রোকেয়ার ইসলামিকরণ।

রোকেয়ার ইসলামিকরণ:পর্ব:১
---------------------------------------------
বিদ্রোহী কবি নজরুলকে তার জীবিত থাকার সময় এককালে মুসলিম সমাজ, কা ফের ও ইসলামের শত্রু, মুসলমান সমাজের কুলাঙ্গার বলে গালাগাল দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল । আজ সেই নজরুলকে একজন মুসলিম কবি ও মুসলিম সমাজের গর্ব ও সম্পদ বলে দিনরাত প্রচারণা চালায়!নজরুলকে নিয়ে তাদের এখন বিশাল অহংকার! ঐ একই মিথ্যা প্রচারণার সড়ক ধরেই তাঁরা নিরন্তর ‘রোকেয়ার ইসলামিকরণ’ করে চলেছে।

ভারতবর্ষের সর্বপ্রথম আমূল নারীবাদী এক মহান নারী- রোকেয়া| ওনার জীবিতকালে সমাজজীবনে নারীর এত করুণ দশা ছিল যে তিনি নারীকে নিকৃষ্ট জীবের সঙ্গে তুলনা করতে বাধ্য হয়েছিলেন! ---“আপনারা শুনিয়া হয়ত আশ্চর্য হইবেন যে আমি আজ বাইশ বৎসর হইতে ভারতের সর্বাপেক্ষা নিকৃস্ট জীবের জন্য রোদন করিতেছি । ভারতের সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট জীব কাহারা জানেন ? সে জীব ভারত-নারী । এই জীবগুলির জন্য কখনো কাহারো প্রাণ কাঁদে নাই । পশুর জন্য চিন্তা করিবারও লোক আছে । তাই যত্র-তত্র পশুক্লেশ-নিবারণী সমিতি দেখিতে পাই । কিন্তু আমাদের ন্যায় অবরোধ-বন্দিনী নারী জাতির জন্য কাঁদিবার একটি লোকও এ ভূ-ভারতে নাই ।” ( রোকেয়া জীবনী, শামসুন নাহার মাহমুদ, পৃ – ৭৯ )।

নারীর জন্যে শিক্ষার্জন নিষিদ্ধ ছিল, শুধু তাই নয়, নারীকে ঘরের মধ্যেও অন্য নারীর সামনে পর্দা করতে হতো! রোকেয়ার ভারতবর্ষ ঠিক এরকম অন্ধকারেই ডুবে ছিল| বেগম রোকেয়া নারী স্বাধীনতা আন্দোলনের বাতি ঠিক সেই সময় জ্বালিয়েছিলেন! তিনি দাবী জানিয়েছিলেন যে, নারীকে শিক্ষার্জনের অধিকার ও অর্থোপার্জনের অধিকার দিতে হবে। পুরুষের চোখে চোখ রেখে বলতে পেরেছিলেন – পুরুষের ঘর-সংসার করাই কেবল নারীর সারধর্ম নয়, নারী তার বুদ্ধি, মেধা, প্রজ্ঞা ও শ্রম দিয়ে দেশের উন্নয়নে অংশ নিতে এবং দেশকে নেতৃত্ব প্রদান ও পরিচালনার দায়িত্ব পালনে সক্ষম । পুরুষের সমকক্ষতা এবং নারী-পুরুষের সমানাধিকারের দাবি তুলেছিলেন। ‘স্বামী’ শব্দেই তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলেছিলেন, নারী পুরুষকে তার স্বামী (প্রভু) মানবে কেন? স্বামী আর বলবে না, ‘স্বামী’র পরিবর্তে পুরুষকে অর্ধাঙ্গ বলবে।

এই ছিল রোকেয়ার পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ । নারীর প্রধান শত্রু ধর্মের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছিলেন রোকেয়া । সকল ধর্মগ্রন্থই পুরুষ দ্বারা রচিত বলে পৃথিবীর সকল ধর্মকেই অস্বীকার করেছিলেন। এই ভারতে তিনি উপেক্ষিত। একজন বাঙালি মনীষীর এরকম উপেক্ষা অবজ্ঞা সমস্ত বাঙালির লজ্জা! মুসলিম সমাজ অবশ্য সে খামতি ঢেকে দিয়েছে! তিনি বাংলো মুসলিম সমাজে মর্যাদা ও সম্মানের অতি উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত! মুসলিম সমাজ তাঁকে বন্দনা করে একজন খ্যাতনামা ‘মুসলিম নারী’ হিসেবে । তিনি কিন্তু নারীর পরাধীনতার জন্যে সকল ধর্মকেই দায়ী করেছিলেন কঠোর ভাষায়! ইসলাম ধর্মের প্রতি আলাদা কোনো আবেগ বা শ্রদ্ধা তাঁর ছিল না । তিনি গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন যে ধর্মই নারীর দাসত্ব বন্ধন দৃঢ় করেছে। তার লেখা ‘অলঙ্কার না Badge of Slavery’ প্রবন্ধটি পড়লে সে কথা বোঝা যায়| নারীর দুর্দশার জন্যে রোকেয়া ধর্মের বিরুদ্ধে নারীকে সচেতন ও সরব করার কাজ অকুতোভয়ে করে গেছেন অথচ তিনি আজ সেই ধর্মের কারবারী তথা ঠিকাদারদের হাতেই বন্দি! রোকেয়ার ‘বিদ্রোহী’ ভাবমূর্তিকে আড়াল করে তাঁকে ‘মুসলিম নারী’ হিসেবে তুলে ধরতে মুসলিম সমাজ রোকেয়ার নামের আগে ‘বেগম’ তকমা জুড়ে দিয়েছে । রোকেয়া আজ পরিচিত ‘বেগম রোকেয়া’ নামে, যদিও তিনি নিজে কোনো দিন তাঁর নামের আগে ‘বেগম’ লিখতেন না!! রোকেয়াকে ‘বেগম রোকেয়া’ নামে প্রচারণা হলো মুসলিম সমাজের একটি মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র।

পরবর্তী পর্বগুলোতে এই মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র নিয়ে লিখবো |

(চলবে)

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted