পৃথিবীতে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে কবর দিতে না পারলে মানুষের রক্তে মানব সভ্যবতা বিলুপ্ত হয়ে যাবে...।

হিন্দু ধর্মে এক সময় সতীদাহ প্রথা ছিলো, আর ইসলাম ধর্ম আজো পৃথিবীতে নারীদের জীবন্ত চিতায় পুড়িয়ে মারছে। আফগান, ইরানের নারীরা ইসলামী শাসনে পুড়ছে। পৃথিবীতে আর একটি ধর্ম দেখান  যে ধর্মটি মেয়েদের ফুটবল খেলার কারণে দেশছাড়া করছে, ভলিবল খেলার কারণে নারী খেলোয়াড়কে শিরচ্ছেদ করছে- দেখাতে পারবেন না, কিন্তু ইসলাম বর্তমান বিশ্বেই সেটি করিয়ে দেখাচ্ছে।


খ্রিস্টান ধর্মও নারীদের তালাকের অধিকার দেয়নি। হিন্দু ধর্মও নারীদের তালাকের অধিকার দেয়নি। সম্মত্তিতে হিন্দু খ্রিস্টান কোন ধর্মই নারীদের অধিকার দেয়নি। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে এমন কোন সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু বা খ্রিস্টান দেশ নেই যারা নারীদের তালাক ও সম্পত্তিতে সমান অধিকার দেয়নি। কিন্তু ইসলাম এখনো দিকে দিকে তালাক ও সম্পত্তিতে তার বৈষম্য জারি করে রেখেছে।

এক সময় খ্রিস্টানরা ক্রুসেড করেছে। কিন্তু পৃথিবীতে আজ কোথাও কি ‘খ্রিস্টান শাসনতন্ত্র’ বলতে কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে? কোথাও কি ‘বাইবেলের শাসনের জন্য’ জঙ্গিরা বোমা মারছে? কোথাও কি বেদের শাসনের জন্য তোরজোড় দেখা যাচ্ছে? যাচ্ছে না। ধর্মীয় কোন শাসনই ঐ দেশগুলিতে নেই। খ্রিস্টান, হিন্দু বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদ বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। ইউরোপীয়নাদের কেউ বলে না ‘খ্রিস্টান শাসন’। বলার যুক্তি সঙ্গত কারণও নেই। কিন্তু এখনো পৃথিবীবাসীকে পড়ানো হয় ‘ইসলামের ইতিহাস’ নামে কিছু আরব তুর্কি আফগান নৃশংস বর্বর দস্যুর শাসনকে। ওআইসি নামের একটি মুসলিম সংগঠন গোটা বিশ্বকে মুসলিম ও অমুসলিমভাবে বিভক্ত করে ফেলেছে। ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠা হতে দেখা যাচ্ছে বিশ্বের আনাচে কানাচে। একটি মাত্র ধর্ম আজো বিশ্বের কোথাও না কোথাও প্রতিশোধের নামে, শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে হত্যা বোমাবাজী চালিয়ে যাচ্ছে- তবু আলোচক, পন্ডিত, বুদ্ধিজীবীরা ইসলামকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেন না। বর্তমান পৃথিবীতে এই ধর্মটিকে একটি সমস্যা হিসেবে দেখেন না। যে ধর্মটি এই একুশ শতকে এসেও ‘যৌনদাসী’ কি, গণিমতের মাল কি চাক্ষুস দেখালো তবু সে ধর্মটি এখনো অন্যান্য ধর্মের সঙ্গে কি করে সমান মর্যাদা পায়? নাদিরা মুরাদ সিরিয়ার ইয়াজিদি নারীটির বইয়ে ইসলামিক স্টেটের হাতে ইয়াজিদি নারীরা কিভাবে কুরআনের ব্যাখ্যায় যৌনদাসী হয়েছে তা বলা হলেও কউ কি ইসলামকে দায়ী করেছে? সেই তারাই আজো একটানা বলে যাচ্ছে হিন্দু ধর্মে সতীদাহ প্রথা মানে স্বামীর মৃত্যুর পর হিন্দু নারীকে পুড়িয়ে মারার বর্বর প্রথা, আজো পাঠ্য বইতে এটা না পড়লে কি করে বাচ্চারা বুঝবে হিন্দু একটা বর্বর ধর্ম? খ্রিস্টানরা ক্রুসেড করেছে সেটি না জানলে কি করে তাদের উপনিবেশিক বলে বাচ্চাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে? আর সাতশো বছরের ইসলামী শাসনকে মহিমান্বিত করে দেখানো হবে। সেটি যে উপনিবেশ ছিলো সেটি কখনো বলা যাবে না। বলা যাবে না ইসলামী শরীয়া আইন আজো সদা তত্পর। মনুর বিধান আজ প্রায় মৃত। তবু ‘মনুবাদী’ বলে লোকজনকে কঠাক্ষ করা গেলেও কাউকে জিহাদী বললে সেটি ‘ইসলামফোবিয়া’ বলে গোণ্য হবে! আজো পৃথিবীতে পাকিস্তানের মত দেশ আছে যেখানে মন্দির গির্জা বানানোর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আইন পাশ হয়। আজো বাংলাদেশের মত দেশ আছে যেখানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। তবু তারা কেউ মৌলবাদী নয়! সেখানে কেউ সংখ্যালঘু নয়। ভারতীয় হিন্দু ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা বাম অথবা লিবারাল সেক্যুলারদের জিজ্ঞেস করে দেখুন তারা ইসলামকে সক্রিয় উপনিবেশবাদী মনে করে কিনা- উত্তর পাবেন এগুলো পশ্চিমাদের টাকা খেয়ে নাস্তিকরা বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। ভিএস নাইপল যখন লিখলেন ইসলাম ভাষা ও সাম্রাজ্যের উপনিবেশ চালায় তখন প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলেন আরব খ্রিস্টান বামপন্থি বুদ্ধিজীবী লেখক এডওয়ার্ড সাঈদ! একারণেই আজো ইসলাম ১৪০০ বছর আগের নারী রাষ্ট্র রাজনীতি নিয়ে তাদের মধ্যযুগীয় অবস্থান ধরে রাখতে পারছে। ফলশ্রুতিতে অভিমানে ক্ষোভে দিকে দিকে দেখতে পাচ্ছি অন্যান্য ধর্মীয় পরিচয়ে পাল্টা রাজনৈতিক বলয় তৈরি হচ্ছে। এর কোনটিই পৃথিবীর জন্য সুখকর নয়। পৃথিবীতে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে কবর দিতে না পারলে মানুষের রক্তে মানব সভ্যবতা বিলুপ্ত হয়ে যাবে...।

-সুষুপ্ত পাঠক

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted