আমাদের দ্বিচারিতায় এরদোয়ান ইমরান যেখানে নিস্পাপ

আমাদের দ্বিচারিতায় এরদোয়ান ইমরান যেখানে নিস্পাপ
..................................................................................
৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে বাইজান্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান ইস্তাম্বুলের গোলেন্ডন হর্ন নামে এক জায়গায় বিশাল একটি গির্জা নির্মাণ করেন। ইস্তাম্বুলের নাম ছিলো তখন কনস্টান্টিনোপল। অটোমান (ওসমান) সুলতান তৃতীয় মেহমুদ ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে বাইজান্টাইন শাসকদের হাত থেকে কনস্টান্টিনোপল দখল করে এর নতুন নাম রাখেন ‘ইস্তাম্বুল’ এবং হাইয়া সোফিয়া গির্জাতে সৈন্য সামন্ত নিয়ে প্রথমবারের মত নামাজ আদায় করেন। 


অটোমান শাসকরা এরপর হাইয়া সোফিয়াকে গির্জা থেকে মসজিদে রূপান্তর করেন এবং গির্জার ভেতরের সমস্ত খ্রিস্টান প্রতিকৃতি ও সোনালী মোজাইকের কাজগুলো কুরআনের বাণী দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। ১৯৩৪ সালে আধুনিক তুরস্কের জনক সেক্যুলার প্রগতিশীল আতার্তুক কামাল পাশা হাইয়া সোফিয়াকে জাদুঘরে রূপান্তিত করে তুরস্কের বিশেষ ঐতিহ্যের মর্যাদা দেন। বর্তমান ইসলামপন্থি রেচেপ তাইপ এরদোয়ান সেই জাদুঘরকে অটোমান যুগের শাসকদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ফের মসজিদে ফিরিয়ে আনেন। সারা বিশ্বে এই ঘটনার তরঙ্গ ছিলো খুবই সামান্য। রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চ এই ঘটনায় দু:খ প্রকাশ ছাড়া কোথাও কোন আলোড়ন ঘটেনি। ৯০ দশকের পরিত্যাক্ত ভঙ্গুর বাবরি মসজিদ ভাঙ্গায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি সারা বিশ্ব যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলো হাইয়া সোফিয়ার জন্য রেচেপ তাইপ এরদোয়ানকে তার ছিঁটে ফোটাও পেতে হয়নি! কেন? 

তুরস্কের এরদোয়ান একটা গির্জাকে মসজিদ বানিয়ে নামাজের ব্যবস্থা করেও তাকে ‘নরেন্দ মোদি’ হতে হয় না! জাতিসংঘে গিয়ে এরদোয়ান-ইমরান খান জোট বেধে ‘ইসলাম বিদ্বেষ’ ‘মুসলিম বিদ্বেষ’ করে শোরগোল তুলে বিশ্বকে জানাতে চেয়েছে মুসলমানরা সবার কাছে নির্যাতিত। তারপর দেশে ফিরে ইমরান খান বাধ্য হন পাকিস্তানে আর নতুন করে কোন গির্জা-মন্দির নির্মাণ না করার শর্ত মেনে নিতে। আর এরদোয়ান গির্জাকে মসজিদ বানিয়ে ফেলেন! তবু তারাই ‘মুসলিমফোবিয়ার’ শিকার! পাকিস্তানে মুসলমানরা ৯৮ ভাগ বলেই সেখানে কোন গির্জা-মন্দির আর নির্মাণ করা যাবে না। তুরস্কে গায়ের জোরে গির্জাকে মসজিদ বানিয়ে ফেলা যাবে তবু লোকজন মুসলমানদের ভয় পেলে সেটা ফোবিয়া!

এই যে বিশ্ব মানবতাবাদীরা, আপনাদের যে উইঘুর মুসলিমদের জন্য দরদ ফেটে পড়ছে, রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য ঘুম হয় না, আপনারা কেন পাকিস্তানে কাদিয়ানীদের নিয়ে কথা বলেন না? পাকিস্তানে কোন কাদিয়ানী নাগরিক বলে স্বীকৃত নয়। সৌদি আরবে কাদিয়ানীরা স্বীকৃত নয়। তারা মুসলমান হওয়ার পরও তাদেরকে অমুসলিম বলে ঘোষণা করে তাদের মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হয়। বাংলাদেশে তাদের প্রকাশনা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। একটা দুই দিনের শিশুর লাশ কবর থেকে তুলে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে কারণ তার বাবা-মা ছিলো কাদিয়ানী! উইঘুরদের বিষয়ে যারা সোচ্চার তারা কেন কাদিয়ানী নিপীড়ন নিয়ে সোচ্চার হয় না?
বাবরি মসজিদ আর হাইয়া সোফিয়া আপনাদের কাছে এক না? বাবরি মসজিদ “উগ্র হিন্দুরা” ভেঙ্গে ফেলেছে কিন্তু হাইয়া সোফিয়াকে মসজিদ বানাচ্ছে যারা তাদের পরিচয় কি? নিশ্চয় “উগ্র মুসলমান” হেইট স্পিচ হিসেবে গন্য হবে! এই দ্বিচারিতা যারা তুলে ধরবে তারাই বরং উগ্র! তারাই বিজেপির আইটি সেলের লোক! তারাই র এজেন্ট!

গেল বছর জাতিসংঘে গিয়ে ইমরান খান, এরদোয়ান ও মাহাথি মোহাম্মদের মধ্যে কথা হয় এবং তারা একটি টিভি সিরিজ নির্মাণের বিষয়ে একমত হয় যা দেখে মুসলমানদের মধ্যে মুসলিম জাতি চেতনা জাগিয়ে তুলবে। কথা অনুযায়ী ১৩শ শতকের মুসলিম ওঘাজ তুর্কি শাসক এরতুগ্রুলের শাসন ও জীবন নিয়ে নির্মিত একটি সিরিয়ালে মুসলিম বীরত্বকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।  ইমরান খান এই টিভি শো নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেছেন, “পাকিস্তানে একটা আদর্শ ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় তার লক্ষ্য পূরণে এই সিরিয়াল সাহায্য করবে”।

তো নরেন্দ মোদি যদি ভারতে একটি “আদর্শ হিন্দু সমাজ” প্রতিষ্ঠা করতে এরকম কিছু ব্যবস্থা নেয় তখন ইমরান খান এরদোয়ান মাহাথি মোহাম্মদরা হায় হায় করে উঠেন কেন?  ইমরান খান আরো বলেছেন, “আমি এমন একটা পাকিস্তান গড়ে তুলতে চাই, যেটা হবে মদিনায় নবীর সৃষ্ট প্রথম মুসলিম সমাজের আদর্শে অনুপ্রাণিত।”

তো নরেন্দ মোদি যদি বলেন তিনি ভারতে এমন একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চান যা অযোধ্যায় ভগবান রাম করেছিলেন”- শুনতে কেমন লাগবে তখন আমাদের? উপমহাদেশের বাম, সেক্যুলার, প্রগতিশীলরা ছি: ছি: করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলবেন! কিন্তু তথাকথিত মুসলিম বিশ্বে এই একই রকম চেতনার রমরাম ব্যবসা সুদীর্ঘকাল ধরে চলে আসলেও তারা কেউ নরেন্দ মোদির মত নিন্দিত হয়নি। কারণটি মনে হয় এরকম যে, সমস্ত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো ইসলামিক রাষ্ট্র হবে আর সমস্ত অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোকে ধর্মনিরপেক্ষ হতে হবে!

