ইজরায়েলের অর্থনীতির মেরুদণ্ড শক্ত হয়ে উঠল।

#ইজরায়েল নিয়ে চারিদিকে চর্চা চলছে এখন
পক্ষে বা বিপক্ষে। মানুষেরা ইজরায়েলের পক্ষে। কমিউনিস্ট আর তেনারা বিপক্ষে। নেহাতই এখন সিপিএমের দুরবস্থা চলছে‚ নয়তো একটু বয়স বেশী যাদের‚ মানে ৩৪ বছরের শাসন যারা চোখে দেখেছে তারা জানে যে অন্য সময় হলে এতক্ষণে পাড়ায় পাড়ায় লাল ঝান্ডা হাতে মিছিল বেরিয়ে যেত ইসরায়েলের কালো হাত‚ ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও বলে। ১৯৯৬ সালে বিদ্যাসাগর কলেজে পোস্টার পড়েছিল জর্জ বুশ হুশিয়ার‚ SFI তোমার উপরে নজর রাখছে। একফোঁটাও বাড়িয়ে বলছি না। বিশ্বাস না হলে ওই সময় বিদ্যাসাগর কলেজে পড়ত এমন কারও কাছে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন যে কেউ।

আর এই একটু আগে একটা বাংলাদেশী নিউজ পোর্টালে দেখলাম খবর বার করেছে ভয় কাঁপছে ইজরায়েল‚ ফিলিস্তিনে (প্যালেস্টাইনে) যাওয়ার জন্যে তৈরী বাংলাদেশী সেনা। আজব দুনিয়া‚ নিয়ন্ত্রণ করার তো কেউ নেই‚ তাই যে যেমন ইচ্ছা আচরণ করে যায়। সে যাইহোক‚ যে যা ইচ্ছা করুকগে‚ এই ইজরায়েলময় আবহাওয়ায় আমি বরং ইজরায়েলের একটা গল্প বলি। উদ্যোক্তা ইজরায়েলের গল্প।

নব্বইয়ের দশক ছিলো ইজরায়েলের অর্থনীতির ইতিহাসে সবথেকে খারাপ সময়। ওই ১০ টা বছর প্রতিবছর প্রায় ১০০% মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছিলো সেখানে। অর্থনীতি নিয়ে ন্যূনতম ধারণা যাদের আছে তারা বুঝবেন যে ১০০% মুদ্রাস্ফীতি মানে কি সাঙ্ঘাতিক অবস্থা। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশ ছুঁয়েছে‚ অন্যদিকে বাজেটে ঘাটতি আর পাহাড়প্রমাণ ঋণের বোঝা তখন ইজরায়েলের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছে। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো ছিলো সোভিয়েতের পতন। সোভিয়েত ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে ৮ লক্ষ সোভিয়েত ইহুদি রিফিউজি হয়ে ইজরায়েলে আশ্রয় নেয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে দুনিয়ার যেকোনো প্রান্তে বসবাসকারী প্রত্যেক ইহুদিরই ইসরায়েলে বাস করার অধিকার রয়েছে
- প্রত্যাবর্তনের আইন, ধারা ১

আর তাদের ভরণপোষনের সম্পূর্ণ দায় পড়ে ইজরায়েল সরকারের ঘাড়ে। এছাড়া আশেপাশের বিভিন্ন নেকড়ে দেশ থেকে ক্রমাগত জঙ্গি আক্রমন আর তা ঠেকানোর জন্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক খাতে খরচ তো ছিলোই।

ফলে এই সময় ইজরায়েল তার নাগরিকদের খাওয়া পড়ার জন্যে হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে থাকত বিদেশী সাহায্যের দিকে। মানে যেসব ইহুদীরা বিদেশে কাজ করত তাদের পাঠানো টাকাপয়সার উপর। এই পরিস্থিতি নিশ্চয়ই বেশিদিন চলতে দেওয়া যায় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ইজরায়েল সরকার নজর দিলো কর্মসংস্থানের উপর। যে কিভাবে প্রতিটি ইজরায়েলীকে স্বাবলম্বী করে তোলা যায়। যাতে দেশের অর্থনৈতিক সংকট দূর হয়।

আর এই পরিপ্রেক্ষিতেই নেওয়া হয় যে মিশনের নাম তা হলো "ইয়জমা প্রোগ্রাম"! যার মূল লক্ষ্যই ছিলো ইজরায়েলের অর্থনীতির খোল নলচে বদলে দেওয়া।

কিন্তু সেটা কিভাবে?

প্রথমদিকে ইসরায়েল সরকার চেষ্টা করলো উদ্যোক্তারা বা সম্ভাব্য উদ্যোক্তারা যাতে নতুন নতুন উদ্যোগ নেয় তার জন্যে। কিন্তু দেশের মানুষের হাতে টাকাই নেই‚ নতুন কর্মসংস্থান তারা করবে কিভাবে? ফলে দেশের মানুষের উপর নির্ভর না করে সরকার নজর দিলো আন্তর্জাতিক বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর দিকে। শুরু হলো ‘ইয়জমা প্রোগ্রাম’ (יוזמה)। তবে কিনা সেই দেশে কোনো আঁতেল ছিলো না‚ সেটাই মঙ্গল। তাই কেউ আর কোম্পানির নাম শুনে দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বলে চেঁচামেচি করেনি। এই এখন ভারতে যেমন হচ্ছে আরকি।

হিব্রু ভাষায় ইয়জমার অর্থ হচ্ছে উদ্যোগ। এই পরিকল্পনার অধীনে ইজরায়েল সরকার ১০০ মিলিয়ন ডলারের ফান্ড তৈরি করে। তারপর তারা ঘোষণা করে যে কোনো বহিরাগত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির প্রতি ১২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পিছনে ইজরায়েল সরকার ৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।  বদলে সেই উদ্যোগের ৪০% মালিকানা সরকারের থাকবে। যদি এই উদ্যোগ থেকে লাভ হয়‚ কোম্পানিগুলো
সামান্য সুদসহ সরকারের দেয়া টাকা পরিশোধ করে সম্পূর্ণ কোম্পানির মালিক হয়ে যেতে পারবে। অর্থাৎ সেই ৮ মিলিয়ন ডলার সামান্য সুদে শোধ করতে পারলেই কোম্পানি সরকারি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হয়ে যাবে।  যেটা কিনা ছিলো বিনিয়োগকারীদের জন্য পুরোটাই লাভ। অন্যদিকে সরকার পাচ্ছে নতুন কোম্পানির দেওয়া ট্যাক্স আর কর্মসংস্থানের ফলে অর্জিত ট্যাক্স। আর তাছাড়া সরকারের উদ্দেশ্য তো নিজেদের লাভ ছিলো না‚ ছিলো দেশের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি‚ যা এর ফলে অবশ্যই পূরণ হবে।

ফলে কিছু সময়ের মধ্যেই আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো ইজরায়েলে বিনিয়োগ করার জন্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। সারা পৃথিবী থেকে অসংখ্য উদ্যোগপতি এসে ভিড় জমালো ইজরায়েলে। ইজরায়েল সরকারের এই মিশন যে কতটা সফল হয়েছিল তা বোঝানোর জন্যে একটা ছোট্ট তথ্য দিই‚ প্রথম আট বছরের মধ্যেই ফান্ডের সংখ্যা হয়ে গিয়েছিল ৫১৩! ফান্ডের টাকার সাথে পরিমানটা নিজেরাই গুন করে দেখে নিন।

 আর এই মিশনের ফলাফল? ইসরায়েলকে এখন বলা হয় উদ্যোক্তাদের রাজধানী। মাত্র ৮০ লক্ষের চেয়ে সামান্য বেশি জনসংখ্যার এই দেশে অবিশ্বাস্যভাবে ৪ হাজারেরও বেশি প্রযুক্তি কোম্পানি রয়েছে। সিসকো, পেপাল, মাইক্রোসফট, গুগল, ফেসবুক, অ্যাপল কিংবা ইনটেল - সব কোম্পানিরই গবেষণাগার আর কারখানা রয়েছে এখানে।
 আইবিএম, পেপাল, সিসকো, আমাজন, ফেসবুকসহ বড় বড় কোম্পানিগুলোর ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ সেক্টরে কাজ করার ফলে এবং প্রযুক্তি আমদানির ফলে যে অর্থ আয় হয়, তা ইসরায়েলের জিডিপির ১২.৫%!  পরিসংখ্যানুযায়ী, ইজরায়েলের প্রতিটি কোম্পানির প্রতিটি কর্মীর পিছনে প্রতি বছর ১৫০ মার্কিন ডলার করে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়ছে। বলা হয় যে এই মূহুর্তে এমন কোনো আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি নেই যা বিকশিত হতে কোনো ইজরায়েলীর হাত নেই। এছাড়া ইজরায়েল নিজেরা সামগ্রিকভাবে কোন জায়গায় আছে তাতো যে কেউ অনুমান করে নিতেই পারেন। আর সামগ্রিক উন্নয়নের পেছনে মেরুদণ্ড হিসাবে সবসময়ই থাকে অর্থনৈতিক উন্নতি। :-) 

আর এই সবই সম্ভব হয়েছে সেই বিদেশী কোম্পানির হাতে দেশ বিক্রি করে দেওয়া ইয়জমা প্রোগ্রামের সাহায্যেই।

লিখেছেন Souvik Dutta

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted