ব্রাহ্মণবাড়ীয়া তান্ডবে পুলিশ যে মামলা করেছে তাতে হেফাজত ইসলামের কারোর নাম নেই। নারায়ণগঞ্জের হেফাজতের তান্ডবে পুলিশ মামলা দিয়েছে বিএনপি জামাতের নেতাদের নামে! ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতে হেফাজত ইসলাম সরকারি-বেসরকারি অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান, দুটি মন্দির, সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন, ভূমি অফিস, জেলা পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, পৌর মিলনায়তন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে ধ্বংসলীলা চালায়। ডেইলি স্টারের রিপোর্ট অনুসারে সেখানে পুলিশ হেফাজত ইসলামের কোন নেতার নামে একটি মামলাও করেনি!
আওয়ামী লীগের তৃণমূল কর্মীরা বলে, রাজনীতির কর্মী হিসেবে তারা আওয়ামী লীগ, কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে হেফাজত ইসলাম! ওয়াজ মাহফিলের ৯৯ শতাংশ হয় কওমি মাদ্রাসার হুজুরদের নেতৃত্বে। আর এইসব মাহফিলের আয়োজক স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা। তারা সেখানে প্রধান অতিথি হয়ে উপস্থিত থাকে। তৃণমূলের এই অবস্থার পর প্রশ্ন জাগে সরকারের ভূমিকা নিয়ে। হেফাজত ইসলামের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারেনি নাকি চায়নি? কেন বিএনপির জায়গায় হেফাজত ইসলাম চলে আসল? রেলের জমি, কওমি সনদ, মাদ্রাসা মসজিদ করে তাদের খুশি করে দেয়ার পরও হেফাজত কেন হঠাত প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায়? কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাককে নিয়ে সরকারী ব্লগার এক্টিভিস্টরা যেভাবে সরকারকে সদমদ ঢেলে গেছেন এখন তাদের বক্তব্য কি? তারা কি গর্তের ভেতর ঢুকে গেছে?
হতে পারে,, সরকারী লোকজন এখন বলতে পারবে দেখেন, আমাদের না চাইলে যারা ক্ষমতায় আসতে পারে তারা কেমন? মানে বিকল্প দেখে আমাদের সমালোচনা করুন।এটা সরকারের একটা পলিসি হতে পারে। এই জন্যই হেফাজতের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কিন্তু মাদ্রাসার জঙ্গিদের বিএনপির জায়গায় এনে ফেলার মাশুল কি হতে পারে সেটি কি লীগ অনুধাবন করতে পারছে?
বিএনপির জনসভা পুলিশ দিয়ে বন্ধ করে ফেলা যাবে কিন্তু ওয়াজ মাহফিল কি পুলিশ দিয়ে বন্ধ করা যাবে? জামাতকে রাজাকার বলা যাবে কিন্তু মসজিদ মাদ্রাসার হুজুরদের জঙ্গি বলার মত সাহস বা বিশ্বাস কি সরকারের কারোর আছে? আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ওয়াজে হেফাজত নেতাদের উশকানিমূলক রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ‘মুসল্লিদের’ ধাওয়া পর্যন্ত খেয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতে তছনছ করে ফেললেও মাদ্রাসার জঙ্গিগুলোর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা যায়নি। এদিকে গয়শ্বরের পুত্রবধুকে গাড়ি পোড়ানোর মদতে গ্রেফতার করে রিমান্ড নেয়া গেছে। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তান্ডবের উশকানি দাতা মামুনুল হককে গ্রেফতার করা গেলো না কেন? সরকার অনেকটা এমন অবস্থানে যেন ‘তারা জিনিসটাকে আর বাড়তে দিতে চায় না গ্রেফতার বা মামলা মোক্কাদমা করে। কিন্তু 'তোমারে বধিবে যে গোকূলে বাড়িছে সে'...।
মামুনুল হকের সমালোচনা করে ফেইসবুক পোস্ট করার জন্য সুনামগঞ্জের সাল্লার ঝুমন রায় নামের একজনের নামে পুলিশ নিজে মামলা করেছে। অথচ মামলা তো করার কথা হেফাজত ইসলামের। সেই মামুনুল নরেন্দ্র মোদী ইস্যুকে পুঁজি করে চট্টগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়ীয়াতে সরকারী বেসরকারী স্থাপনায় তার জঙ্গি বাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে। এদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বামপন্থিরা, দ্বিজাতিতত্ত্ববাদী কিছু মুক্তিযোদ্ধা, হেফাজতের তাত্ত্বিক বাম বুদ্ধিজীবীরা। এরা সকলেই এখন ইসলামী শক্তি। এই শক্তির বিরুদ্ধে যারা তাদের পরিচয় কি হিসেবে ট্যাগানো হবে? ইসলাম বিরোধী! আওয়ামী লীগ তাই সামনে ইসলামের সঙ্গে লড়বে। ধর্মনিরপেক্ষতা, ৭২ সংবিধানের জন্য তাদেরকে হিন্দু ভারতের দল বলে বিরোধীতা আগে প্রচার করত। সেখান থেকে বেরিয়ে সহি ইসলামিক দল হতে গিয়ে কওমি জঙ্গিদের সঙ্গে নিয়েছিলো। বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করে না দিলে হয়ত নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিটা চলত। তাতে পাঁচ বছর দশ বছর বাদে একবার করে ক্ষমতায় আসা যেত। এখন কি হবে? মাহফিল পুলিশ দিয়ে বন্ধ করে দিলে বলবে ইসলামের উপর আঘাত করা হচ্ছে! সৌদি বড় আব্বারা ফোন করে সরকারকে চাপ দিবে। ওআইসিতে হৈ চৈ পড়ে যাবে। কারণ তলে তলে সবাই জঙ্গি ইসলামকেই সত্য বলে মানে। ইসলামী হুকুমত কায়েমে সশস্ত্র জিহাদের যে বিধান সেটাকে কোন বিশ্বাসী মুসলমান অস্বীকার করলে সে কাফের হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগকে তাই একদিন বিএনপিকে রাজনীতি করতে না দেয়ার জন্য আফসোস করতে হবে।
#সুষুপ্ত_পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................