ইমরান খান, এরদোয়ান, মাহাথি এবং নরেন্দ মোদী- এই চারজনের পরিচয় বলতে গেলে দেখা যায় প্রথম তিন জনের তুলনায় নরেন্দ মোদী রীতিমত ফ্যাসিস্ট ঘৃণ্যিত একজন মানুষ কারণ তিনি ভারতে ‘হিন্দুত্ববাদ’ জাগাতে রাজনীতি করেন। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে হিন্দুত্ববাদী করে তোলায় মোদীকে সেক্যুলার মাত্রই অপছন্দনীয়। তাই নরেন্দ মোদিকে আমাদের কোনভাবেই পছন্দ নয়। কিন্তু বাকি তিনজনের ব্যাপারটা কি?
ইসলামিক খিলাফতের এরতুগ্রুলের শাসনের উপর নির্মিত এই সিরিয়ালে ইসলামিক শরীয়া আইনের শিরশ্ছেদের দৃশ্য দেখানো হয়। কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিহাদ, গণিমতের মাল সবই দেখানো হয় অত্যন্ত গর্ব ভরে। মোঙ্গল, ক্রিশ্চান, বাইজেন্টাইন এবং আনাতোলিয়ার নাইট টেম্পলারের বিরুদ্ধে জিহাদ দেখানো হয় যা পাকিস্তান মালয়েশিয়াতে বসবাসকৃত অমুসলিম নাগরিকদের জন্য বিব্রতকর। ভারতে যদি হিন্দু কোন রাজার শাসন নিয়ে সিরিয়াল নির্মাণ করে মুসলিমদের হানাদারদের ভিলেন চরিত্র হিসেবে দেখানো হয় সেটা কেমন হবে? মুসলমানদের বেশি করে মুসলিম বানাতে ইমরান খান, এরদোয়ান, মাহাথিরের প্রজেক্ট ‘হিন্দুত্ববাদের’ মত সাম্প্রদায়িক খেতাপ পাবে না কারণ আমরা দুমুখো নীতি নিয়ে আগে থেকেই বসে আছি!

কাশ্মীর থেকে হিন্দু পন্ডিতরা উচ্ছেদ হয়েছে তার ৩০ বছর পূর্তি হলো এই ২০২০ ১৯ জানুয়ারি। কাশ্মীরী পন্ডিত ছাড়া বিশ্ব মানবতাবাদীদের এই বিষয়ে কোন সাড়াশব্দ পেলাম না। আমাদের ফেইসবুক বিশ্ব মানবতাবাদীদের কেউও কিছু লিখেনি। একরাতে কয়েক লক্ষ মানুষ নিজ জন্মভূমি, বাড়িঘর সহায়সম্বল ফেলে পালাতে বাধ্য হয়েছিলো। ভারতের অন্যত্র তাদের শরণার্থী জীবন বেছে নিতে হয়। স্বাধীন ভারতে আজ ৩০ বছর তারা তাদের দেশ ছাড়া! একজন কাশ্মীরী পন্ডিতও এই ঘটনায় জঙ্গি হয়ে উঠেনি! হয়ে উঠেনি বিশেষ কোন ধর্ম সম্প্রদায়ের উপর বিদ্বেষময়। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করাই নাকি ইসলামী জঙ্গিবাদ উত্থানের অন্যতম কারণ!
কি ঘটেছিলো ৩০ বছর আগে কাশ্মীরে? শীতের কনকনে রাতে যখন কাশ্মীরের পন্ডিতরা বাড়িতে বসে টিভি দেখছিলো তখন গোটা তল্লাটে শত শত মানুষ ‘আল্লাহ আকবর’ শ্লোগান দিয়ে পন্ডিতদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকে, ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ আর ‘ভারতীয় কুকুররা ফিরে যাও’ । বিবিসির কাছে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা করছিলেন এখন জয়পুরের একটা পন্ডিতদের ক্যাম্পে থাকা নমিতা কাউল, তিনি বলেন, ‘মসজিদ থেকে হাতিয়ার নিয়ে বেরিয়ে দলে দলে মানুষ আমাদের গলি-মহল্লা চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল। বলা হল মেয়েরা থাকবে, কিন্তু পুরুষদের চলে যেতে হবে। দেওয়া হয়েছিল হত্যার হুমকিও। সেদিনের কথা ভাবলে আজও চোখ জলে ভিজে আসে, যে আমাদের জীবনে অমনটাও ঘটেছিল…’।
আশ্চর্য যে ভারতের মানবতাবাদী প্রগতিশীল ও বামপন্থিদের সেভাবে কাশ্মীরী পন্ডিতদের কথা বলতে দেখি না। তারা অন্তত নিজে থেকে এই প্রসঙ্গ তুলতে চায় না। চাড্ডিরা এই ঘটনা নিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক ঘৃণার রাজনীতি করবে বলেই আমাদের সবাইকে একটা জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে চলা মানবতা বিরোধী ঘটনার প্রতিবাদ করব না? দায়ীদের পরিচয় সামনে তুলে ধরব না? ভারতীয় বন্ধুরা, নিজের দেশে একটা ফিলিস্তিনী হয়ে রয়েছে সেদিকে চোখ নেই কিন্তু মধ্যপাচ্যের ইজরাইল দখলদারী নিয়ে আপনাদের ফেটে পড়ে!
সত্য বলতে হবে সত্যের মত করে। সত্যের কোন পোশাক থাকে না সে উলঙ্গ! বলতে হবে ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাজ্য থেকে মুসলিমদের সশস্ত্র জিহাদী এ্যাকশানে ৩০ বছর আগে কয়েক লক্ষ্য কাশ্মীরী পন্ডিত এক বস্ত্রে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলো। কাশ্মীরের রাজ্য সরকার থেকে কয়েকবার পন্ডিতদের ফিরে আসার কথা বলা হলেও আসল সত্য হচ্ছে প্রতিবেশী মুসলিমদের ভয়ে ও নিরাপত্তার শংকায় কোন পন্ডিত এই ৩০ বছরে নিজের জন্মভূমিতে ফিরতে পারেনি। কাশ্মীরের বিশেষ অধিকার বাতিল হওয়ায় আমাদের দুই বঙ্গের প্রগোতিশিলরা ক্ষুব্ধভাবে বলেছিলো এর মাধ্যমে ভারত ভাগের সূচনা হলো। বিশেষ সুবিধা বিলোপের পর কাশ্মীরে হিন্দু পন্ডিতরা ফিরতে পারবে, কাশ্মীরে অন্য ভারতীয়রা ব্যবসা বিনিয়োগ করতে পারবে তাতে মুসলমানরা ভারত ভাগের ডাক দিবে। কিন্তু এক রাতে কয়েক লক্ষ মানুষকে ঘর ছাড়া করলেও ভারতের অখন্ডতায় কোন দাগ পড়ে না? নিজ দেশে পরবাসী হয়ে থাকা একজন কাশ্মীরী পন্ডিতও ‘হরহর মহাদেব’ বলে কোন মুসলমানের উপর হিন্দু জিহাদ চালায় না! কিন্তু কাশ্মীরে সেনা তল্লাসী আর নজরদারীর কারণে কাশ্মীরী যুবকরা সব ‘জইশ-ই মুহাম্মদে’ নাম লেখায়! এই ধরণের লেইম যুক্তি আর কতকাল আওড়িয়ে একটা ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদকে ধর্ম থেকে আড়াল করে পার পাবেন? থাইল্যান্ডের মত টুরিস্ট দেশে গুটিকয়েক মুসলিম বসতির কারণে সেখানেও জিহাদের আগুন কেন জ্বলল? কি তাদের জ্বলা? সারা দুনিয়াতে তারাই একমাত্র নিপীড়িত! তারাই বঞ্চিত তাই আল্লাহ আকবর বলে বোমা মারতে হবে? শ্রীলংকা বার্মা কোথাও কেন মুসলিমরা আজ সন্দেহ মুক্ত নয়? কেন ভারতের একটা মুসলিম প্রধান প্রদেশে মুসলিমদের হাতে অন্য জাতি সম্প্রদায় দেশছাড়া হলো?

