৭১ টিভিতে এসেছিলেন সলিমুল্লাহ খান ও হেফাজত নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহ। বিষয়বস্তু ‘জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় ইসলাম’। বিষয়বস্তুর শিরোনাম শুনে হাসি এলেও আলোচনা শুনে গায় জ্বালা ধরবে কারণ এই লোকগুলোর বেশিরভাগই তাদের ফেইসবুকের কমেন্টবক্স ‘অনলি ফ্রেন্ড’ করে রেখে শুধু নিজেদের পেলেপুষে রাখা ভক্তদের গুণমুগ্ধ কমেন্ট ছাড়া কোন রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হন না, টেলিভিশনেও হোস্ট তাদের ছাই দিয়ে চেপে ধরেন না। আফসোসটা এখানেই...।
মুফতি ফয়জুল্লাহর রাজনৈতিক দলের নাম ‘ইসলামী ঐক্যজোট’ হচ্ছে সেই দল যারা ঢাকার রাস্তায় প্রকাশ্যে মিছিল করে বলেছিলো, ‘আমরা সবাই তালেবাল, বাংলা হবে আফগান’। ফয়জুল্লাহদের নেতৃত্বে হেফাজত ইসলাম শাপলা চত্তরে যে ১১ দফা দিয়েছিলো তার অন্যতম ছিলো, সংবিধানে আল্লার উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা পুন:স্থাপন ও কুরআন সুন্নাহ বিরোধী সকল আইন বাতিল করা, রসূলের বিরুদ্ধে কটুক্তি বা ভিন্নমত প্রকাশকারীর বিরুদ্ধে ব্লাসফেমি আইন পাশ, ব্যক্তি ও বাক স্বাধীনতার নামে বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যাভিচার ও নারী পুরুষের ‘অবাধ বিচরণ’ ও মোমবাতি প্রজ্বলনসহ সব রকম বিজাতীয় সংস্কৃতি প্রত্যাহার, ইসলাম বিরোধী নারীনীতি, ধর্মনীতি, শিক্ষানীতি বাতিল করা, কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা, মসজিদের শহর ঢাকাকে মূর্তি মুক্ত করা... ইত্যাদি। সেই ফয়জুল্লাহ যারা এইসব ১১ দফা তৈরি করেছিলেন এবং ছাত্রকালে যারা মুফতি আমিনীর শ্লোগান দিয়েছিলেন ‘আমরা সবাই তালেবাল বাংলা হবে আফগান’ তিনি ভূয়ষী প্রশংসা করলেন ছফা শিষ্য ও ‘ছফা মাজারের খাদেম’ সলিমুল্লাহ খানকে। কেন?
কারণ সলিমুল্লাহ খান ৭১ টিভিতে বললেন, জঙ্গিবাদের সঙ্গে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। জঙ্গিবাদ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের সৃষ্টি। সলিমুল্লাহ বারবার বললেন সমাজতন্ত্র যেমন সাম্যের কথা বলে ইসলামও সাম্যের কথা বলে। অথচ হেফাজতের ১১ দফার মধ্যে কোথাও কি সাম্য ছিলো? ইসলাম হচ্ছে দলিল ভিত্তিক ধর্ম। কুরআন হাদিসের বাইরে কে কি বলল তাতে কিছু যায় আসে না। পৃথিবীতে ১৫৬টি ইসলামিক জঙ্গি দল ও সংগঠনকে সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদী হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরা সকলেই ইসলামী আইন বাস্তবায়ন ও ইসলামী শাসন কায়েম করতে জিহাদ করে যাচ্ছে। ফয়জুল্লার কলিগ হেফাজত নেতা গুনবী যিনি বর্তমানে জেলে আছে তার শত শত ভিডিও আছে যেখানে তিনি বলছেন, রক্ত ছাড়া ইসলাম কায়েম হবে না। আইসিউতে শুয়ে মরলে সোয়াব হবে না, জিহাদের ময়দানে গিয়ে মরতে হবে কারণ আল্লাহ মুসলমানদের জানমাল জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় নিয়েছেন।... কুরআনে ৪৫০টি জিহাদের আয়াত আছে। কোথাও বলা হয়নি সবাইকে ইসলাম গ্রহণ করতে জোর করা হবে। বলা হয়েছে সমগ্র পৃথিবীকে ইসলামী শাসনের আওতায় আনতে হবে। ইসলাম সমগ্র পৃথিবীকে মুসলমান ও কাফের এই দুইভাগে বিভক্ত করে। ইসলাম নারীদের কখনোই পুরুষের মত সমান অধিকার দূরে থাক স্রেফ সেক্স বিনোদন ছাড়া যে আর কিছুই মনে করে না সেটা হেফাজত ইসলামকে ফলে করলেই বুঝতে পারবেন। সলিমুল্লাহ খানরা এভাবেই যুগে যুগে ফয়জুল্লাহদের বন্ধু হয়ে কাজ করেছে। সময় সুযোগ মত ফয়জুল্লাহরা আবার এইসব সলিমুল্লাহদের “ভরে’ দিয়েছে! আহমদ ছফা ভারতকে হিন্দু মৌলবাদীদের ভয়ংকর আগ্রাসন হিসেবে দেখালেও এক সাক্ষত্কারে বাংলাদেশে মৌলবাদের কোন সমস্যা নেই বলে দাবী করেছিলো। অথচ তার সময়কালেই আমিনিদের উত্থান শুরু হয়েছিলো। তার সময়কালেই তসলিমাকে দেশ থেকে পালাতে হয়েছিলো। ইসলামী মৌলবাদকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা ছফারা যেভাবে করতেন তাদের শিষ্যরা এখন সেটাই বিরাট আকারে করে চলেছেন।...
[ভিডিও লিংক https://www.facebook.com/ekattor.tv/videos/373445110855099/
-সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................