ভারত মাদ্রাসা শিক্ষাক্রম কেন রাখবে সেটি গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে।

সিলেটের আব্দুর রাজ্জাক তালেবানে যোগ দিতে ভারত হয়ে আফগানিস্থান পৌঁছেছে! কিছুদিন আগেই পুলিশের বড়কর্তা জানিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে তরুণরা তালেবানে যোগ দিতে ভারত হয়ে আফগানিস্থানে চলে গেছে বলে তারা জানতে পেরেছেন। সিলেটের রাজ্জাক কলেজে পড়ত। সে নিয়মিত তাবলীগে যেতো। তার কারণে বাড়িতে কেউ গান শুনতে পারত না। বাড়িতে টিভিও আনা যায়নি তার বিরোধীতার কারণে। বড় ভাইয়ের কাছে সব সময় বলত, মুসলমানদের বিরুদ্ধে জুলুম হচ্ছে, অন্যায় হচ্ছে।... রাজ্জাকের বড় ভাইয়ের তাই বিশ্বাসই হচ্ছে না তার ভাই জঙ্গি! 

পরিবারগুলোর মধ্যে ধার্মিকতা নিয়ে এই রকম ফ্যান্টাসি যতদিন থাকবে ততদিন নিজের ভাই, সন্তান যখন হিযরত করে আইএস তালেবান বা অন্যকোন জঙ্গি দলে যোগ দিবে তখন এইরকম বিস্মিত হতেই থাকবে। যেদিন পরিবারগুলো রাজ্জাকদের মত তরুণদের গান বাজানার বিরুদ্ধে যেতে দেখলে ভীত হয়ে তাকে সংশোধনের চেষ্টা শুরু করবে, অতিরিক্ত নামাজকালাম পড়তে দেখলে অভিভাবকরা সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত হতে শুরু করবে সেদিনই প্রকৃত জঙ্গিবাদ বিরোধী মনোভাব জেগে উঠবে। কিন্তু এখন যেটা ঘটছে তাতে রাজ্জাকদের মত তরুণদের বাড়বাড়ন্তই দেখার কথা।

রাজ্জাকদের মত তরুণদের তৈরিতে কি খালি মাদ্রাসার হুজুরদের ওয়াজ দায়ী? মোটেই নয়। এই যে ‘মুসলমানদের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র’ এগুলো কি প্যান্ট শার্ট পরা ক্লিন সেভড লোকজন সাংবাদিক বুদ্ধিজীবী আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ইত্যাদি পরিচয়ে দিনের পর দিন একটা সম্প্রদায়ের মনে ‘মুসলিম জাতি’ মনস্তত্ব ঢুকিয়ে দেয়নি? আফগানিস্থান থেকে আমেরিকার সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ঘোষণার পর তালেবানের উত্থানে উল্লাসিত এইসব নাগরিক সমাজ কি রাজ্জাকদের মত তরুণদের তালেবান হয়ে যাওয়ার দায় এড়াতে পারে? বিস্মিত হবেন না শুনে, যাদের কথা বললাম, তারা তালেবান আইএসের মত দলগুলোর প্রতি খুব একটা শত্রু মনোভাব পোষন করে না। তারা মনে করে পৃথিবীতে জায়নবাদ হিন্দুত্ববাদ ছাড়া বাকীরা সবাই নিষ্পাপ মাসুম! এরা পশ্চিমাদের নিপীড়ণে অভিমানে জঙ্গি হয়েছে। কখনো কখনো দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে! ভারতীয় বামপন্থিদের কথা শুনলে তো আপনি অজ্ঞান হয়ে যাবেন! ভারতে তালেবান ঢুকে গেলে সবার আগে এই বামপন্থিরাই তাদের মানবাধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসবে নিশ্চিত...।

আসল প্রশ্নটা হচ্ছে করোনার কারণে ভারত যেতে ভিসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে। এদিকে রাজ্জাকদের মত ছেলেরা গ্রুপ করে ভারতে প্রবেশ করে মার্চ মাস থেকে। দলে দলে এইসব তরুণরা দুই দেশের বর্ডার ক্রশ করল কিভাবে? পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে যদি শত শত বাংলাদেশী তালেবান জঙ্গিরা আফগানিস্থানে নির্বিঘ্নে চলে যেতে পারে তাহলে আফগানিস্থান থেকে তালেবান জঙ্গিরা কি সহজেই ভারতে ঢুকে পড়তে পারবে না? সমস্যাটা কোথায়? ভারতে এই বিপুল সংখ্যক জঙ্গির অনুপ্রবেশ সম্পর্কে ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে কোন খবর নেই? বাংলাদেশের পুলিশ জানিয়েছে ভারত ক্রশ করে আফগানিস্থানে যাওয়া দেশী তালেবানদের তথ্য সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। ভারত সরকার এ বিষয়ে এখনো ঘুমিয়ে আছে কেন? ভারত জার্মানি কাতার ইতিমধ্যে তালেবানকে স্বীকৃতি না দিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের উচিত দেওবন্ধকে চাপ দিয়ে ‘তালেবানী ইসলাম’ সম্পর্কে তাদের মতামত প্রদানে বাধ্য করা। ভারত মাদ্রাসা শিক্ষাক্রম কেন রাখবে সেটি গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে। ধর্মীয় একনিষ্ঠতার কারণেই রাজ্জাকদের মত ছেলেরা হিযরত করে আফগানিস্থান চলে গেছে। আর ভারতে সেই একনিষ্ট ধার্মিকতার কেন্দ্রিয় চর্চাকেন্দ্র দেওবন্ধ অবস্থিত! ভাবা যায়?

-সুষুপ্ত পাঠক

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted