বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক ঘটনা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি ভিডিও বানিয়ে ভোটে প্রচার চালাচ্ছে। কাজটা ভালো কি মন্দ সেটা ছাপিয়ে একপক্ষ বাংলাদেশের ঘটনা প্রচারে চটে গেছেন। মানে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক ঘটনা প্রচার করা যাবে না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কি ফিলিস্তিনিদের জন্য মিছিল বের হয় না? বাংলাদেশে যারা মোদীকে ভারতীয় মুসলিম হত্যাকারী বিধায় তাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলেছিলো, এখন তারাও চটে গেছে বাংলাদেশে বিষয় নিয়ে ভারতীয় নির্বাচনে প্রচার হবে কেন? মানে মোদী গুজরাটের কসাই কারণ সে মুসলিম ভাইদের মেরেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলাকারী কসাইদের নিয়ে কথা বলাটা তাদের অনধিকার চর্চা! মোদীর বাংলাদেশ সফরেরে পক্ষে যারা ছিলেন তারাও কেউ তখন বলেনি, মোদী তার দেশে কাকে মেরেছে কি করেছে সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। তারা বলেছিলেন, আমার ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি, ব্যক্তি মোদীকে নয়। মানে মোদী মুসলিম হত্যাকারী সেটা ঠিকই আছে এবং সেটা একান্তই ভারতীয়দের বিষয় নয়, বিষয়টা মুসলিমদের। সেই তারাই বলছে বাংলাদেশে হিন্দুদের কি হয়েছিলো সেটা নিয়ে পাশের দেশে হৈ চৈ হবে কেন?
সিরাজগঞ্জে যে নারকীয় ঘটনা ঘটেছিলো সেটা নিয়ে বাংলাদেশে কেউ উপন্যাস লিখেনি এজন্য নয় যে ৯০-এর বাবরী মসজিদ দাঙ্গাকে কেন্দ্র করে তসলিমা নাসরিন 'লজ্জ্বা' উপন্যাস লিখে দেশান্তরিত হয়েছিলেন সেই ভয়ে, লিখেননি কারণ হিন্দুদের উপর ম্যাসাকার নিয়ে লিখলে বাংলাদেশের মুসলমানদের খারাপভাবে উপস্থাপন করা হবে। বাংলাদেশকে ইসলামিক জঙ্গিদেশ হিসেবে দেখানো হবে। তাই সেসব ঘটনা যখন প্রতিবেশী দেশের সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো প্রচার করে তখন সেটার পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র তারা দেখতে পায়। তসলিমা নাসরিনের লজ্জ্বা বিজেপি নিজেরা ছাপিয়ে বিলি করেছিলো। তাতেই বিজেপির টাকা খেয়েছিলো তসলিমা। এগুলো বলেছিলো বাংলাদেশের প্রগতিশীলরা। তাহলে জয়া চ্যাট্টার্জীর বই যখন জামাত শিবির বিলি করে, ইসলামিক বামপন্থিরা তাদের পাঠচক্রের সিলেবাসের প্রথমেই রাখে তাহলে কি ধরে নিতে হবে জয়া চ্যাটার্জি ইসলামিকদের টাকা খেয়ে বই লিখেছিলেন?
পূর্ণিমা শীলের ঘটনা নাম ছবি বিক্রি করছে বিজেপি। হিন্দু জাতীয়তাবাদের ছায়াতলে না আসলে যে এভাবেই হিন্দুরা মার খাবে সেটাই তারা বুঝাচ্ছে। আসলে সবটাই রাজনীতি। এসব বেচে ক্ষমতায় যেতেই তারা বাংলাদেশের ঘটনা ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের প্রগিতিশীলরাও বলছে, ভারতে কি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে না? মানে সাম্প্রদায়িক রেপ আর জেনারেল রেপকে একাকার করে ফেলা হচ্ছে। পূর্ণিমা শীলকে বাংলাদেশের প্রগতিশীলরাও বেচে খেয়েছে! মেযেটি তাই দুঃখ করে বলেছে, “এখন আমি প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার। এক বার ধর্ষিতা হয়েছি বাস্তবে। এখন বার বার রাজনীতির স্বার্থে ধর্ষিতা হচ্ছি। কোনও একটা বিতর্ক হলেই এ ভাবে ধর্ষিতা হই।”
আসলে “অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিঅলাদের” খেয়ে পরে বাঁচার জন্যই দরকার সাম্প্রদায়িকতা। আবার সাম্প্রদায়িকতাদের জন্যও দরকার সাম্প্রদায়িকতা। মাঝখানে যারা রাজনীতি বুঝে না, মানবিক ও অসম্প্রদায়িকতার স্থান থেকে ঘটনাগুলো লিখে বা ছবি তুলে তারাই দুপক্ষের হাতে আক্রান্ত হয়। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে যারা সরব সোচ্চার তারা সকলেই নাকি বিজেপির টাকায় ভাড়ায় খাটে! এই প্রশ্ন কেউ করে না, তারা নিজেরা পূর্ণিমা শীলকে নিয়ে কিছু লিখেননি কাদের ভাড়ায় খেটে?
#সুষুপ্ত_পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................