আমার প্রশ্ন, রমনা কালি মন্দির পুনর্নির্মাণ করার জন্য ভারত সরকার টাকা দিবে কেন? ভারত ‘হিন্দু’ তাই মন্দির তৈরি করতে পয়সা দিবে? নরেন্দ্র মোদি সরকার নিজেদের সেরকম পরিচয়ই দেয়। যদিও ভারত রাষ্ট্র সাংবিধানিকভাবে সেক্যুলার।
তাদের প্রজাতন্ত্রে কোন রকম ধর্মীয় পরিচয় নেই। বাংলাদেশ সরকার মন্দিরটি সংস্কার করতে একটি পয়সাও খরচ করতে চাইল না কেন? বাংলাদেশ মুসলমান? কাগজে কলমে সেটি অবশ্য সত্যি।
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকার পরও যে রাষ্ট্র বলবে তারা অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ তারা মুনাফিক! সে হিসেবে বাংলাদেশ সরকার যে রমনা মন্দির নির্মাণে একটি পয়সাও খরচ করেনি সেটি বোধগম্য। এ পর্যন্তও না হয় বুঝা গেলো। কিন্তু রমনা কালি মন্দির মামলার আসামী স্বয়ং বাংলাদেশ রাষ্ট্র! হিন্দু মন্দিরের জমি আত্মসাতের আসামী ‘বাংলাদেশ’!
১৯৮৪ সালে ঢাকার দেওয়ানী আদালতে মন্দির উদ্ধারকারীরা বহু বছর সরকারের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে শেষে সরকারকেই আসামী করে একটি মামলা করেন। রমনা কালি মন্দিরে ২৭ মার্চ রাত দুটোর সময় যে ভয়ংকর ম্যাসাকার ঘটে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে সে ইতিহাস বাংলাদেশ সরকারী বেসরকারী কোনভাবেই কেউ সংরক্ষণ করেনি। ২০০০ সালে একটি কমিশন গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার বিবরণ জানতে সেসময় হতদের পরিবারগুলোকে খোঁজ করা শুরু হয়।
বিস্মরণের কারণটি বুঝতে ১৯৭২ সালের ঘটনাকে সামনে আনলেই হবে। দেশ স্বাধীন হবার পর বাংলাদেশ সরকার ৭২ সালে রমনা কালি মন্দিরের সম্পত্তি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধিনে ন্যাস্ত করে মন্দিরের ৭১-এর ধ্বংসাবশেষ টুকুও বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। এরপর থেকে এখানে পুজা করার কোন অনুমতি বাংলাদেশের কোন সরকার দেয়নি। শুধুমাত্র ১৯৮৪ সালে একবারের জন্য কালি পুজার অনুমতি দেয়া হয়েছিলো।
পাকিস্তানী সেনাবাহিনী একটি হিন্দু মন্দিরের চূড়া মুসলমানদের দেশে মাথা তুলে থাকবে যাকে বহুদূর থেকে দেখা যায় সেটি সহ্য করতে পারেনি।
এমনকি এদেশের সঙ্গে হিন্দু ঐতিহাসিক সত্যকে মুছে ফেলতে না পারলে পাকিস্তানের আইডলজি কোনদিন শক্তিশালী করা যাবে না সেটি তারা মাথায় রেখেছিলো।
পাকিস্তানীদের না হয় বুঝলাম, কিন্তু বাংলাদেশের আপারময় জনসাধরণের কি খবর? বাংলাদেশের একটি মুক্তিযুদ্ধের সিনেমাও পাওয়া যাবে না যেখানে রমনা কালিবাড়ি হত্যাযজ্ঞের ঘটনা উঠে এসেছে।
লাইনে দাঁড় করিয়ে ভক্ত নারী পুরুষ শিশুদের কলেমা পড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। নারীরা বাঁচতে নিজেদের হিন্দু পরিচয় লুকাতে শাঁখা সিঁদুর মুছে ফেলেও রেহাই পায়নি। সিনেমায় এরকম দৃশ্য এদেশের মুসলমানরা বেজায় মাইন্ড করবে। রাজাকারদের দাড়ি টুপি নিয়েই তাদের আপত্তি এতে ইসলামকে হেয় করা হয়। নাসিরউদ্দিন ইউসুফ ‘একাত্তরের যীশু’ নামে একটি সিনেমা বানিয়েছিলেন।
সেখানে একটি গির্জার হত্যাকান্ড নিয়ে মামুলি একটি ইতিহাস দেখানো হয়েছিলো অতি সাধারণভাবে। তিনি রমনা কালি মন্দির নিয়ে সিনেমা বানাননি সংগত কারণেই।
কোন উপন্যাসিক কি এটা নিয়ে কোন উপন্যাস লিখেছে? উল্টো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে ‘হিন্দু হলোকাস্ট’ ঘটেছিলো বললেই একদল ‘মুক্তিযুদ্ধের গবেষক’ ফাল দিয়ে উঠে বলে, বিজেপি র আরএসএস এজেন্ট!
-সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................