কাশ্মীরের পন্ডিতরা কেন নিজভূমি হারিয়েছিল

কাশ্মীরের পন্ডিতরা কেন নিজভূমি হারিয়েছিল ১
---------------------------------------------------------
আজাদ কাশ্মীরের আন্দোলনকারী শান্তিকামী মুসলমানদের জন্য বিশ্বব্যাপী মডারেটদের হৃদয় ভেঙে যায়, চোখ ভিজে ওঠে জলে! আদৌ কি মুসলমানরা কাশ্মীরের ভূমিপুত্র? ইতিহাস কি বলে? সাদাকে সাদা আর কালকে কালো বলতে বা দেখতে বাঁধা কোথায়? কাশ্মীরে ইসলাম এলো কিভাবে ? যথারীতি বিশ্বব্যাপী মডারেটদের সেই এক দাবি: 'সূফীদের শান্তিপূর্ণ সহনশীল প্রচারের মাধ্যমে কাশ্মীরে ইসলাম এসেছিল।' তার সাথে অবশ্যই পৃথিবী ব্যাপী শান্তিপূর্ণভাবে ইসলাম প্রচারের জন্য সর্বজনীনভাবে সূফীদেরকে কৃতিত্ব দেওয়া !
কাশ্মীর তথা বিশ্বব্যাপী সূফীদের শান্তিপূর্ণ প্রচারের মাধ্যমে ইসলামেরে প্রসার – এইটা মুসলিম এবং অমুসলিম পণ্ডিতদের মধ্যে পূর্ণতায় স্বীকৃত।
আদতেই কি সত্য এটা? আসুন একটু খতিয়ে দেখি:

১৩৭১ অথবা ১৩৮১ সালের দিকে বিখ্যাত সূফী দরবেশ সাঈদ আলী হামদানী কাশ্মীরে আসে, এবং প্রথমেই একটা ছোট মন্দির ভেঙে সেই জায়গার উপর তার খানকা (আস্তানা বা আশ্রম) স্থাপন করে (Baharistan, p. 36)। এই সময়ে কাশ্মীরের সহনশীল হিন্দু সংস্কৃতিতে সুলতান থেকে কাজী পর্যন্ত সমাজের সকল মুসলমানরা প্রভাবিত ছিল । (Baharistan, p. 37) । সূফী দরবেশ সাঈদ হামদানী কাশ্মীরী মুসলমানদের এই প্রভাব দূর করে গোঁড়া ইসলাম প্রবর্তনের চেষ্টা করে এবং ব্যর্থ হয়ে চলে যায়। তার পুত্র আমীর সাঈদ মুহামমদ বিখ্যাত প্রতিমা ধ্বংসকারী সুলতান সিকান্দারের শাসনকালে কাশ্মীরে আসে ও সুলতান সিকান্দারকে ইসলামী আইন কার্যকর করার কাজে লাগায় । কাশ্মীর থেকে মূর্তিপূজা এবং পূজারীদের নিশ্চিহ্ন জন্য সিকান্দার এবং সূফী সাধক সাঈদ মুহামমদ হাত মেলায় ।

দিল্লীর সুলতানের একজন ঐতিহাসিক মুহামমদ ফারিশতার লেখাতে পাওয়া যায়: (History of the Rise of the Mahomedan Power in India, Vol. 1V. 1997, imprint, p. 268) “কাশ্মীরে মুসলমান ছাড়া অন্য কোন ধর্মের অনুসারীর বসবাস বেআইনী ঘোষণা ক’রে; এবং তিনি চান যাতে কেউ কপালে কোন চিহ্ন না দেয়। …. সবশেষে তিনি সকল স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত প্রতিমা ভাঙ্গার এবং সেগুলি গলিয়ে ধাতব মুদ্রায় পরিণত করার উপর জোর দেন। অনেক ব্রাহ্মণ তাদের ধর্ম অথবা দেশ ত্যাগের পরিবর্তে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। কেউ কেউ বাসভূমি ত্যাগ করে দেশান্তরী হন, কেউ কেউ বিতাড়নের শাস্তি এড়ানোর জন্য মুসলমান হন। ব্রাহ্মণরা দেশান্তরী হলে সিকান্দার কাশ্মীরের সকল মন্দির ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। কাশ্মীরের সকল প্রতিমা ধ্বংস করে তিনি ’প্রতিমা ধ্বংসকারী’ এই উপাধি অর্জন করেন।”

HM Chaudurah-এরTarikh-i-Kashmir বই বলছে: “অবিশ্বাসীদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস সাধনের কাজে অবিরামভাবে ব্যস্ত ছিলেন এবং অধিকাংশ মন্দির ধ্বংস করেছিলেন”(Trans. Razia Bano, Delhi, 1991, p. 55)। Baharistan-i-Shahii-এর গর্বিত লেখক লিখছে: “ এই ভূমির বাসিন্দাদের বিবেকের আয়না থেকে নাস্তিকতা এবং সত্য ধর্মে অবিশ্বাসের চিহ্ন পর্যন্ত মুছে ফেলার কৃতিত্ব সূফী দরবেশ সাঈদ মুহামমদের" ( পৃঃ ৩৭)। সিকান্দারের ছেলে আমীর খান (আকা আল্লী শাহ্‌) কাশ্মীরে হিন্দু নিধন জারি রাখে । ঐতিহাসিক মুহামমদ ফারিশতা লিখছে: “এরপরেও যে সামান্য কিছু সংখ্যক ব্রাহ্মণ তাদের স্ব-ধর্মে অটল ছিলেন তাদেরকে নির্যাতন করেন এবং যারা ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন তাদের সকলকে হত্যা করেন। এরপরেও যারা কাশ্মীরে ছিলেন তাদের সকলকেই সেই রাজ্য থেকে বিতাড়ন করেন” ।

সেদিনের হানাদার আজকের কাশ্মীরের ভূমিপুত্র হয়ে উঠেছে আর কাশ্মীরের স্বাধীনতা আন্দোলন নামক ইসলামী সন্ত্রাসের ঐতিহ্য এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরের পর্বে বাকিটুকু জানবো ।

(চলবে)

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted