ঘোরীর পরবর্তী ভারত।

“ঘোরীর পরবর্তী ভারত”
ঘোরীর ভারত আক্রমনএর এক মাত্র উদ্দেশ্য ছিলো ভারতের রাজাদের পরাজিত করে তাদের ধন সম্পত্তি লুট করা। পৃথ্বীরাজের সঙ্গে দুবার যুদ্ধ হয় এবং দ্বিতীয়বার রাতের অন্ধকারে আক্রমন করে অপ্রস্তুত হিন্দু সেনাদের পরাজিত করতে খুব একটা অসুবিধা তার হয়নি।
ঘুর রাজ্য গজনীর পাশেই। গজনীর সুলতান মাহমুদ তখন মৃত। তার রাজ্য এবং নিজের রাজ্য নিয়ে ঘোরী ওই অঞ্চলে বেশ শক্তিশালী ছিলো। কিন্তু বর্বরেরা কখনো নিজের যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে না। ঘোরী অনেক বার আসে। ধীরে ধীরে নানা অঞ্চল জয় করে দিল্লির দোড় গোড়ায় এসে উপস্থিত হয়।
পৃথ্বীরাজের পরাজয়ের পর ঘোরীর রাজ্য ভারতের একেবারে মুল ভুখন্ড অবধি বিস্তৃত হয়। ঘোরী কোনোদিন ভারতে বাস করেনি। লুটপাট করে আবার ফিরে যেতো তার নিজের রাজ্য ‘ঘুর’ এ। ঘোরীর মৃত্যুর পর তার বিশ্বস্ত গোলাম সেনাপতি কুতুবুদ্দিন আইবেক ঘোরীর ভারতীয় রাজ্যের অধিপতি হয় । শুরু হয় ‘সুলতানী বংশ”। 
১২০৬ সালে কুতুবুদ্দিন সুলতান হয়। তার বংশকে বলে “মামলুক বংশ”, অর্থ্যাত “দাস বংশ”। পরপর পাচটি বংশ দিল্লী শাসন করে প্রায় ৩২০ বছর ধরে। দাস বংশ, খিলজী বংশ, তুঘলক বংশ, সৈয়দ বংশ এবং পরিশেষে ‘লোধী বংশ”। ১২০৬ সাল থেকে ১৫২৬ সাল অবধি। এই সুলতানী বংশ গুলির ইতিহাস শুধু রাজনৈতিক হত্যা, হিন্দু প্রজাদের ওপরে নির্মম অত্যাচার এবং জোর করে ধর্মান্তরিত করার ইতিহাস। সুলতানী রাজ্য বর্তমান পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশ নিয়ে গঠিত হয়েছিলো বাদ ছিলো শুধু দাক্ষিনাত্যের এবং উড়িষ্যার কিছু অংশ। 

দাক্ষিনাত্যে ছিলো “বিজয়নগর সাম্রাজ্য”, উড়িষ্যায় “কলিংগ রাজা”। 

দিল্লীর সুলতানদের মধ্যে বিশেষ করে উল্লেক করতে হয় কুতুবুদ্দিন আইবেক, আলাউদ্দিন খলজী, মোহাম্মদ বিন তুঘলখ। আমাদের জানা ইতিহাসে এদের বর্বরতা, হিন্দু প্রজাদের ওপর নির্মম অত্যচার, অপমান  এবং সেই সঙ্গে ধর্মান্তকরনের কথা একদমই বলা হয় না। ৩২০ বছর কম সময় নয়। ‘জিজিয়া কর’- হিন্দুদের দিতে হতো হিন্দু হয়ে থাকার জন্য। একমাত্র সেই করের চাপে দলে দলে নিম্ন বর্গের এবং গরীব চাষী শ্রেনী হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে, জমিজমা সব ভাগ করে দেওয়া হয় মুসলিম দের হিন্দুরা হয় খাজনা দেওয়া চাষী, নিজের পিতৃ পুরুষের ভুমি হয়ে যায় হাতছাড়া। এর সঙ্গে আমদানী হয় আরব, মধ্য এশিয়া (বুখারার বুখারী, পীরজাদা ইত্যাদি) আফগানিস্তান থেকে ‘সুফী- দরবেশ’। এদের দেওয়া হয় হাজার হাজার একর জমি জায়গা। এরা ‘শান্তির বানী’ আওড়াতে আওড়াতে হিন্দুদের ধর্ম পরিবর্তন করিয়ে নেয়। ‘জিজিয়া কর’ দিতে হলো না, জমি জমা চাষবাস করে বাঁচা গেলো। খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তি (আজমীর শরিফ)  থেকে শুরু করে বাংলায় খান জাহান আলীর নিয়ে আসা দরবেশ। হিন্দুদের ছলে বলে কৌশলে শেষ করে দেবার এই প্রচেষ্টা অতি কৌশলী এবং মানবতার ইতিহাসে অদৃষ্ট পুর্ব, অশ্রুতপুর্ব এবং আর কোনো দ্বিতীয় উদাহরন সারা বিশে নেই। 

এই বর্বর সুলতানদের বিরুদ্ধে হিন্দুরা সংগ্রাম করেনি তা নয়। দাক্ষিনাত্যে  (বর্তমান কেরালা, তামিলনাডু, অন্ধ্রপ্রদেশ, হায়দ্রবাদ, কর্নাটক জুড়ে গড়ে উঠেছিলো এক বিশাল সাম্রাজ্য। নাম “বিজয় নগর সাম্রাজ্য। শ্রী কৃষ্ণের ‘যাদব গোষ্টি’র এক নেতা হরিহরা এই সাম্রাজ্যের পত্তন করেন। এই সাম্রাজ্যের রাজারা ক্রমাগত নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ‘সুলতানী’ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। কিন্তু পরিশেষে দিল্লীর মুখ্য সুলতান তার অধঃস্তন সুলতানদের নিয়ে এক যোগে আক্রমন কর এই বিজয়নগর সাম্রাজ্য। তার  পৈশাচিক তীব্রতা সামাল দিতে পারেনি “হিন্দু মানবিকতা”। পরিশেষে শুধু মাত্র কলিংগ রাজ্য বাদ দিয়ে সারা ভারত এই সুলতানদের অধীনে আসে। 

অনেকদিন আগে মহামতি চানক্য বলেছিলেন, কোনো দেশ কোনো জাতিকে নিজের অধীনে রাখার উপায় সৈন্য বল নয়, ধ্বংস করে দিতে হয় তাদের শিক্ষা সংষ্কৃতি এবং তাদের মধ্যে ‘হীনমন্যতা” বোধ জাগ্রত করাই আসল উপায়।  
বৈদিক হিন্দুদের ক্ষেত্রে ঠিক তাই করেছিলো ওই ‘তুর্কী দাসেরা, খিলজীরা, আবদালীরা, তুঘলকেরা, লোধীরা। আজো তাই তাদের নামে দিল্লীর এবং ভারতের নানা স্থানে রাস্তা ঘাট, সৌধ, উদ্যান পার্ক ইত্যাদির নাম করন হয়। সুলতানদের ইতিহাস এবং অত্যচারের কাহিনী বলে শষ করা যাবে না। শুধুমাত্র নীচের এই চার্ট টা দিলাম। এটা বোঝার জন্য যে সুলতানী আমলে হিন্দুদের কোন কোন সৌধ এবং শিক্ষা প্রতিষ্টান ধংস করা হয়েছে।

Temple desecration during Delhi Sultanate period, a list prepared by Richard Eaton in Temple Desecration and Indo-Muslim States

Sultan / Agent Dynasty/ Years/ Temple Sites Destroyed
Muhammad Ghori, Qutb al-Din Aibak Mamluk 1193-1290= Ajmer, Samana, Kuhram, Delhi, Kol, Varanasi

Muhammad bin Bakhtiyar Khalji, Shams ud-Din Iltumish, Jalal ud-Din Firuz Khalji, Ala ud-Din Khalji, Malik Kafur Mamluk and Khalji 1290-1320 = Nalanda, Odantapuri, Vikramashila, Bhilsa, Ujjain, Jhain, Vijapur, Devagiri, Somnath, Chidambaram, Madurai

Ulugh Khan, Firuz Shah Tughlaq, Raja Nahar Khan, Muzaffar Khan Khalji and Tughlaq 1320-1395 =
Somnath, Warangal, Bodhan, Pillalamarri, Puri, Sainthali, 

Sikandar, Muzaffar Shah, Ahmad Shah, Mahmud Sayyid 1400-1442 Paraspur, Bijbehara, Tripuresvara, Idar, Diu, Manvi, Sidhpur, Delwara, Kumbhalmer 

Suhrab, Begdha, Bahmani, Khalil Shah, Khawwas Khan, Sikandar Lodi, Ibrahim Lodi =
Lodi 1457-1518= Mandalgarh, Malan, Dwarka, Kondapalle, Kanchi, Amod, Nagarkot, Utgir, Narwar, Gwalior

এর পর আর কি বলার আছে ??????

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted