আফগানিস্থানে এখন যে তরুণ তরুণীদের বয়স ২০ বছর তারা তালেবানী শাসন দেখেনি। তারা জন্ম থেকে দেখেছে শহরে সিনেমা হল। বাসায় গান বাজছে। ভাই বোন সকলেই স্কুলে যাচ্ছে। শহরগুলিতে পার্লারের বাহারি এডে সুন্দর সুন্দর মডেলদের ছবি। ক্যাফেগুলিতে বাজত রক জ্যাজ মেলডি গানের সুর। বিশ বছর আগে তাদের বাবা মায়েদের মনে যে বিভীষিকা ঘটে গিয়েছিলো তা তাদের কাছে উপলব্ধির অতিত।
মাদ্রাসার হুজুররা পাড়ায় পাড়ায় ঢুকে মহিলাদের পর্দা ঠিক আছে কিনা দেখতে টহল দিত। যথেষ্ঠ শালীন বোরখা পরা হয়নি বলে একজন মাদ্রাসার মুফতি বেত নিয়ে পেটাচ্ছে মহিলাদের- গুগল করে সেসব ছবি দেখে এইসব নতুন প্রজন্মের আফগান তরুণ তরুণীদের কাছে অবাস্তব মনে হত! সেই তারাই গতকাল থেকে দেখল শহরের পার্লারগুলো থেকে নারীদের ছবি মুছে ফেলা হচ্ছে ভয়ে। ক্যাফে মালিকগুলি দোকান বন্ধ করে পালিয়েছে শুধুমাত্র ‘পশ্চিমা সংস্কৃতি’ লালন করে এই অভিযোগে! কাবুল পতন হবার আগে থেকেই দেখেছে নিজের বোনের স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। কাবুল দখল হবার আগে দেখেছে মা ও প্রতিবেশীরা দোকানগুলিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে বোরখা কিনতে! অবস্থান বুঝে চড়া দামে বিকিয়েছে দোকানীরা। বিস্মিত এই প্রজন্ম বুঝতেই পারছে না তালেবান কেন নিছক আমোদ করে কাবার খেতে খেতে গান শোনাকেও অপরাধ হিসেবে দেখে? যারা ধনী আফগান শহুরে, তারা তালেবানী নরকে বসবাস করতে পারবে না জেনে মাসখানেক আগেই সব কিছু ছেড়েছুড়ে ভারত এসে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু সবার পক্ষে দেশ ছাড়া সম্ভব নয়। তাদের এখন তালেবানী শাসনে যার নাম তালেবান রেখেছে ‘ইসলামিক আমিরাত’, সেই ইসলামিক আমিরাতে তাদের জন্য যে শরীয়া আইন থাকবে তার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে মানসিকভাবে...।
আফগানদের এই দু:স্বপ্ন কাটবার নয়। ২০০১ সাল তালেবানদের পতনের পর মার্কিন সমর্থিত যে সরকার ক্ষমতায় ছিলো তারা দেশের নারী পুরুষদের জন্য শিক্ষা উন্মুক্ত করেছিলো। নারীদের কর্মক্ষেত্রে যোগদান, নারীদের অভিভাবকত্ব থেকে নেতৃত্ব, নারীর স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সহ আফগানিস্থানের জীবন মান স্বাভাবিক একটি অবস্থায় নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু আমেরিকা চিরকাল আফগানিস্থানে পাহারা বসিয়ে রাখবে না এটি কেন আফগানরা বুঝেনি? তালেবানদের উত্থান ও ক্ষমতা দখলে আফগান যে জনগোষ্ঠি ভীত তারা কেন বিগত বিশ বছরে আফগানিস্থান থেকে মাদ্রাসা শিক্ষা ও মসজিদ কেন্দ্রিক শিক্ষাকে পুরোপুরি বন্ধ করেনি? তালেবানদের যে বিশ্বাস সেটা কি তারা বুঝেও বুঝতে চায়নি? আফগানদের চিরস্থায়ী গৃহযুদ্ধ যে বিশ্বাস প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে সেটি আফগানরা আর সব মুসলিম প্রধান দেশের মতই বুঝেও না বুঝার ভান করে ছিলো। একশতভাগ ইসলামী শাসনের চেহারা কেমন হতে পারে সেটি আফগানিস্থানে প্রদর্শিত হয়েছিলো ২০ বছর আগে। সিরিয়াতে একশভাগ ইসলামী শাসন প্রদর্শিত হয়েছিলো যা দেখে বিশ্ববাসী শিহরিত হয়েছিলো। কিন্তু আইএসের ধর্মীয় দর্শনটাকে সবাই লুকানোর চেষ্টা করেছে। সিরিয়ানরা দেখবেন তাদের স্বাভাবিক শাসনতন্ত্রে ফিরে যাবার পর ঠিকই মাদ্রাসা মসজিদের উলামায়া কেরামদের আগের মত শ্রদ্ধা সন্মান করছে। দান খয়রাত করছে। ইসলামী ভাবধারাকে জাগ্রত করতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করে চলেছে। মনে করুন বাংলাদেশ নামের দেশটির কথা। এই দেশটি ইসলামী শাসনে চলে না। কিন্তু ইসলামী ভাবধারার পিছনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা হয়। মাদ্রাসা মসজিদের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। ইজতেমা আয়োজনে বিশাল ভূমিকা রাখা হয়। ইসলামী বইপত্র প্রকাশ করতে সরকারীভাবে ব্যয় করা হয়। ঠিক সে রকম করেই তালেবান পরবর্তী আফগানিস্থান চলেছে। আফগান দরিদ্র শ্রেণী মাদ্রাসা শিক্ষার উপর নির্ভর ছিলো। গ্রামীণ জনগোষ্ঠি তাই তালেবানদের সমর্থক থেকেছে। বিশ বছর আগের বিষবৃক্ষকে উপড়ে না ফেলে আশরাফ ঘানি সরকার দেশকে আধুনিক প্রগতিশীল হতে ঠিক কি কি ব্যবস্থা নিয়েছে কেউ কি সেটা দেখাতে পারবে?
আফগানিস্থান থেকে আমেরিকা হারেনি। আমেরিকা সৈন্য তুলে নেয়ার পরই তালেবান উত্থান ঘটিয়ে দখল করে নিলো। যদি আমেরিকা আফগানিস্থান থেকে সরে না আসত তাহলে তালেবান ক্ষমতা দখল করে নিতে পারত না। ভিয়েতনামে কমিউনিস্টদের কাছে পরাজয়কে যারা আমেরিকার আফগানিস্থান ছেড়ে আসাকে তুলনা করছেন তারা তালেবানকে ‘জাতে তোলার’ চেষ্টা করছেন। এই প্যান্ট শার্ট ক্লিন সেভড ‘সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী’ হুজুরদের একটি বড় ভূমিকা থাকবে বাংলাদেশের জেএমবি উত্থানে। কথাটা সময় মত মিলিয়ে নিয়েন...।
-সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................