ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের অনৈতিকতা
--------------------------------------
আমাদের পরিবার যেখানে বাড়ি করে তার থেকে মাত্র 200 গজ দূরে ঠিক একই সময়ে একজন মহিলা ৬ ডেসিমাল জায়গার ওপর একটা বাড়ি তৈরি করে। মহিলার একজন মাত্র মেয়ে। আলোচনার সুবিধার্থে তার একটা ছদ্মনাম দেই। ধরুন তার নাম জমিলা। তার মেয়ের নাম শাহনাজ। শাহনাজের জন্মের কিছুদিন আগেই পেটে সন্তান নিয়ে জমিলা তার স্বামীকে ছেড়ে চলে আসে। স্বামী ছিল খুব বাজে চরিত্রের নেশাখোর একজন মানুষ। জমিলা চলে আসার পরে স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করে। জমিলা আমাদের বাড়ির পাশে একটি বিশাল ফ্যাক্টরিতে চাকুরীরত একজন অফিসারের বাসায় কাজ করতো। আমাদের নতুন বাড়ির পাশের জমিটি সেই অফিসারের হওয়ার সুবাদে তার সাথে আমাদের পরিচয় হয়। একপর্যায়ে সেই অফিসার জমিলা কে তার ফ্যাক্টরিতে কাজ দেয়। সেখানে জমিলা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতো। জমিলা যখন তার বাসায় কাজ করতো, সেখানে মা মেয়ের খাবার হয়ে যেত। খাবার-দাবারের পাশাপাশি অফিসার জমিলাকে কিছু মাসিক বেতন দিত।
.
জমিলার আট-দশ বছরের জমানো টাকা দিয়ে এই ৬ ডিসিমাল জমি অফিসার জমিলাকে কিনে দেয়। জমিলা যখন জায়গা কিনে, ৯০ দশকের শুরুর দিকে তখন প্রতি ডেসিমাল মাত্র ৫ হাজার টাকা ছিল। আর জমিলা যখন মারা যায় তখন প্রতি ডেসিমাল জায়গার দাম হয় চার লাখ টাকা।
জমিলা সেই জায়গার উপরে টিনের ঘর করে এবং মেয়েকে নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করে। ধীরে ধীরে সে কয়েকটা ঘর তৈরি করে। যেহেতু ফ্যাক্টরি এলাকা, তাই সেগুলো ভাড়া দিয়ে বাড়িটাকে আরো বৃদ্ধি করে। 2014 সালের দিকে জমিলা মারা যায়। যখন সে মারা যায় তখন তার বাড়ির মূল্য কমপক্ষে 40 লক্ষ টাকা। এই বাড়িটি জমিলার 30 বছরের ঘাম ঝরানো টাকার ফসল। তার স্বপ্ন একটাই ছিল। তার নিজের সন্তানের জন্য একটা সুখের নীড় তৈরি করে দিয়ে যাওয়া। জমিলা সফল হয়েছে। আমার কাছে জমিলা ছিল সফলতার আকৃষ্ট উদাহরণ। নারী স্বাধীনতা এক জ্বলন্ত প্রমাণ। তাকে আমি সম্মান দেখাতাম।
.
জমিলার মৃত্যুর পর শাহনাজের উপর দিয়ে ওয়ারিশদের জমিলার বাড়ি দখল নিয়ে যে ঝড় বয়ে যায় ইসলামী উত্তরাধিকার নীতির অনৈতিকতা এর একটা জ্বলন্ত প্রমাণ।
.
যেহেতু জমিলার একমাত্র মেয়ে তাই জমিলার রেখে যাওয়া সম্পত্তির অর্ধেকের মালিক হয় শাহনাজ। শাহনাজকে পেটে রেখে জমিলা তার স্বামীকে ছেড়ে চলে আসে। কখনো স্বামী তার খোঁজ নেয় নি। স্বামী তাকে তালাক দেয় নাই, জমিলা ও তাঁর কাছে কখনো ফেরত যায় নাই।
.
ইসলামি উত্তারাধিকার নীতির ফলে জমিলার মৃত্যুর পরে জমিলার রক্ত পানি করা এই সম্পদের অর্ধেক তার স্বামী এবং জমিলার ভাইরা পেয়ে যায়। যেভাবেই হোক শাহনাজের বাবা তার অংশ মেয়েকে লিখে দিয়ে যায়। এটা আমি শুনেছি আমি নিশ্চিত নই। তবে তার মামারা তাদের অংশ বিনা পয়সায় দেয় নাই। তার মায়ের সুবাদে শাহনাজ ফ্যাক্টরিতে চাকরি পায়। শাহনাজের সেই ঘাম ঝরানো টাকা দিয়ে শাহনাজের মায়ের রেখে যাওয়া জমি তার মামাদের থেকে আবার কিনতে হয়েছে। এর চাইতে মর্মান্তিক আর কি হতে পারে? হ্যাঁ, এটাই ফালতু ইসলামী উত্তরাধিকার আইন। নিজের মায়ের রেখে যাওয়া বাড়িটা পুরোপুরি ফেরত পেতে গিয়ে তাকে পনের লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়েছে।
.
এটা কেমন আইন? একজন মানুষের সম্পদ অর্জনে যেখানে অন্য কারো কোন অবদান নেই সেখানে সেই মানুষটার অর্জিত সম্পদের মালিক হয়ে যায় সেই সমস্ত লোক যারা তার জীবদ্দশায় কোন উপকারে আসে নাই। সেখানে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর কি করে এই মানুষগুলো অধিকারপ্রাপ্ত হয়? একজন মানুষ যা কিছু অর্জন করে যা কিছু জমা করে সবকিছুই করে তার সন্তানদের জন্য। অন্য কারো জন্য নয়। এমনকি তার নিজের ভাই-বোনদের জন্য নয়। অথচ একজন মানুষের ঘরে মেয়ে সন্তান হয়ে গেলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির পুরোটা সেই মেয়েরা মালিক হয় না এর চেয়ে মর্মান্তিক কি হতে পারে? এটা নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে ইসলামী ধর্মীয় আইন কোন প্রাণী ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত নয়। এটা একান্তই অনুর্বর মস্তিষ্কের ফালতু চিন্তার ফসল।
.
জমিলা বেঁচে থাকা অবস্থায় সে কি তার ভাই-বোনদেরকে এমনি এমনি 10 লাখ টাকা দিয়ে দিত? যদি তাই না দিত তাহলে তার মৃত্যুর পরে কিভাবে তার ভাই বোনেরা তার রেখে যাওয়া সম্পদের থেকে 10 / 15 লাখ টাকা পেয়ে যায়? এটা থেকে প্রমাণ হয় ধর্মীয় আইন কখনো সর্বজনীন হয়না। হতে পারে না। যেকোনো কোথাও সঠিক মনে হবে। কোথায় সেটা সর্বমোট ঠিক মনে হবে। জমিলার সম্পদের ক্ষেত্রে ইসলামী আইন 100% অনৈতিক।
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো - কোন লোক যদি তার ১ স্ত্রী ৩ কন্যা এবং তার মাতাপিতা রেখে মারা যায়, তাহলে তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ইসলামীক উত্তরাধিকার সূত্রে হিসাব মেলে না। কারণ ল্লাহর গণিতশাস্ত্রে জ্ঞান একটু কম।
সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে এই প্রশ্ন হুজুরদের কাছে করার পরে। তারা অসহায় হয়ে পড়ে, কারণ তারা এখানে বলতে পারে না - আগের আয়াত এবং পরের আয়াত দেখতে হবে। প্রেক্ষাপট দেখতে হবে। অনুবাদ ভূল আছে।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................