ভারতে নাগরিত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাস্তা আটকে নামাজ আদায় আর তাতে হিন্দু শিখদের মানব বেড়িকেড দিয়ে তাকে হাইলাইট করার অর্থ বুঝাও বেশ কঠিন! বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ। এখানে ৯ বছর ধরে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন চলেছে। কখনই সেই আন্দোলনে রাজপথে নামাজ পড়তে দেখা যায়নি। আন্দোলনকারীরা তো ধর্মহীন ছিলো না। নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ আছে। তারা নামাজের সময় সেখানেই যেতো। রাস্তায় নামাজ পড়ে জামাত ইসলামী। রাস্তায় নামাজ পড়ে হেফাজত ইসলাম। ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনে রাস্তায় নামাজ পড়া মুসলিমরা সেই শোডাউন করতে চায় যেটা বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলো পথে নামাজ পড়ে করতে চায়।
হিন্দুত্ববাদ বিরোধী আন্দোলনে কাতার দিয়ে নামাজ আদায়! আন্দোলনকারীদের মাথায় নামাজের টুপি আর তাদের হাতে প্লেকার্ড “ফাক হিন্দুনিজম”।  তাহ‌লে আমরা কি আশা করতে পারি মাথায় টুপি দেয়া মুমিন ভাইটি  ভারতে যে কোন ইসলামিজমের বিরুদ্ধে “ফাক ইসলামিজমে” লিখে এভাবে সমর্থন জানাবে?
হিন্দুত্ববাদ তো নিজ ধর্ম প্রদর্শন আর নিজেদের ধর্ম দেখিয়ে রাষ্ট্রে ধর্মের বলে নিজের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া একটা ফ্যাসিস্ট দর্শন। সেই দর্শনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে এসে রাস্তায় কাতার দিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে লোক দেখিয়ে নিউজ তৈরি করে একটা সাম্প্রদায়িক ইঙ্গিত দেয়া চেষ্টা করা হলো। “আমরা মুসলমান” এই শোডাউন ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের পক্ষে যাবে? মুসলমান মানেই নামাজি পরেজগার তেমন তো নয়।
ঢাকায় মৌলবাদী আন্দোলনের সুতিকাগার হলো বাইতুল মোকাররম মসজিদ। মৌলবাদীরা ধর্ম পরিচয়ে রাজনীতি করে। ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা রাখে। কিন্তু ভারতে হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে দিল্লি জামে মসজিদ থেকে মুসলিমদের হুংকার এলো কেন? যোগিনাথের বদলি যদি দিল্লি মসজিদের পেশ ইমাম হয় তাহলে এই আন্দোলনে মুসলিমদের উদ্দেশ্য আর যাইহোক ধর্মনিরপেক্ষ ভারত নয়।
ভারতের বামপন্থী ফেইসবুকাররা জামিয়ার হিজাবীনিকে আইকন বানিয়েছে। গেরুয়ার বিরুদ্ধে হিজাব! ভারতীয় সেকুলাররা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়নি পরিস্কার। সাম্প্রদায়িক খিলাফত আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে গান্ধী ভারত ভাগের দরজা খুলে দিয়েছিল। “মুসলিম জাতি” পরিচয়ে তুরস্কের ইসলামী খিলাফতের পক্ষে ভারতীয় মুসলিমদের খিলাফত আন্দোলনকে কংগ্রেসের সমর্থন ছিলো ভারতীয় মুসলমানদের সতন্ত্র মুসলিম জাতি পরিচয়কে স্বীকৃতি দেয়া। একারণে মুসলমানের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের দাবী জোরদার হয়েছিল।
মুসলিম একটি ধর্মীয় পরিচয়। এর কোন নৃতাত্ত্বিক জাতি রূপ নেই। মুসলমান নামাজ পড়বে কি পড়বে না সেটা তার ধর্মীয় সিদ্ধান্ত। সে হিজাব বোরকা পড়বে কিনা সেটা তার ধর্মীয় সিদ্ধান্ত। এগুলো তার সংস্কৃতি নয়। কাজাকিস্তানের মুসলমান ভাতের সঙ্গে শিং মাছের ঝোল খায় না। এগুলো বাঙালি সংস্কৃতিগত খাদ্যাভাস তাই বাঙালি মুসলমানেরও খাদ্যাভাস। ইরানের নারীরা হিজাব বোরখার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাতো না যদি এটা তাদের সংস্কৃতিগত পোশাক হত। মোল্লা খোমেনিও তার ইসলামী বিপ্লবের পর বোরখা হিজাব চাপাতো না যদি এটা ইরানীদের সংস্কৃতিগত পোশাক হত। ভারতীয় বামপন্থী ও সেকুলাররা এসব বুঝেন না তা নয়। জয় শ্রীরামকে বিকৃত করে হিন্দুত্ববাদীদের ব্যঙ্গ করলেও আল্লাহ আকবর শ্লোগান নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। তাদের কি মনে হয় আসাদউদ্দিন ওয়াইসিস ধর্মনিরপেক্ষ ভারত চায়? ভারতীয় সেকুলাররা স্রেফ ইসলামিজম নিয়ে খেলছে …।
ভারতের মুসলমানদের আরো বেশি করে মুসলমান করে রাখার জন্য ভারতীয় তথাকথিত সেকুলাররা মসজিদ মাদ্রাসা ইসলামী পার্সোনাল ল’ তিন তালাক চার বিয়ে আর ইমাম ভাতার রাজনীতি করে এতকাল সংখ্যালঘুদের নিয়ে ইসলামী রাজনীতি করেছে। এখন হিন্দুত্ববাদ উত্থানে তাদের সেই সাম্প্রদায়িক মুসলিম তৈরির কারখানা থেকে বের হওয়া মুসলিম প্রজন্ম আসাদউদ্দিন ওয়াসিসের গলাতেই কথা বলবে, মওলানা আবুল কালাম আজাদের মত স্বর বেরুবে না। খবর প্রকাশ, “আগামী মাসেই পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের শাখা খুলতে যাচ্ছে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল-মুসলিমিন (এআইএমআইএম)। বহুদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করছিল আসাদুদ্দিন ওয়াইসির দল”। অর্থাৎ কোলকাতায় ৩০ ভাগ মুসলিম ভোট ইসলামী দলে যাবে আজ হোক কাল হোক। বামপন্থীরা, কংগ্রেস তৃণমূল এমন কোন রাষ্টীয় কার্যক্রম নেয়নি যাতে মুসলমানরা প্রগতিশীল হয়। বরং মসজিদ মাদ্রাসা কেন্দ্রিক মুসলিম তোষণ করে তাদের ইসলামী রাজনীতির দিকেই ঠেলে দিয়েছে। তাই লিখে রাখেন এই পশ্চিমবঙ্গে ৩০ ভাগ মুসলিম ভোট ইসলামী পার্টির দখল হবে। এটা নিশ্চিত হবার পর বিজেপির সঙ্গে বাম কংগ্রেস তৃণমূলের ভোট জোট আমরা দেখতে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করব না। সেদিনই ভারত আবার ধর্মীয় ভাবে ভাঙ্গনের মুখে পড়বে। ইসলামকে টেনে এনে রাস্তায় নামাজ আর হিজাবকে আইকন করার রাজনীতি সেদিন উপযুক্ত জবাব দিবে। এখনো সময় আছে মুসলমান আর ইসলামকে আলাদা করতে চিনুন। ভারতীয় মুসলমানদের মুসলিম জাতি চেতনার বিরুদ্ধে দাঁড়ান। ইসলামকে বাদ দিয়ে তাদেরকে নিয়ে সত্যিকারের ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের পক্ষে আন্দোলন করুন। এরদোনা ইমরানকে নরেন্দ মোদির মতই এক কাতারে ফেলে বিরোধীতা করুন…।

[বিজেপি টাকায় দেয়ায় লেখাটা আবার পুনপ্রকাশ করা হলো! পুরোনো লেখা রি-পোস্ট করতে নগদ বিকাশে অগ্রিম পেমেন্টে অর্ডার নেয়া হচ্ছে!!]

#সুষুপ্তপাঠক

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted