কলাবাগান মাঠে দুর্গা পুজার অনুমতি দেয়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আমি জানতে চাই, কলাবাগানে পুজা হলে কি সেখানে পুলিশ চব্বিশ ঘন্টা বসে পাহারা দিতো না? এই পাহারাটা কাদের ভয়ে? কারা পুজায় হামলা করতে পারে বলে শংকা? যদি এরা শক্তিতে দুর্বল হতো তাহলে এদের ভয়ে পাহারা বসাতে হতো না, এরাই বরং জলে থাকত।
পুজা শুরুর আগেই যদি ঘটা করে বলে দেয়া হয়, আজানের সময় বাজনা বন্ধ রাখতে হবে, মসজিদের পাশ দিয়ে যেতে হলে বাদ্য বন্ধ রাখতে হবে সেখানে পুজা করার দরকারটাই কি? আজানের সময় বাদ্য বন্ধ রাখার নাম যদি সম্প্রীতি হয় তাহলে পুজার আরতীর সময় আশেপাশের মাইকে আজান বন্ধ রাখা কি সম্প্রীতির নির্দশন হবে না? পৃথিবীতে অন্তত একটি উদাহরণ কেউ দেখাক যেখানে আরতি পুজা প্রার্থনার ব্যাঘাত হতে পারে ভেবে মসজিদে ঐ সময় মাইকে আজান দেয়া হয়নি। কেউ দেখাতে পারবে না। কোলকাতার পুজার মন্ডবে সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দিতে আজান সম্প্রচার করা হয়েছিলো। যদিও আরবীতে আজানের বাণীতে কোন সম্প্রীতি থাকে না। আজানে বলা হয় আল্লাহ ছাড়া আর কোন ঈশ্বর (মামুদ) নাই। এরকম ভাষ্য কি সম্প্রীতি তৈরি করবে দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে?
“মুসলিম দেশ” হিসেবে যখন কোন রাষ্ট্র নিজেকে পরিচয় দেয় তখন সেখানে বসবাস করা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান আদিবাসীদের কাছে সেই রাষ্ট্র হয়ে উঠে বিমাতা। “মুসলিম দেশ” হয়েও নিজেকে অসাম্প্রদায়িক পরিচয় দেয়াটা ভন্ডদের রাজনৈতিক ব্যবসা। এই রাজনৈতিক সাইনবোর্ডের আড়ালে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ১০৫২২ বর্গ কিলোমিটার জমি শত্রু সম্পত্তি (পোগতিশীলদের সংশোধনীতে অর্পিত সম্পত্তি) দখল হয়ে গেছে। আবুল বারাকাতের তথ্য থেকে এই বিপুল পরিমাণ জমি হারানোর পরিসংখ্যান জানা যায়। জমির এই আয়তন ইজরাইল রাষ্ট্রে অর্ধেক! মানে ইজরাইল ফিলিস্তিনিদের যে পরিমাণ জমি দখল করেছে বাংলাদেশ তার অর্ধেক দখল করে নিয়েছে কিন্তু টু শব্দটি হয়নি। কারণ বাংলাদেশের মুসলিম বুদ্ধিজীবী, মুসলিম সাংবাদিক, মুসলিম এক্টিভিস্টদের কাছে বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে হিন্দুরা ভারতের চেয়েও ভালো থাকে। সরকার তাদের “সুরক্ষা” দেয় সবচেয়ে বেশি। বুঝলেন তো, “সুরক্ষা” দেয়া হয় হিন্দুদের! এই সুরক্ষার নেপথ্য যে আসল চেহারা সেটি নিয়ে কেউ কথা বলতে চায় না জনসমর্থন হারাতে। যেমন ধরেন বামপন্থিরা সারা বিশ্বের নিপীড়িতদের নিয়ে কর্মসূচী দিলেও বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে সেভাবে প্রচার প্রচারণা চালাতে চায় না কারণ সেগুলো দেশের ৯০ ভাগ মুসলমান ভালো ভাবে নিবে না। বাংলাদেশের হিন্দুদের অবস্থা নিয়ে কোন হিন্দু মুখ খুললে তাকে পোগতিশীল মুসলমানদের হাতে কুপিত হতে হবে। প্রিয়া সাহার মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে হিন্দু সংখ্যালঘুদের বিষয়ে বক্তব্য রাখার পর দেশের টকশোগুলোতে পোগতশীলরাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে দাবী করেছিলো। বিজেপির রাজনৈতিক এজেন্ডা নাকি এখানে বাস্তবায়ন হয়েছে। ভারতের চেয়েও নাকি এখানে হিন্দুরা রাজার হালে আছে। তাদের দেশপ্রেম নেই বলেই তারা দেশ ত্যাগ করে...।
প্রত্যেকটি “পোগতিশীল” বাংলাদেশীর কাছে আমেরিকা হচ্ছে এক নম্বরের বর্ণবাদী দেশ। নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলা হয়েছে মানে ওয়েস্টানদের সাম্প্রদায়িক বর্ণবাদী পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু একজন কালো ছিঁচকে চোরকে পুলিশ নির্যাতন করে মারার পর গোটা আমেরিকা হাঁটু গেঁড়ে বসে যে ক্ষমা ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান জানাল, যেভাবে বর্ণবাদীরা কোণঠাসা হলো তারপরও আমেরিকা বর্ণবাদী দেশ হয় কি করে? নিউজিল্যান্ডের সরকার যেভাবে মুসলিম কমিউনিটির পক্ষে দাঁড়াল, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে আজান প্রচার হলো, প্রধানমন্ত্রী হিজাব পরল- তারপরও নিউজিল্যান্ডও সাম্প্রদায়িক দেশ বলাটা, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটলে “নিউজিল্যান্ডেও এরকম ঘটনা ঘটে” যারা বলে তারাই “পোগতিশীল সাম্প্রদায়িক” শক্তি। বাংলাদেশ পাকিস্তানে “ডিম বালক” বলে কোন প্রতিবাদী জনতা সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্য থেকে আসে না। মনে করেন মামুনুল হকের সাম্প্রদায়িক উশকানির মুখে কোন বালক তার মুখে ডিম ছুড়ে মারত সে কি বাংলাদেশে হিরো হয়ে উঠতে পারত? ডিম নয় একটা ফেইসবুক পোস্ট ছুড়ে মেরেই দেড় বছর ঝুমন দাশ জেল খেটেছে। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক তাদের বসতবাড়িতে হামলা লুটপাট চালিয়েছে। গোলাম আযমের মত একটা কুখ্যাত যুদ্ধপরাধীর কফিনে জুতা ছুড়ে মেরে ব্লগার মাহমুদুল হক মুন্সি দেশে থাকতে পারলেন না। তিনি তো “ডিম বালকের” মত জাতীয় হিরো হতে পারতেন। কিন্তু তার নিরাপত্তার অভাব যে দেশ মেটাতে পারেনি সে দাবী করে তারাই বিশ্বের সবচেয়ে শান্তি সুখি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র!
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের রানা দাশগুপ্ত বলেছেন পুলিশ প্রহরায় যে দেশে পুজা করতে হয় সেটাকে সম্প্রীতি বলে না। আরে ভাই দু:খ করেন কেন, পাকিস্তানের শিয়া মসজিদেও পুলিশ পাহারা দিতে হয়, বাংলাদেশের বাইতুল মোকারররমেও পুলিশ পাহারা বসে মাঝে মাঝেই, যখন এদেশে একটি হিন্দুও থাকবে না তখন পাড়ায় পাড়ায় পুলিশ বসে মসজিদ পাহারা দিবে। মাযহাবে মাযহাবে বিরোধ, জোরে আমিন আস্তে আমিন গ্রুপ, লম্ব দাড়ি খাটো দাড়ি গ্রুপও একে অপরের মসজিদে হামলা চালাবে। তাই দু:খ না করাই ভালো...।
-সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................