কোলকাতার একটি “মুস লিম চোর” বাড়ি বাড়ি গিয়ে চুরি করে অতিষ্ঠ করে ফেলছে, কিংবা মুর্শিদাবাদের একটি “মুস লিম ডাকাত” ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে, এই রকম ভাষ্য বা নিউজ হেডলাইন প্রচার হলে নিশ্চয় ভারতীয় সেক্যুলার ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরের কোন আপত্তি থাকবে না?
কারণ পশ্চিমবঙ্গের উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া একজন স্টুডেন্টের কথা বলতে গিয়ে তিনবার তাকে “মুস লিম” বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী মহুয়া রায় মুর্শিদাবাদের সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া একজন ছাত্রীর পরিচয় দিতে গিয়ে তিনবার তাকে “মুস লিম” বলে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। এইরকম ধর্মীয় পরিচয় উঁচিয়ে ধরে কাউকে হাইলাইট করাকে কি সেক্যুলারিজম বলে? এরপর বিজেপি যখন সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া কাউকে “হিন্দু শিক্ষার্থী” বলে উচ্ছ্বাস করবে তাকে কাউন্টার কি দিয়ে দিবেন মাননীয় সেক্যুলারজীবী?
কিয়ামত মনে হয় সন্নিকটে! না হলে সেক্যুলাররা কেন ধর্মজীবীর মত কথা বলছে আর ধর্মজীবীরা বলছে সেক্যুলারদের মত। বিজেপি এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, ‘পড়ুয়াদের পরিচয় তার ধর্মে নয়, কেন তার ধর্মীয় পরিচয় বারবার বলা হলো বুঝা গেলো না...’। বিজেপি তো সেক্যুলারদের মত কথা বলছে! আর সেক্যুলাররা খোঁড়া যুক্তি দিচ্ছেন, তারা বলছেন, পিছিয়ে থাকা কোন জনগোষ্ঠি যখন বড় কিছু করে তখন সেটাকে বড় করে প্রচার করে তাদের উত্সাহিত করা হয়...।
ফালতু কথা! বাংলাদেশে সর্বোচ্চ নম্বর পেলে কোন হিন্দু শিক্ষার্থীকে সরকারী দল বা মিডিয়া লিখবে ‘একজন হিন্দু শিক্ষার্থী বোর্ড সেরা হয়েছে’? প্রথমত এটি তো খুবই সাম্প্রদায়িক অবস্থান হবে। তবে বাংলাদেশের পেক্ষাপটে এরকম শিরোনাম সম্ভব নয় ‘হিন্দু’ সম্প্রদায়ের সাফল্যকে বিশেষভাবে ফুটিয়ে তোলা। বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ভোট কোন ‘ফ্যাক্ট’ নয়। কারণ তোরা আমাদের ভোট দিবি যদি নিরাপদ থাকতে চাস’ এটাই ৪৭ সালের পর থেকে এখানে সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে সোজাসাপ্টা রাজনীতি। ভারতে বা পশ্চিমবঙ্গে বিষয়টা ভিন্ন। সেখানে মুসলিমরা নিরাপদ থাকতে বিশেষ কোন দলকে ভোট দিতে জিন্মি তা নয়। এ কারণেই পশ্চিমবঙ্গে ‘মুস লিম তোষণ’ কথাটা হিন্দুত্ববাদীরা বেশ জোড়েশোরে তোলে। এই যে মহুয়া রায় ‘মুস লিম কন্যা’ বলে পরিচয় করিয়ে দিলো সেটা কিন্তু তিরিশ ভাগ ভোটব্যাংককে খুশি করতে। এটা করতে গিয়ে সেক্যুলার ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা হবে ‘মুস লমান’ আর বিজেপি গাইবে সেক্যুলারিজমের গান! কিয়ামত কি শুধু শুধু সন্নিকটে!
[বিজেপির মুর্শিদাবাদ শাখা নগদ পাঁচশো রুপি ও ক্ষমতায় গেলে বাকী পাঁচশো রুপি দেয়ার অঙ্গীকার করে লেখাটি লিখিয়ে নিয়েছে]
#সুষুপ্তপাঠক
#susuptopathok
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................