হিন্দু রবীন্দ্রনাথ ও মোল্লাতান্ত্রিক বাঙালি মুসলমান।

হিন্দু রবীন্দ্রনাথ ও মোল্লাতান্ত্রিক বাঙালি মুসলমান :
------------------------------------------------------
জিন্নাহ বলেছিল: 'পাকিস্তান হ্যাজ কাম টু স্টে।' পাকিস্তানের জন্মের এক বছরের মধ্যে, ১৯৪৮ পরিষ্কার হয়েগেছিলো যে, পূর্বাংশে এই রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ দোলাচলে । ভাষা আন্দোলন আরেক ধাপ এগিয়ে প্রায় ঘোষনা দিয়েছিল: 'পূর্বাংশে স্টে করছে না !' পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালির রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে তাদের অবস্থানে এই রাজনৈতিক দোলাচলের প্রমান মেলে ।


রবীন্দ্রনাথের পরিবারের অনেকের পোশাক বা তাঁদের পরিবারের ফার্সি ও মোগল সংস্কৃতি নিয়ে চর্চা, রবীন্দ্রনাথকে সুফি ঘরানার মানুষ বলে একরকম পরিচিতি দিয়ে পাকিস্তানিদের কাছে একটা সময় অনেকাংশে গ্রহণীয় করে তুলেছিল।
পাকিস্তান সৃষ্টির পর নির্বাচিত বুদ্ধিজীবী মহলে আওয়াজ উঠেছিল: 'তামুদ্দনিক প্রয়োজনে দরকার হলে রবীন্দ্রনাথকেও বর্জন করা হবে ।' পঁয়ষট্টির পাক-ভারত যুদ্ধের পর পাকিস্তান কাউন্সিলের ঢাকা কেন্দ্রে মুজিবুর রহমান খাঁ বলেছিল : “রবীন্দ্রনাথ যে ‘হিন্দু’ সংস্কৃতির ধারক ও বাহক সেটা তাঁর জন্য স্বাভাবিক, একই কারণে আমাদেরও নিজেদের অর্থাৎ মুসলিম সংস্কৃতির চর্চা করতে হবে।” এই ছিল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ববাংলার মুসলমানের একাংশের রবীন্দ্র বিরোধিতার শুরু । 'গোরা' উপন্যাস থেকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে রবীন্দ্রনাথের মুসলমান বিরোধিতার একটি বিচ্ছিন উক্তি তখন তুলে ধরা হয়েছিল :

'‘ভালো মানুষি ধর্ম নয়। তোমাদের মহম্মদ সে কথা জানতেন, তাই তিনি ভালো মানুষ সেজে ধর্ম প্রচার করেননি।’ ---বাঙালি মুসলমান পাঠককে বিভ্রান্ত করার জন্য খাসা একটা প্রয়াস !

পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি মুসলমানের ধর্মীয় গন্ডিতে বদ্ধ মনন প্রকিত পরিপ্রেক্ষিতে দৃষ্টিপাত করতে পারল না যেখানে সত্য হলো : এক বৃদ্ধ মুসলমান সবজি-রুটি ইত্যাদি নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। কোনো এক চেন পরা বাবুর মনে হলো যে, এই ব্যক্তি তার সোজা পথে যাওয়ার বাধা। বাবু তাকে ‘ড্যাম-শুওর’ গালি দিয়ে, তার জিনিসপত্র নষ্ট করে এবং তাকে চাবুক মেরে হন হন করে চলে গেল ! অতঃপর গোরা (গৌরমোহন) তার নষ্ট হওয়া সবকিছু কুড়িয়ে নিয়ে বলল: ‘তুমি কথাটি না বলে যে অপমান সহ্য করলে আল্লা তোমাকে এ জন্য মাপ করবেন না।’ ‘মুসলমান কহিল, ‘যে দোষী আল্লা তাকেই শাস্তি দেবেন, আমাকে কেন দেবেন?’ উত্তরে গোরা বলল: ‘যে সহ্য করে সেও দোষী। কেননা সে জগতে অন্যায়ের সৃষ্টি করে।’ তারপরই এসেছিল ‘ভালো মানুষি ধর্ম নয়’ ইত্যাদি ইত্যাদি........।

কন্টেক্স্ট বিহীনভাবে উক্তি তুলে ধরে তথ্য ও সত্যকে বিকৃত করা হয়েছিল এবং সমস্ত পরিপ্রেক্ষিতকে অগ্রাহ্য করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এইরকম প্রচেষ্টাই ছিল, পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের 'বাংলাদেশ' এর মোল্লাতান্ত্রিক বাঙালি মুসলমান পাঠককে রবীন্দ্রনাথ বিরোধী করে তোলার শুরু........

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted