“দাদা” বাঙালী নিজের বড় ভাইকে সম্বধন করে থাকে। এটা বাঙালীর নিজস্ব পারিবারিক সামাজিক সম্পর্ক। শরতচন্দ্র এই জন্যই বোধহয় লিখেছিলেন, ‘বাঙালী ও মুসলমান ছেলেদের মধ্যে ফুটবল খেলা’ -তাতে অনেক মুসলমান বাঙালী চটেছিলেন শরত বাবু মুসলমানদের বাঙালী মানতে চান না!
এই যে সময় টিভির একটা স্ক্রেণশর্ট দিলাম সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মানুষজনদেরকে “দাদা” বলে যেভাবে দাগাচ্ছে তাতে সেটি শুনলেই বুঝতে পারা যায় “দাদা” শুধু পশ্চিমবঙ্গে মেলে। কারণ বাংলাদেশে হয় “ভাই” নয়ত “ভাইজান”।
এগুলো হচ্ছে মুসলমানদের সম্বধন। বাংলাদেশের কোন মুসলমানকে নামের পর দাদাযুক্ত করে দেখুন কি রকম ক্ষেপে যাবে! মুখের উপর বলে দিয়ে এসব “হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি” আমি পছন্দ করি না! ব্যস, উনাদের আবার বলে দেখুন, মুসলমানরা আবার বাঙালী হয় নাকি- ওমনি তখন “দাদাদের ধুতি টেনে খুলে ফেলতে” কসুর করবে না! সময় টিভির ভেরিফাই ইউটিউব চ্যানেলে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নিয়ে রিপোর্টের ভাষা শুনলে পুশত ভাষী আফগানদের অনুবাদ করে শোনালে তারা আশ্বস্ত হতে পারবে বাংলাদেশে তালেবানদের সশস্ত্র জিহাদের কোন প্রয়োজনই পড়বে না। ওথানকার মিডিয়া দিনের পর দিন তালেবানদের জন্য জমি প্রস্তুত করে রাখছে। বিষয়টা দেখুন, খেলল বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া সেখানেও ভারত চলে এসেছে। আনন্দবাজার লিখেছে ‘অঘটন ঘটিয়ে বাংলাদেশের দুই ম্যাচ জিতে নিয়েছে’। এটা নাকি চরমভাবে বাংলাদেশকে অপমান করা হয়েছে। বাংলাদেশ হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন টিম। শুধু ষড়যন্ত্র করে তাদের হারানো হয়। বাংলাদেশের মিডিয়া যখন জিম্বাবুয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ টিমের সতর্ক থাকার উদাহরণ দিতে গিয়ে বলে ‘যেন পঁচা শামুকে’ পা না কাটে’ –এগুলো বুঝি খুব সন্মান করে কথা বলা?
বাদ দেই ক্রিকেটকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এলেও যে দেশে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কথা না এসে ‘ভারত নিজের স্বার্থে বাংলাদেশকে সাহায্য করছে’ ‘ভারত মিত্রবাহিনী হওয়ার সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের সব কিছু লুটপাট করে নিয়ে গেছে’ এসব আলাপ প্রতিবছর স্বাধীনতা বিজয় দিবসে যে দেশে হয় সে দেশে তালেবানী শাসন হবে এ কারণে নয় যে তারা ভারত বিরোধী বলে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে নেপালেরও ভারত বিরোধী মনোভাব আছে। কিন্তু বাংলাদেশের ভারত বিরোধীতা ঐতিহাসিকভাবে হিন্দু বিরোধীতা থেকে। “দাদা” শুনলে যে পিত্তি জ্বলে যায় সেটা তো হিন্দুত্ব বিদ্বেষ থেকে। বাংলাদেশের প্রগতিশীলরাই নির্মেলেন্দু গুণকে আলাদা করে ডাকে “গুণদা” আর শামসুর রাহমানকে “রাহমান ভাই”। তাহলে পশ্চিমবঙ্গ প্রসঙ্গ এলেই “দাদাদের” কথাটা যখন বলা হয় সেটার ভেদ বিচার কি তারপরও খুলে বুঝাতে হবে?
পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানদের যারা তৃণমূল বামফ্রন্ট কংগ্রেসের সেক্যুলার সমর্থক হিসেবে এখন আনন্দবাজারের কমেন্ট সেকশনে তালেবানদের পক্ষে উকিলের ভূমিকা নিয়েছেন তাদের কথা চিন্তা করে আগামী দিনের ভারতের সাম্প্রদায়িক পরিণতি কি হবে ভেবে আতংকিত হচ্ছি। এসবের ফলে ভারতের হিন্দুদের হিন্দুত্ববাদীদের ভোটব্যাংক হওয়ার একটা জোয়ার আসবে। মানে ভারত ধর্মীয়ভাবে অনৈক্য থেকে যাবে। কাল একজনকে বললাম, একজন লোকের লম্বা দাড়ি, খুব পরেজগার মানুষ, তালেবানরা যেভাবে মেয়েদের রাখতে চায়- কালো বোরখায় ঢেকে, হাত মোজা পরিয়ে, নারী শিক্ষা নারী কর্মসংস্থান বাদ দিয়ে- ঠিক সেভাবেই নিজের স্ত্রী ও কন্যাদের রাখছে এমন একজন লোকের তালেবানদের আফগানিস্থানের ক্ষমতায় চলে আসায় বিরোধীতা করবে তেমন সম্ভাবনা আছে? উনি বললেন ৯৯ পার্সেন্ট সম্ভাবনা নাই। তখন বললাম, তাহলে যদি বলি হাশিম আমলা, মঈন আলী, সাঈদ আনোয়ার, শহীদ আফ্রিদি আর বাংলাদেশী কয়েকজন ক্রিকেটার (‘নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধাদের’ নাম বলে আর রোষাণলে পড়তে চাই না!) তালেবান সমর্থক খুব কি দোষ হবে? তিনি বললেন অন্যভাবে দোষ হবে কারণ তারা যে তালেবানী সমর্থক তার তো কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু তারা যে তালেবানী হতে পারে সে সন্দেহ না করে উপায় নাই। বললাম, এই যে সন্দেহ ও সম্ভাবনা মনে উদয় হয় সেটা তো বাস্তব। এটাকেই বামপন্থিরা নাম দিয়েছে “ইসলামফোবিয়া” মানে ইসলাম ও মুসলমান নিয়ে অমূলক ভয়!...
কিন্তু ভয় তো অমূলক নয়। আফগানিস্থান যদি বৌদ্ধদের দেশই থাকত তাহলে কি সেখানে তালেবানদের জন্ম হত? আমাদের পূর্ব পুরুষরা বৌদ্ধ হিন্দু থেকে গেলে কি এখন “দাদাদের ধুতি খুলে দিতে চাইতাম”? না, পশ্চিমবঙ্গের লোকজন যে খুব সাধু তাদের কোন দোষ নেই বলছি না। তারা যে বাংলাদেশ নিয়ে হেয় করেও কখা বলে সেটা সত্য। কিন্তু আমাদের সেসবের বিরোধীতা যে সাম্প্রদায়িক ও বাঙালী বিরোধীতা করে সেটি কি আমরা বুঝতে পারি? অবশ্যই পারি। জেনে শুনেই এটা করা হয়। আমার মনে হয় আফগান তালেবানদের বাংলাদেশ শাখা অলরেডি হয়ত রিপোর্টে করেছে, বাংলাদেশ নিয়ে মাথা ঘামিয়ে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা সাংবাদিক লেখক বুদ্ধিজীবীরাই আমাদের জন্য বছরের পর বছর জমি চাষ করে যাচ্ছে...
[বি: দ্র: লেখাটির সম্পূর্ণ বা কোন একটি অংশ কোনভাবেই আনন্দবাজার পত্রিকার ছাপতে দেয়া যাবে না। সেরকম শর্তেই আনন্দবাজার পত্রিকার হয়ে লেখাটি লিখেছি প্রতি প্যারা (৯৯৯ টাকা মাত্র)।]
-সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................