পাকিস্তানে হাড়িভাঙ্গা আম পাঠালে একদলের যেমন রাগ লাগে, তেমন ভারতে ইলিশ পাঠালে আরেকদলের রাগ লাগে। আমি প্রথম দলের লোক। আমি শাওন মাহমুদের দলে। এখানে ভারত বিরোধী শিবির ও পাকিস্তান বিরোধী শিবিরের মধ্যে বিরাট আকারের তফাত আছে। “পাকিস্তান” আমাদের কাছে একটি দর্শনের নাম। যে দর্শন উপমহাদেশকে বিভেদ করেছে। “পাকিস্তান” এই উপমহাদেশে একটি দুষ্টগ্রহ! “পাকিস্তান” ভেঙ্গে যাওয়া উচিত। কিন্তু পাকিস্তানে বসবাস করা সাধারণ মানুষের প্রতি তো কোন ঘৃণা নেই। পাকিস্তানে যে ফুল ফুটে তাতে মুগ্ধ হতে তো কোন আপত্তি নেই। পাকিস্তানের শিশুদের হাসি দেখে কি আমাদের মনে দয়া মায়া ফুটে উঠবে না? অবশ্যই আসবে। যে শাওন মাহমুদ এই দেশের জন্ম হতে গিয়ে সবচেয়ে বড় সেক্রিফাইস করেছেন তিনিও কি পাকিস্তানের কোন শিশু অভুক্ত থাকুক তা চান? মোটেই না। পাকিস্তানকে অস্বীকার করার পিছনে আলতাফ মাহমুদের দর্শনগত বিরোধীতা ছিলো। তিনি সংগীতের মানুষ ছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে পাকিস্তানের সংগীতের কিংবদন্তিদের কি প্রত্যাখান করতেন? করতেন না। তাই পাকিস্তান নামের রাষ্ট্রীয় পরিচয়ে যখন কোন ক্রিকেট টিম, ফুটবল টিম কোথাও খেলে তারা হারলে আমাদের ভালো লাগে। পাকিস্তানের সঙ্গে কটুনৈতিক বোঝাপড়ার জন্য যখন শুভেচ্ছা জানাতে আম পাঠাতে হয় তখন আমাদের সেটা ভালো লাগে না। আমি তো বলি, যদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পরোক্ষভাবে সমর্থন করেও পাসপোর্টে ইজরাইল ভ্রমণকে নিষিদ্ধ করে রাখা হয় তাহলে পাকিস্তান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর পরও কেন নিষিদ্ধ নয়? আমাদের এই বিরোধীতা পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে নয়। এখানেই ভারত বিরোধীদের সঙ্গে বড় তফাত। যারা এদেশে ভারত বিরোধী তারা ভারতে একটা ফুটওভার ব্রিজ ভেঙ্গে পড়ে একশজন মারা গেলে ফেইসবুকে হা হা রিয়েক্ট দেয়। ভারত বিরোধীতাটা আসলে হিন্দু বিরোধীতা। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। কারণ দ্বিজাতিতত্ত্বের মাধ্যমেই তো পাকিস্তান নামের দেশের সৃষ্টি হয়েছে। সেই পাকিস্তান ভারতকে শত্রু ষড়যন্ত্রকারী মনে করে ঘৃণা বিদ্বেষের যে শুরু হয়েছিলো সেটা তো ধর্মের পরিচয়েই। ভন্ডদের এটা স্বীকার করতে লজ্জ্জা লাগে কিন্তু সত লোকদের বলতে কোন দ্বিধা থাকে না। তারা সোজাসুজি বলে ফেলে ভারত হিন্দু, পাকিস্তান মুস লমান। এ জন্য পাকিস্তানকে তারা সমর্থন করে। এখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের সময় আলোচনা যেভাবে তেঁতে উঠে তাতে মনে হয় না যুদ্ধটা
পাকিস্তানের সঙ্গে হয়েছিলো। কারণ মূল আলোচনা যুদ্ধের সময় ভারত অস্ত্র অর্থ সব চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলো। ভারত চিঙ্কু বামদের নজরবন্দি করে রেখেছিলো। ভারতের গোলামীর জিঞ্জির ১৬ ডিসেম্বর থেকেই শুরু হয়েছিলো। ওসমানী কেন আত্মসমর্পনে যায় নাই... আসলে ভারতের অধিনে সাহায্যে যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করাটা ছিলো বাঙালী মুস লমানদের জন্য মনস্তাত্বিক সমস্যা। এ কারণেই বহু মুক্তিযোদ্ধার কথা রাজাকারদের মত। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের আগে বাংলাদেশের বড় বড় মানুষ যারা মারা গেছেন তারা ভাগ্যবান এই অর্থে তাদের কে যে পাকিস্তানের সমর্থক হত আর কে বিরোধী বলা মুশকিল! কারণ পাকিস্তানকে ‘দর্শনগতভাবে’ ইনকারেক্ট মনে করে যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গিয়েছিলো তারা বাদে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক যারাই ছিলেন তারা সকলেই রাজাকারদের সঙ্গে যুদ্ধটুকু ছাড়া বাকী সব কিছুর সঙ্গে অভিন্ন। যারা পাকিস্তানে আম পাঠানোর জন্য কষ্ট বা বিরক্ত হয়েছেন, তাদেরকে নিয়ে যারা ট্রল করছে, বলছে গবেষণা করা উচিত- তাদের দর্শনটা কি একবার চেক করে দেখুন। বাপ দাদায় মুক্তিযোদ্ধা ছিলো মানেই যে সে পাকিস্তান দর্শনের বাইরের লোক তা যে নয় সেটা তো উপরেই বললাম। যদি চিঙ্কু বাম, পাতি বাম, ইস লামিক বাম হয় তো ভাষানী থেকে জেনে নিন। ভাষানী একজন সাম্প্রদায়িক ইস লামিক কমিউনিস্ট ছিলেন। তাদের কাছে পাকিস্তান বিশেষ কিছু নয়। কারণ পাকিস্তানের জন্ম দিয়েছিলো ভাষানীরাই। তাদের উত্তরসুরীদের কাছে তাই অন্যরকম উপলব্ধির আশা করাটাই ভুল।
[লেখক পরিচিতি: ২০২১ সালের ‘শ্রেষ্ঠ ভারতের দালাল’ পুরস্কার প্রাপ্ত এই লেখকের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বই ‘বুকে আয় মোদী’ ‘ভারত মাতা কি জয়’ ‘আই লাবু ইন্ডিয়া’ ইত্যাদি। এই লেখাতেও লেখকের স্পষ্ট ভারত পক্ষপাত পরিলক্ষিত হয়েছে।]
#সুষুপ্তপাঠক
#susuptopathok
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................