরের মত গুলি করে খোমিনির লোকজন হত্যা করেছে। ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতে বার বার সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনে অগ্নিসংযোগ, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে আগুন লাগানো একটা অসুর শক্তিকে যেসব প্যান্ট শার্ট পরা কথিত প্রগতিশীলরা সমর্থন করছে তাদের পরিণিতি কিন্তু লেখা হয়ে যাচ্ছে...।

#সুষুপ্ত_পাঠক

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted