আগে চক্ষু লজ্জ্বা বলতে একটা ব্যাপার ছিলো। বিদ্যুৎ উৎপাদনের অজুহাতে হাজার হাজার আদিবাসী পাহাড়ীদের উচ্ছেদ করে কাপ্তাই হ্রদ বাঁধ তৈরি করা হয়েছিলো। কিংবা দেশের চিনির চাহিদা মেটাতে সাঁওতালদের মেরেধরে উচ্ছেদ করা হয়েছিলো। এখন সেরকম জাতীয় উন্নয়ন দেখানোরও দরকার পড়ে না। একটা শিবমন্দির করার জন্যই হাজার হাজার মানুষের মাথা গোজার ঠাঁই থেকে উচ্ছেদ করা যায়। কারণ এরা জানে পাবলিক ধর্ম খেয়ে এখন শুধু বাঁচেই না, সম্প্রদায় ঘৃণা বুকে নিয়ে ঘুমায়ও! আসামে একটি শিবমন্দিরকে বিপুল বিশাল করে গড়ে তুলতে মানুষের মৌলিক অধিকার যে বাসস্থান সেটিকে কি করে একটি সরকার উচ্ছেদ করতে সাহস করে যখন চারপাশে অমানুষের সংখ্যা না বাড়ে?
আসামে শিব মন্দির তৈরি করতে মুসলিম বসতি উচ্ছেদ করা নিয়ে আমি কিছু বলিনি কেন? কাপ্তাই বাঁধ দিয়ে হাজার হাজার আবিবাসীদের উচ্ছেদ নিয়েও তো আমি কোন লেখা লিখিনি। চিনি কলের নাম করে সাঁওতালদের উচ্ছেদ নিয়েও তো আমি কিছু লিখিনি। পাহাড়ে পাহাড়ে রিসোর্ট বাংলো পর্যট্রন করার জন্য মানুষকে তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ নিয়েও তো কথা বলা হয়ে উঠে না। আজকে কথা প্রসঙ্গে কথা উঠল বলে বলা। এই সেদিন কিউবাতে জনবিক্ষোভ নিয়েও তো কিছু লিখলাম না। ভারতীয় বামেরাও কাশ্মীরের হিন্দু পন্ডিতদের উচ্ছেদ নিয়ে কিছু লেখেন বলেন না। বোধহয় পার্টি থেকে নিষেধ আছে। কমিউনিস্টরা আজকের যুগেও বিরল জিনিস। ‘পার্টি’ তাদের বিবেক। পার্টি তাদের চোখ কান। আমার কোন পার্টি নেই। রাজনীতি নেই। ভারতের বামরা যারা আমার সাম্প্রতিক পোস্ট নিয়ে ‘ছুপা হিন্দুত্ববাদী’ বলছেন তারা আমাকে ‘জায়নবাদী’ও বলতে পারতেন কারণ ওখানে তাওরাতের কথাও ছিলো। কিন্তু সেটি বলবে না কারণ ভারতে তাদের হিন্দুত্ববাদই রাজনৈতিকভাবে প্রতিপক্ষ। তাই যাদের কথা পছন্দ হবে না তারা সকলেই হিন্দুত্ববাদী।
আমার লেখার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ। এটা বহুবার বলা একটি কথা। আমি বাংলাদেশের মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধে লিখি। আমি মুসলিমদের ঘা মেরে জাগাতে ব্লগে লেখা শুরু করেছিলাম কারণ আমি ঐ পরিমন্ডল থেকে উঠে এসেছিলাম। এখন আমি বিপ্লব করার জন্য লিখি না। মনে একটা প্রশান্তি নিয়ে লিখি। নিজের জন্য লিখি। আমার লেখায় কিছু হবে সেরকম উদ্ভট ভাবনা নেই। যেহেতু আমার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ তাই মুসলিম মৌলবাদ নিয়েই আমাকে লিখতে হয়। কিন্তু কেউ যখন ইসলাম ধর্মকে জেনারালাইজড করে অন্য ধর্মের মৌলবাদের সঙ্গে সমান করতে চান বিরোধীতা করি। বলি ‘পলিট্রিক্যাল ইসলাম’ না বুঝলে বর্তমান বিশ্বে জঙ্গিবাদকে মোকাবেলা করা যাবে না। ইসলাম রাজনৈতিক ধর্ম। অন্য ধর্মীয় মৌলবাদ আঞ্চলিক, ইসলামী মৌলবাদ বিশ্বব্যাপী। ভারতে বিজেপিকে ছুড়ে ফেলে দিন ভোট দিয়ে। কিন্তু ইরান কিংবা আরব বিশ্বের ইসলামিক ব্যবস্থা কি সেরকম ভোট দিয়ে ফেলা যাবে? ধরুন পাকিস্তান বাংলাদেশ যেরকম মুসলিম ও ইসলামী ভাবধারার রাষ্ট্র সেটি কি ভোট দিয়ে বদলে ফেলা যাবে? যাবে না। কেন বিজেপি ভারতে ভাল ফল করল, পাবলিকের ভোট আদায় করল, কেন বামরা বিলুপ্ত হয়ে গেলো- সে গবেষণাটা যদি বামরা করে তাতে তাদের মঙ্গল হবে- আমি কেন অমুক বিষয়ে প্রতিবাদ করলাম না, তমুক বিষয়ের সময় আমি কোথায় ছিলাম- এসব বলে আপনাদের কি লাভ?
তুলনামূলক ধর্মালোচনা আমার একটি পছন্দের বিষয়। মন্দিরে নারী পুরুষ বসে একত্রে গান শোনা যায়। এটি মসজিদেও হলে কত ভালো হত। এটি একটি তুলনা। এতে হিন্দু ধর্মের মহত্ব যদি বলা হয়ে থাকে তাহলে হিন্দু ধর্মের সমালোচনা করা লেখাগুলো কি ধারার? বাংলাদেশের হিন্দু নারীদের জন্য সম্পত্তির অধিকার, তালাকের অধিকার নিয়ে যেমন লিখি তেমনি ভারতে তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন পাশ হলে খুশি হই। আইনটা বিজেপি করল বলে আমার কিছু যায় আসে না। ভারতে মুসলমানদের জন্য যেদিন মাদ্রাসা শিক্ষা বাতিল করে একমুখী শিক্ষা চালু হবে সেদিন উল্লাস করব। কাজটা বামরা করবে না। যদি হিন্দুত্ববাদীরা করে তো কি আসে যায়? ভাল তো মুসলিমদের হবে। যারা পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চায় তাদের ধান্দা আছে মুসলিম ভোট নিয়ে। হিন্দুত্ববাদীদেরও আছে। আমার কোন পার্টি নেই। আসামের উচ্ছেদ হওয়ার মানুষগুলো বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়ে বলেছে, তাদের লড়াই তারা একা লড়বে। কংগ্রেস বাম এখানে ঘোলা জলে মাছ মারতে আসলে পিটিয়ে খেদিয়ে দিবে। সাবাস! পলিটিক্যাল অনুভূতি কারবারীদের পিটিয়ে আগে শিক্ষা দিক!
-সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................