রোজা কি শরীরের জন্য উপকারী?
......................................................
রোজা কি মানবদেহের জন্য উপকারী? রমজান মাস আসলেই এক শ্রেণীর ডাক্তারকে দেখবেন টিভিতে বড় গলা করে বলতে, রোজা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত এটা মানুষের শরীরকে ভাল রাখে। শুধু তাই না, পৃথিবীর সব বিশ্বাসী মুসলমান বিশ্বাস করে রোজা মানুষের শরীরের জন্য উপকারী। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, রোজা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক!
এক্ষেত্রে মুসলিম ডাক্তার, লেকচারাররা একটা চিটিংবাজীর আশ্রয় নেন। তারা মেডিকেল Fasting বা উপবাসকে ইসলামী রোজা বলে চালিয়ে দেন। বৈজ্ঞানিক যত রেফারেন্স তার সবই মেডিকেল ফাস্টিং সংক্রান্ত। এসব দেখিয়ে সাধারণ মুসলমানদের বুঝানো হয় রোজা হচ্ছে মানবদেহের জন্য উপকারী। এতে কোন ক্ষতিকার বিষয় নেই। এইসব ব্যক্তিবর্গ রোজাকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত করতে গিয়ে বলেন, সায়েন্স প্রমাণ পেয়েছে মানুষ যদি দীর্ঘক্ষণ ধরে না খেয়ে থাকে তাহলে সেটা তার শরীরের জন্য উপকারী। এই জায়গাটাতেই বাটপারীটা। ‘চিকিৎসা বিজ্ঞানের রোজার’ নিয়ম হচ্ছে যখনি পিপাসা লাগবে তখনই পানি পান করতে হবে। কিছুতে শরীর পানিশূন্য করা যাবে না। এছাড়া ফলের জুস, ফল খাওয়া যাবে। একেবারেই কিছু না খেয়ে থাকা মানে শরীরকে ভয়ানকভাবে পানিশূন্য করে তোলা। যে কাজটি ইসলামী রোজা করে থাকে। এক মাস রোজা রাখতে গিয়ে একজন মুসলমান তার শরীরকে একমাস ধরে তিলে তিলে ক্ষয় করে তুলেন। বিশেষত বয়স্ক মানুষদের জন্য রমজান মারাত্মক ক্ষতিকার একটি মাস। এই মাস রোজা তার জীবনী শক্তি নিঃশেষ করে দেয় যা তার জীবনের মেয়াদ কমাতেই সহায়তা করে। আরেকটা জিনিস বলে রাখা ভাল, মেডিকেল ফাস্টিং কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন নয়। এটি বিশেষ বিশেষ রোগীদের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা মাত্র। অর্থ্যাৎ নরমাল খাবার গ্রহণ না করে কেবল পানি, ফল খেয়েও শরীর ডেমেজ হয়ে যেতে পারে। হিন্দুদের উপবাস যেমন পানি ও ফল খাবার ব্যবস্থা আছে। এটিও স্বাস্থ্যহানীকর। আসল কথা হচ্ছে মানুষের জন্য স্বাভাবিক খাদ্য গ্রহণ না করে থাকা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি। কিন্তু রোজাকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত করতে জাপানি ডাক্তারের গবেষণা বলে যে নিউজ প্রচার করা হয় তা পুরোটাই ভুয়া। এরকম কো বৈজ্ঞানিক নোবল পাননি। আপনারা কষ্ট করে নেটে খোঁজ করে দেখতে পারেন।
টিভিতে দেখবেন টুপি মাথায় দিয়ে কোন কোন চিকিৎসক বলছেন, রোজা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত এটি মানুষের শরীরের জন্য উপকারী।… তারপরই তিনি শুরু করবেন রোজার মাসে আপনার পাকস্থলিকে ঠিক রাখতে, লিভারকে ঠান্ডা রাখতে কি কি খেতে হবে। সেহরি ও ইফতারে প্রচুর পানি পান করার পরামর্শ দিবে। আচ্ছা, রোজা যদি এতই উপকারী হবে তাহলে শরীরকে ঠিক রাখতে এইসব ব্যবস্থাপত্র মাথায় রাখতে হবে কেন? রোজা যদি শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টিই করে তাহলে সেটা কি করে শরীরের জন্য উপকারী হয়?
রোজার মাসে রোজাদার মুসলমানের মুখের সামনে দিয়ে যাওয়াই কঠিন হয়ে পড়ে। তীব্র দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয় মুখে ব্যাকটিরিয়ার আক্রমনে। দাঁত মাজতে না পারার বিধান, দীর্ঘক্ষণ পাকস্থলিতে খাদ্য না পড়ার কারণে মুখ দিয়ে বিশ্রী গন্ধ বের হতে থাকে। রোজা যদি এতই উপকারী হয় তাহলে এই অপকারীতাটা কি করে তৈরি হলো? আল্লাহ কি রোজাদারদের এ থেকে রেহাই দিতে পারতেন না? রোজাদারের মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হবে এতে ঈমানের কোন পরীক্ষা নেই। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে না পেরে আল্লাহ বললেন বেহেস্তে রোজাদারের মুখ থেকে এর বিনিময়ে মেশকাতের সুঘ্রাণ বের হবে!
গর্ভবতী নারীকে বহু পরিবার রোজা রাখতে বাধ্য করে। এক্ষেত্রে ইসলামী বিধান কিছুটা শিথিল। রাখতে না পারলে পরে কাজা রোজা রেখে আদায় করতে হবে। তবে গর্ভবতী রোজা রাখতে চাইলে কোন বাধা নেই। সারাদিন যদি কোন গর্ভবতী নারী রোজা রাখে তাহলে তার পেটের শিশুও উপোস করে বসে থাকবে। এতে শিশু মায়ের পেটে প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হবে যা কিনা শিশুর বেড়ে উঠাকে ব্যহত করে। নির্মম আরেকটি দিক হচ্ছে, মুসলিম ডাক্তারটা ধর্ম অবমাননার ভয়ে প্রসূতি মাকে অনেক সময় রোজা রাখতে নিষধ করতে দ্বিধায় ভোগেন।
শ্রমজীবী মানুষের জন্যও রোজা ফরজ করা হয়েছে। যারা রিকশা চালান, মাটি কাটেন, কৃষি কাজ করেন- মোট কথা ভারি কাজ করেন তাদের জন্যও রোজা ফরজ। একজন রিকশাওয়ালা যদি এই একমাস রোজা রেখে রিকশা চালান তার বেঁচে থাকার সম্ভবনা খুব কম। না হলেও তার জীবনী শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে অকালে। ইসলাম বিশেষজ্ঞদের এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা মত দিয়েছিলেন, এ ক্ষেত্রে এই এক মাস পেশা বদল করে অপেক্ষাকৃত কম কষ্টকর পেশা বেছে নিতে হবে। কিন্তু কিছুতে রোজা ছাড়া যাবে না…।
রোজা যদি শরীরের জন্য উপকারী হবে তাহলে এই ফতোয়া কেন দিতে হয়?
#সুষুপ্ত_পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................