এক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র জানতে চাইলো, ‘আগামীতে এই উপমহাদেশ অখণ্ড হবে তো’?

অখণ্ড উপমহাদেশ

এক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র জানতে চাইলো,
‘আগামীতে এই উপমহাদেশ অখণ্ড হবে তো’?

বললাম - কোথায় খণ্ডিত হয়ে আছে? পাকিস্তানের পাখি কি ভারতের আকাশে উড়ে আসে না? চীনের হিমালয়ের রঙ কি আলাদা? বাংলাদেশের বাদুড় কি ভারতের মশা খায় না? শ্রীলঙ্কার সৈকত ছোঁয়া সমুদ্রের জল কি বিবেকানন্দ রকের পা ধুয়ে দেয় না? তিব্বতের বাতাস কি লাদাখে বয় না? শুধু এই উপমহাদেশ কেন? এই পৃথিবী, এই গোটা বিশ্ব চরাচর কোথাও কিছু কি সত্যিই খণ্ডিত? এই ব্রহ্মাণ্ড যেন এক মহা আলিঙ্গন। 

যুবক - না, আমি ঠিক সেই অর্থে বলছি না। 

বললাম - আমি জানি তুমি কি অর্থে বলছো। খণ্ডিত কে? কারা? মানুষের মন। আমরা চেতনায় খণ্ডিত হয়ে আছি। এই উপমহাদেশের কি হবে, সেটা কালের উপর ছেড়ে দাও। 

তোমার নিজের চেতনায় অখণ্ডতা এসেছে তো? তুমি কিরকম ছবি মনে মনে কল্পনা করেছ? কয়েকটা নেতা নেত্রী মিলে দর কষাকষি করবে, কিছু সেনা ও সন্ত্রাসবাদীর মধ্যে যুদ্ধ হবে আর শেষে এই পুরো উপমহাদেশে ভারতের পতাকা উড়তে আরম্ভ করবে? আর তুমি অনলাইনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার ফাঁকে এক ঝলক টিভি খুলে দেখে নেবে যে পালাবদল হয়ে গেল? ঢাকা দিল্লি ইসলামাবাদের রাস্তায় বিজয় মিছিল বেরিয়েছে আর বাইডেন, পুতিন ও জি জিয়াপিং উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিচ্ছেন? 

যে আগামীর তুমি স্বপ্ন দেখছ, সেই আগামীটা তুমি নিজে আজ হবে না? তোমার কিছু করার নেই? বা আমার? অথবা এখানে যারা বসে আছে, তাদের? বাঙালী মায়েরা দেখবে নিজের চব্বিশ বছরের ছেলেটিকে দেখিয়ে বলে, ‘এবার ভাবছি ছেলের বিয়ে দিয়ে দেব’। সবই অন্যরা করে দেবে, আমরা শুধু beneficiary হয়ে থাকবো। যেন ভারতমাতা একদিন বলবেন, ‘অনেক হয়েছে, এত বায়না করছিস যখন, তবে এবার অখণ্ড হয়ে যাই। তোরা সব ভাই ভাই হয়ে যা, দুধে ভাতে থাক। এর পর বিশ্বগুরু হতে হবে না’?

কিরকম ধরনের অখণ্ডতা চাইছ তুমি? যেমন ধর, অনেকে চাইছে অখণ্ড বাংলা, কিন্তু ভারত থেকে পৃথক। দুই বাংলা এক হলেই কিন্তু এই বঙ্গদেশ মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে। অনেকেই তখন হয়ত চাইবে ইসলামিক রাষ্ট্র, শরিয়তি আইন। তোমার অখণ্ড চেতনায় এই সম্ভাবনাটুকু উঁকি মেরেছে তো? আবার অপরদিকে আছে অবিভাজিত উপমহাদেশের ভবিতব্য নির্ধারণের দাওয়াই, ‘হিন্দু রাষ্ট্র’। যে হিন্দুত্বে আবার আমিষ ভোজন পাপ, ‘রাম’ ছাড়া নাম নেই, বীরত্বের চালচিত্রে মাতৃপূজার মর্যাদা নেই, দুর্গা পূজার ঘাড়ে নবরাত্রি চাপিয়ে দেওয়া হয় ও একদা গান্ধী বিরোধীরা যেখানে রাতারাতি ‘জনক’ পূজার প্রধান পুরোহিত হয়ে ওঠেন। সেই অখণ্ডতার জন্যও তুমি প্রস্তুত তো?

একমাত্র আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে সেই ঐক্য ও অখণ্ডতার বাদী সুর বেজে চলেছে। যার মূলে রয়েছে সনাতন ধর্মবোধ। কোন বিশেষ ধর্মীয় মতবাদ নয়। তাই আমি তোমার কাছে এই প্রশ্নগুলো রেখেছি।  একদিন যে বাঙালী ‘ভারতবোধ’ জাগরণের নেতৃত্ব দিয়েছিল, সেই বাঙালীকেই আবার জাগতে হবে আগামীর অখণ্ডতার দিশা দেখাতে। এ এক অস্তিত্ব রক্ষার দায়। পারলে তোমরাই পারবে। না পারলে, যদি ভারতকে আবার নতজানু হতে হয় তৈরি করা মিথ্যার পদতলে, তবে বিশ্বসভ্যতার হৃদ্‌স্পন্দনটাই চিরকালের মত থেমে যাবে। 

তবে মহাকালের নির্ঘন্টে তেমন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। শুধু তোমার আমার জাগরণের অপেক্ষা। 

✒️- জয়দীপ

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted