বাংলাদেশে অভিজিত হত্যার রায় যেখানে হয়ে গেছে সেখানে আমেরিকা অভিজিত হত্যার তদন্তই এখনো শেষ করেনি! তারা ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে খুনিদের সম্পর্কে তথ্য দিতে। তারা বলেছে এরা বাংলাদেশের মধ্যেই অবস্থান করছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও একাধিকবার বলেছিলেন অপরাধীরা নজরদারিতে আছে। তবু কেউ ধরা পড়ে না। কথিত মেজর জিয়াকে হয়ে উঠেন ধরাছোঁয়ার বাইরের কেউ।
তাকে দেশের গোটা গোয়েন্দা ছক দিয়েও ধরা যায় না। এর মধ্যেই বাংলাদেশের আদালত একদম নিশ্চিত হয়ে অপরাধীদের ধরে ধরে রায় দিয়ে ফেলে। অভিজিত হত্যা মামলা সমাপ্ত হয়ে যায়। আমরাও তৃপ্তির ঠেকুর তুলি। কিন্তু বাংলাদেশের বিচার কার্যক্রম নিয়ে চরম অসন্তুষ্ঠ প্রকাশ করেন অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়। অভিজিতের স্ত্রী ও লেখক বন্যা আহমেদ সেদিন যিনি ঘটনার সময় অভিজিতের সঙ্গে ছিলেন, তিনি নিজেও হামলার শিকার, তিনি কি বলেছিলেন এই মামলার তদন্ত নিয়ে? তিনি ফেইসবুকে পরিস্কার করে বলেছেন, এই মামলার তদন্ত নিয়ে তদন্ত বাহিনী তার সঙ্গে কোন রকম যোগাযোগ করেনি।
বন্যা লিখেছিলেন, ‘গত ছয় বছরে এই মামলার তদন্তকারী কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। যদিও আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী এবং হামলার একজন ভিকটিম। জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রকাশ্যে মিথ্যা বলেছেন যে আমি সাক্ষ্য দিতে রাজি নই। আসল কথা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে সরকারের কেউ কিংবা প্রসিকিউশনের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।...‘বাংলাদেশের পুলিশ ক্রসফায়ারের নামে জঙ্গি সংগঠনের উচ্চপর্যায়ের সদস্য মুকুল রানা শরীফকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করে, যে কিনা আমাদের ওপর হামলাকারী জঙ্গি সংগঠনের সদস্য ছিল। শরীফ পুলিশের হেফাজতে ছিল, তাকে কেন মারা হলো?’
তদন্ত ও বিচারে যে কি পরিমাণ নাটক করা হয়েছে সেটি আমরা বন্যা আহমেদের পোস্ট থেকে বুঝে নিলেও এফবিআই সেটা তথ্য প্রমাণে ভিত্তিতে বুঝে নেয়। তাই বাংলাদেশে অভিজিত হত্যার রায় দিয়ে দেয়ার পরও অভিজিতের খুনিদের সম্পর্কে তারা তথ্য পেতে অর্থ ঘোষণা করে। মানে আমেরিকা তাদের তদন্ত জারি রেখেছে এবং অভিজিতকে কারা খুন করেছিলো, কারা কারা জড়িত, কারা পৃষ্ঠপোষক, কারা রক্তের দাগ মুছে ফেলতে সহযোগীতা করেছিলো সব এক সময় জানা যাবে। ফারসিন মোহাম্মদ সেদিন বইমেলায় বেশি রাত করে অভিজিত রায়কে আড্ডায় আটকে রেখে হত্যা জন্য সুবিধাজনক সময় তৈরি করে দিয়েও সে তদন্ত কর্মকর্তাদের নজর কাড়তে পারল না।... এরকম শত শত প্রশ্ন তোলা যাবে সাধারণ মানুষের অবস্থান থেকে। তারা এটাও এখন মেলাচ্ছে যে, আমেরিকার একের পর এক নিষেধাজ্ঞার পেছনে অনেকগুলো হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচার নিয়ে বড় রকমের যে অন্যায় করা হয়েছে তার ফলশ্রুতিতে ভূমিকা রাখছে।
আমেরিকার একের পর এক নিষেধাজ্ঞাকে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকার পাকিস্তানকে সমর্থন ও পরাজয়, ভিয়েতনাম থেকে পরাজয় নিয়ে ফেরা এগুলো তুলনা করে নিজেকে আর আহাম্মক প্রমাণ করবেন না। আমেরিকাকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি ট্রল বিদ্রুত করে বামপন্থিরা। আমার জানাশোনা প্রায় সব তারকা বামপন্থিদের প্রথম পছন্দের দেশ হচ্ছে আমেরিকা। যদি তাদের কোথাও সেটেল্ড করার প্রয়োজন হয় তো সেটা হবে আমেরিকা। কারণ আমেরিকা বহির্বিশ্বে তাদের রাজনীতি যেটাই হোক- তাদের নাগরিকদের বিষয়ে শতভাগ সত। আমেরিকার একজন নাগরিক ঢাকার বইমেলাতে এসে খুন হলেন এবং খুনিদের বাংলাদেশ সরকার ‘নজরদারীতে’ রেখেও ধরতে পারল না, কাউকে ছাড় দেয়া হবে না, তাদেরও উচিত হয় নাই ধর্ম নিয়ে লেখা- এইসব জিনিস দিয়ে আমেরিকাকে বুঝানো যাবে না। তারা তাদের একজন নাগরিক ঢাকায় এসে খুন হয়েছিলো তার রহস্য বের করে ছাড়বেই।
আমেরিকা উন্নয়ন দেখে হিংসায় জ্বলছে না। তারেক জিয়া টাকা খাইয়ে আমেরিকাকে দিয়ে ষড়যন্ত্র করাচ্ছে এগুলো হাটে মাঠে গিয়ে বললে কিছু কাজ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ যে ঘোর বিপদে পড়তে যাচ্ছে তা নিশ্চিত জেনে রাখেন। নরহত্যার মত অন্যায় কিছুতে নেই। রাষ্ট্র যদি সেই হত্যা বিষয়ে অবহেলা করে, খুনিদের ধরতে রাজনীতির ছক্কা পাঞ্জার হিসেব কষে তাহলে তা হয় রাষ্ট্রীয় ‘পাপ’! বাংলাদেশের হাতে শেখ রাসেলের মত নিষ্পাপ শিশুর রক্ত যেমন লেগে ছিলো, তেমন ত্বকির মত কিশোরের রক্ত লেগে আছে। আছে লেখক ব্লগারদের রক্ত। ২১ বছর পর রাসেলের খুনিদের বিচার হয়েছে। অভিজিত ত্বকির খুনিদেরও বিচার হবে। যত বছর লাগুক, খুনি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের অন্তত মুখোশ খুলবেই।
-সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................