তালিবানদের বিনা যুদ্ধে বিজয়ের কারণ
***********************************
এক সময় আরবদের বেশির ভাগ নাগরিকই গোত্রীয় আইন ও রীতিনীতি ছাড়া অন্য কিছু মেনে চলতে অভ্যস্ত ছিল না। তাদের প্রিয় বস্তু ছিল তিনটি—মদ, নারী ও যুদ্ধ। গোত্রে গোত্রে, পরিবারে পরিবারে একবার যুদ্ধ বেধে গেলে অনেক সময় কয়েক পুরুষ পর্যন্ত চলত। বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য অনেক সময় রক্তের স্রোত প্রবাহে আনন্দ লাভ করত। এসব যুদ্ধ সংঘটনের অন্যতম কারণ ছিল অর্থাভাব, জীবিকার স্বল্পতা এবং শৃঙ্খলা ও ঐক্যের অনুপস্থিতি। যেহেতু যুদ্ধে অর্জিত সম্পদ তাদের অন্যতম উপজীবিকা, তাই শিশুকাল থেকেই তাদের অশ্ব পরিচালনা, শত্রুদের আক্রমণ এবং দ্রুতবেগে পলায়ন—এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হতো । এছাড়া তীর-ধনুক, তরবারি ও বর্শা চালনায় নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।
ঠিক এই বৈশিষ্ট্যগলো আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাখতুন জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে। তবে সম্ভবত মদ বাদ পড়েছে এবং তীব্র ধনুকের জায়গায় কিছু আধুনিক অস্ত্র সংয়োজন ঘটেছে।
তালিবানরা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িঘর ,সম্পত্তি ধ্বংস করছে এবং তাদের জিম্মি ও হত্যা করছে যেন সৈনিকেরা তালেবানদের সাথে যুদ্ধ লিপ্ত না হয় । তাই আত্মীয়স্বজনদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ভয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা তালিবানদের সাথে যুদ্ধ করতে ভয় পেত । প্রতিটি এলাকার মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও ধর্মান্ধরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তালেবানদের বিভিন্ন কাজে সহায়তা করত ।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখা গেছে যুদ্ধক্ষেত্রে বিভিন্ন ইসলামী জংগি গোষ্ঠীর সদস্যরা সাধারণ মানুষদের জঙ্গিদের আত্মরক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।
এরা কখনোই সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় । যুদ্ধ জয়ের জন্য এই সমস্ত জঙ্গিরা যেকোন খারাপ পন্থা অবলম্বন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করে না ।
তালেবানরা কোনো বাছবিচার না করে বেপরোয়াভাবে যুদ্ধ করে। এর ফলে তারা দীর্ঘদিনের বহু চেষ্টায় অর্জিত সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি সমূহ নির্বিচারে ধ্বংস করে ফেলে । আফগানিস্তান পূর্ব থেকেই একটি অনুন্নত দুর্নীতি পরায়ন ও গরিব দেশ । পশ্চাত্য দেশ সাহায্য-সহযোগিতার ফলে তারা শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নয়ন সাধন করেছে ।
সাধারন জনগনের উপর নির্বিচারে আক্রমণ পরিচালনা করার ফলে প্রচুর উদ্বাস্তুর সৃষ্টি হয় । এই উদ্বাস্তুদের সাথে জঙ্গিরা মিশে যায় । এই সকল উদ্বাস্তুদের মধ্যে থেকেই কিছু সংখ্যক জঙ্গি বিভিন্ন স্থানে আত্মঘাতী হামলা সহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে । এই কারণে কিছু কিছু দেশ মুসলিম উদ্বাস্তুদের কে আশ্রয় দিতে অনীহা প্রকাশ করে ।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় সুন্দর প্যারিস নগরীকে ধ্বংস যজ্ঞের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তারা যুদ্ধ না করেই আত্মসমর্পণ করেছিল ।
যখন দেখা গেল তালেবানরা নির্বিচারে বিভিন্ন স্থাপনা ধ্বংস , সৈনিকদের প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সরকারি দলের সদস্যদের আত্মীয়-স্বজনের উপর হামলা, গুম নির্যাতন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে তখনই তারা তালেবানদের বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ করতে অনীহা প্রকাশ করে ।
১৯৪৯ সালে যুদ্ধকালীন সময়ের জন্য একটি আইন প্রণীত হয় যাহা জেনেভা কনভেনশন নামে অভিহিত । এই আইন বা বিধিসমূহ সেই ব্যক্তিবর্গকে রক্ষার চেষ্টা করে যারা সংঘাত বা বৈরিতায় লিপ্ত নয় অথবা যারা সংঘাত ও বৈরিতায় আর অংশগ্রহণ করছে না, যেমনঃ
১ - আহত বা অসুস্থ যোদ্ধা ২-যুদ্ধবন্দী
৩ - বেসামরিক জনগণ
৪ -ধর্ম এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে নিয়োজিত কর্মীবৃন্দ
কিন্তু তালেবানরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আহত ও অসুস্থ যোদ্ধা, ও যুদ্ধবন্দীদের হত্যা করেছে । তারা নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে হত্যা, হয়রানি, অপহরণ , ঢাল হিসেবে ব্যবহার, সম্পদ বিন্যস্ত ও কেড়ে নিয়েছে । এই সমস্ত অপকর্ম সরকার ও সরকারি বাহিনী কখনোই করে নাই । আধুনিক কালে কোন যুদ্ধেই এই ধরনের অনৈতিক কাজ করা হয় না।
এইগুলো মোটেই কোন সৎ,আদর্শবাদী ও বীরের কাজ নয় । বরং এসব সম্ভব কেবলমাত্র ধর্মান্ধ জঙ্গী, চাঁদাবাজ, হেরোইন ব্যবসায়ী, নারী অপহরণকারী ও নৈতিকতা বিবর্জিত তালেবানদের দ্বারা । এই ধরনের একটি ক্রিমিনাল গুষ্টিকে আফগান জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................