জ্ঞান বিরোধী মুসলমানরা যেভাবে পৃথিবী ও সভ্যতাকে পিছিয়ে দিয়েছে হাজার হাজার বছর:
ছাত্র জীবনে একটা সারাংশ আমরা প্রায় সবাই পড়েছি, সেই সারাংশের শুরুটা হলো- “কোনো জাতিকে যদি ধ্বংস করে দিতে চাও, তাহলে তাদের লাইব্রেরীগুলো ধ্বংস করে দাও এবং সমস্ত পণ্ডিত ব্যক্তিকে হত্যা করো”- এই ধরণের।
যখন এই সারাংশটা পরীক্ষার জন্য পড়তে হয়েছে, তখন জানতে পারি নি এটা কার লেখা; কিন্তু আরো অনেক পরে জেনেছি যে, এটা এবং এর মতো অনেক সারাংশ যার বই থেকে নেওয়া হয়েছিলো বা এখনও নেওয়া হয় তার নাম ডাক্তার মুহম্মদ লুৎফর রহমান; মহৎ জীবন, উচ্চ জীবন, আদর্শ জীবন, উন্নত জীবন এরকম বেশ কিছু উন্নত মানের বইয়ের লেখক তিনি, যেগুলো পড়লে যে কারো জীবন ও প্রচলিত আদর্শ পাল্টে যেতে বাধ্য। তার বইয়ের উচ্চ স্তরের কথা বার্তা পড়ে অনেকে, যারা হয়তো তাকে সম্পূর্ণ জানে না, তারা তাকে ডক্টরেট ডিগ্রীধারী লোক বলে মনে করে যেহেতু তার নামের আগে ডাঃ শব্দটি লেখা থাকে; কিন্তু আসলে তিনি ছিলেন একজন হোমিও ডাক্তার। তার ডক্টরেট ডিগ্রী না থাকলেও তিনি যে কোনো ডক্টরেট ডিগ্রীধারীর চেয়ে কম জ্ঞানী নন, সেটা তার বই বা লেখা পড়লেই বুঝতে পারা যায়।
যা হোক, ডা. লুৎফর রহমানের লেখা প্রতিটা লাইন একজন মানুষকে আদর্শ ও উন্নত জীবনের দিকে আহ্বান করে এবং তার প্রত্যেকটা কথা চিরন্তন সত্য। সেই লুৎফর রহমান বলে গেছেন, কোনো জাতিকে ধ্বংস করতে হলে তাদের লাইব্রেরীকে পুড়িয়ে দিতে হবে এবং তাদের পণ্ডিত ব্যক্তিদেরকে হত্যা করতে হবে; মুসলমানরা কিভাবে এই কাজটি খুব দক্ষতার সাথে করেছিলো, সেই ইতিহাসই আজ আপনাদেরকে শোনাবো।
মুসলমানরা যেহেতু বিশ্বাস করতো এবং এখনও করে যে কোরানই হচ্ছে জ্ঞানের শেষ কথা এবং এই জ্ঞানের উপরে ও বাইরে কোনো জ্ঞান নেই, তাই তারা যখনই কোনো জাতিকে পরাজিত করেছে, তখনই তাদের অতীত ইতিহাস ঐতিহ্যকে মুছে দিয়ে তাদেরকে মুসলমান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তাদের সমস্ত বই পুস্তক তথা লাইব্রেরিকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং পুরুষদেরকে তো পাইকারীভাবে হত্যা করেছেই (কোরান, ৩৩/৬১, ৮/৬৭); তাই জাতি ধ্বংসের জন্য তাদেরকে বেছে বেছে পণ্ডিত ব্যক্তিদেরকে হত্যা করতে হয় নি, যেমন করে হত্যা করতে হয়েছিলো ১৯৭১ সালের ১৪ ই ডিসেম্বর, পাকিস্তানী সেনা ও আলবদর নামের ইসলামি ঘাতকদের দ্বারা বাঙ্গালি বুদ্ধিজীবীদের, যেটা বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী গণহত্যা নামে পরিচিত।
অনেকেই পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও আলবদরদের, এই ধরণের নিরপরাধ ও বেসামরিক ব্যক্তিদেরকে হত্যা করার কারণ খুঁজে পায় না; কিন্তু এর কারণ লুকিয়ে আছে ইসলামের ইতিহাসের গভীরে, জাতি ধ্বংসের থিয়োরির মধ্যে, যেহেতু ইসলামের উদ্দেশ্য ছিলো এবং এখনও আছে, পৃথিবীর সকল জাতিকে ধ্বংস করে দিয়ে শুধু ইসলামকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার বা প্রতিষ্ঠিত করার।
কোরানে, পরাজিত জাতি বা গোত্রগুলোর উপরে গণহত্যার নির্দেশ সম্বলিত অনেক আয়াত থাকলেও, বই পুস্তক পোড়ানোর নির্দেশ সম্বলিত কোনো আয়াত পাওয়া যায় না, এমনকি পাওয়া যায় না কোনো হাদিসেও। হয়তো এজন্যই পাওয়া যায় না যে, মুহম্মদের জীবদ্দশায় তার সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিলো শুধু আরবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং আরবের প্রায় ৯৯.৯৮% লোক শুরু থেকেই ছিলো মূর্খ এবং তাদের মধ্যে জ্ঞান চর্চা বা পড়াশোনার তেমন রীতি ছিলো না। প্রাচীন আরবের সেই বৈশিষ্ট্য বা ধারা চলছে এখনও; কারণ, এখনও পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম পড়ে আরবের লোকজন এবং এর পরিমাণ গড়ে সারা বছরে মাত্র এক পৃষ্ঠা।
এমনও হতে পারে- মুহম্মদের সমালোচনা করে কবিতা লিখায় মুহম্মদ তিন জন ইহুদি কবিকে গুপ্ত ঘাতক পাঠিয়ে হত্যা করিয়েছিলো এবং তারপর মুসলমানদের জন্য কবিতা লিখা নিষিদ্ধ হয় এবং সম্ভবত এ কারণেই আরবের লোকজন সাহিত্য চর্চা ছেড়ে দেয়, কারণ প্রাচীন কালে সাহিত্য চর্চা মানেই ছিলো কবিতা লিখা।
কোরান হাদিসে মুসলমানদের বই পড়ানোর ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রমাণ না থাকলেও এই প্রমাণ আছে ইসলামের ইতিহাসে এবং যেহেতু বড় বড় ঘটনাগুলোই ইতিহাসে স্থান পায়, সেহেতু মুহম্মদের মৃত্যুর পর মুসলমানরা আরবের বাইরে যেসব অভিযান পরিচালনা করেছে, সব ক্ষেত্রেই যে তারা বই পুস্তক বা লাইব্রেরি পুড়িয়েছে, তার প্রমাণ ভবিষ্যৎ পৃথিবীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই হয়তো অনেক ঘটনার মধ্যে থেকে দুই চারটা ঘটনা ইতিহাসের পাতায় লিখিত হয়েছে, সেরকম কয়েকটি ঘটনার কথাই আজ বলবো আপনাদেরকে।
মুসলমানরা যখনই কোনো জাতিকে ভোর বেলার আকস্মিক আক্রমনে পরাজিত করেছে (মুসলিম শরীফ, ৭৪৫)তখনই তাদেরকে গণহত্যার সাথে সাথে যে তাদের প্রাচীন ইতিহাস সম্বলিত বই পুস্তক ধ্বংস করেছে, তাতে তো কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু ইতিহাসের সাক্ষ্য থেকে এই রকম একটি ঘটনার কথা প্রথম জানা যায় ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে পারস্য সাম্রাজ্যে বা বর্তমান ইরানে।
মুসলমানরা পারস্য সাম্রাজ্য দখল করার জন্য আক্রমন শুরু করে ৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এবং ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে তারা স্তেসিফোন নামক একটি শহরকে আক্রমন করে প্রায় দুই মাস অবরুদ্ধ করে রাখার পর তা দখল করে এবং তারপর ইচ্ছাকৃতভাবে শহরের সমস্ত বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে দেয়, যার সাথে পুড়ে যায় সেই শহরের লাইব্রেরি এবং বই পুস্তকগুলোও। এভাবে ক্রমাগত আক্রমন করে ৬৫১ খ্রিষ্টাব্দে মুসলমানরা সমগ্র পারস্য সাম্রাজ্য দখল করে।
৬৩৭ এর পর মুসলমানরা ৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে ঘটায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জ্ঞান বিরোধী ঘটনার, তারা মিশর দখল ক’রে, এর আলেকজান্দ্রিয়া শহরে অবস্থিত, তৎকালীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাইব্রেরিটি পুড়িয়ে দেয়।
কিভাবে লাইব্রেরিটি ধ্বংস করা হয়েছিলো, তার আগে এই লাইব্রেরিটি গড়ে উঠার কাহিনী একটু বলি, তাহলে বুঝতে পারবেন এই লাইব্রেরিটি পৃথিবীর জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো।
আলেকজান্দ্রিয়া শহরটির নামকরণ হয়, বিখ্যাত গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের নামে, যিনি ছিলেন গ্রীক দার্শনিক এ্যারিস্টোটলের ছাত্র, যিনি মাত্র ২০ বছর বয়সে পিতার মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন এবং পরবর্তী ১৩ বছরের মধ্যে সেই সময়ের পৃথিবীর অর্ধেক অংশে রাজত্ব স্থাপন করেন। এই আলেকজান্ডার ৩৩২ খ্রিষ্টপূর্বে মিশর জয় করেন এবং তার ২ বছর পর আলেকজান্দ্রিয়া শহরটি নির্মান করেন এবং তাতে একটি লাইব্রেরি স্থাপন করেন। এরপর আস্তে আস্তে সেই লাইব্রেরিটি সমৃদ্ধ হয়ে আলেকজান্দ্রিয়া শহরকে পৃথিবীতে বিখ্যাত করে তোলে।
সিন্ধু সভ্যতার পর খ্রিষ্টপূর্ব ৩ হাজার বা বর্তমান সময় থেকে ৫ হাজার বছর পূর্বেই মিশরীয়রা গড়ে তুলেছিলো মিশরীয় সভ্যতা। পিরামিড ও মমির কারণে যাদের জ্ঞানের বার্তা পৌঁছে যায় সমগ্র বিশ্বে এবং সমুদ্র পথে মিশরে সহজে যাওয়া যেতো ব’লে মিশর হয়ে উঠেছিলো সারা পৃথিবীর জন্য একটি বাণিজ্যিক নগরী এবং বনিকদের সেই জাহাজে করে মিশরে আসা-যাওয়া করতো সারা পৃথিবীর জ্ঞান পিপাসু মানুষ, মিশরীয় জ্ঞানের সন্ধানে; এভাবে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া নগরীর লাইব্রেরি হয়ে উঠেছিলো সারা পৃথিবীর জ্ঞান পিপাসু মানুষদের তীর্থক্ষেত্র।
এই লাইব্রেরিতে যারা সার্বক্ষণিক কাজ করতো বা যাদের উপর এই লাইব্রেরির দায়িত্ব ছিলো, তারা সারা পৃথিবীর জ্ঞানকে তাদের লাইব্রেরিতে সংরক্ষণ করার জন্য নিয়েছিলো কিছু বিশেষ কৌশল। যে সকল জ্ঞান পিপাসু ব্যক্তি তাদের লাইব্রেরিতে আসতো, তাদের কাছে যে জ্ঞান ছিলো বা তাদের সাথে থাকা যেসব বই পুস্তক ছিলো, যা সেই লাইব্রেরিতে তখন পর্যন্ত ছিলো না, সেগুলোকে তারা কপি করে লিখে সংরক্ষণ করতো; আবার অনেক সময় বিদেশী জাহাজগুলোও তল্লাশী করে দেখতো, তাতে কোনো বই পুস্তক আছে কিনা, থাকলে সেগুলোও তারা কপি করে রাখতো; এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বই পুস্তক সংগ্রহের জন্য লাইব্রেরিতে আলাদা লোক নিয়োগ করা ছিলো, তারা বিভিন্ন দেশ ঘুরে ঘুরে বই পুস্তক সংগ্রহ ক’রে নিয়ে এসে সংরক্ষণ করতো। অনেক সময় মিশরের শাসকরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বই পুস্তক বহু মূল্য দিয়ে কিনে এনেও সরক্ষণ করেছে। এভাবে কয়েকশো বছরের মধ্যে আলেকজান্দ্রিয়ার
কিন্তু বাঁদররা মূক্তোর মালা পেলে যা করে, পাগল বা উন্মাদরা বহুমূল্য রত্ন পেলে যা করে, মুসলমানরও তাই করেছিলো এই লাইব্রেরির সাথে, মিশর দখল করার পর।
৬৪০ খ্রিষ্টাব্দে মুসলমানরা সেনাপতি আমরুর মাধ্যমে মিশর দখল করে এবং আমরু, চিঠি লিখে খলিফা ওমরের কাছে জানতে চায়, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিতে পাওয়া হাজার হাজার বই পুস্তকগুলোকে তারা কী করবে ? জবাবে খলিফা ওমর লিখে,
“বইগুলোর বিষয়ে আমার বক্তব্য এই যে, যদি সেগুলোর বিষয়বস্তু আল্লার নাজিলকৃত তথ্যের (অর্থাৎ কোরানের) সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়ও, তবুও ওগুলো আমাদের দরকার নেই। কারণ, আল্লার কাছ থেকে নাজিলকৃত অংশ প্রয়োজনের চেয়েও বেশি। আর যদি ওগুলো নাজিলকৃত অংশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হয়, তাহলে তো ওগুলো সংরক্ষণের কোনো দরকারই নেই, ওগুলো নির্দ্বিধায় ধ্বংস করে ফেলো।”
এরপরের ঘটনার বিবরণ পাওয়া যায়, মুসলিম লেখক ইবনে আল কিফতির বই থেকে, তিনি লিখেছেন, “সমস্ত বই শহরের গোসলখানায় দিয়ে দেওয়া হলো, যাতে সেগুলো পুড়িয়ে গোসল করার জল গরম করা যায় এবং এভাবে ছয় মাস লেগেছিলো সমস্ত বই পুড়িয়ে ফেলতে।”
কোনো উন্মাদের হাতে যদি দেশের শাসনভার অর্পিত হয়, তাহলে দেশের কী অবস্থা হয়, সেটা একবার কল্পনা করুন। অনেক মুসলমান প্রকৃত ঘটনা জেনে বা না জেনে বা প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে অমুসলিমদের ধোকা দিয়ে ইসলামকে পজিটিভ হিসেবে তুলে ধরার জন্য বলতে পারে যে, আলেকজান্দ্রিয়ার
লাইব্রেরি পোড়ার ঘটনাকে এ্যাকসিডেন্ট বললে, বলবেন, তাহলে সেই ঘটনার পর ১৪০০ কেটে গেলেও মুসলমানরা তা আবার নতুন করে গড়ে তুলে নি কেনো ?
জ্ঞান অর্জনের জন্য চীন দেশে যাওয়ার হাদিসটা মিথ্যা। কারণ, তাহলে কোরানের জ্ঞান, চীন দেশের জ্ঞানের চেয়ে ছোট হয়ে পড়ে। যেসব মুসলমান এটা বোঝে, তারা আর এই হাদিস উল্লেখ করে না। আর প্রত্যেক নর-নারীর জন্য জ্ঞান অর্জন করা ফরয, এই হাদিসে শুধু কোরান হাদিসের জ্ঞানের কথাই বলা হয়েছে; কারণ, কোরান হাদিসের বাইরে কোনো জ্ঞান অন্বেষণ করা মুসলমানদের জন্য হারাম, নিচে দেখে নিন, কোন হাদিসের জোরে বললাম এই কথা-
‘তোমরা নিজেদেরকে নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ থেকে দূরে রেখো; কেননা, প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিষয়ই বিদআত, আর প্রত্যেক বিদআত হচ্ছে ভ্রান্তি বা ভুল পথ।“– (তিরমিযি হাদিস)
এত কিছুর পরও মুসলমানরা কোরান হাদিস ছাড়া অন্য কোনো বই কেনো পড়ে, সেটাই তো এক পরম আশ্চর্যের বিষয়। এই লাইব্রেরি বা বই পুস্তক পোড়ানোর অপরাধে, সারা পৃথিবীর সভ্য মানুষদের উচিত, মুসলমানদেরকে কোনো বই পড়তে না দেওয়া, এদেরকে জ্ঞানহীনভাবে ইতর প্রাণীর মতো জীবন যাপন করে মরতে দেওয়া উচিত।
যা হোক, এরপর মুসলমানরা যে আরো কত নগর ধ্বংসের সাথে সাথে সেই নগরের লাইব্রেরি পুড়িয়ে দিয়েছে, তার তো কোনো হিসেব নেই; কারণ, ইতিহাস লিখে বিজয়ীরা, আর মুসলমানরা যেখানে বিজয়ী, সেখানে তারা এই সব ইতিহাস কেনো লিখতে যাবে ? মিশরের লাইব্রেরি পোড়ানোর ঘটনাটা অমুসলমানদের পাশাপাশি একজন মুসলমান লেখকের ইতিহাস থেকে পাওয়া গেছে এই কারণেই যে, এর সাথে ঘটনাক্রমে এক খলিফা যুক্ত হয়ে পড়েছিলো; কারণ, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির বিষয়ে তাকে একটি চিঠি লিখেতে হয়েছিলো। যে সব ঘটনার সাথে ইসলামের বড় বড় ব্যক্তিরা যুক্ত হয় নি, সেই সব ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনাও মুসলমান লেখকদের ইতিহাসেও স্থান পায় নি; কেননা, সেই সব ঘটনা ছিলো ডাল ভাতের মতো সাধারণ। সেই সব অজানা ইতিহাসের উৎস, মুসলমান আক্রমনের পরও বেঁচে থাকা অমুসলিমরা।
যা হোক, ভারতে- মুসলমানদের লাইব্রেরি পোড়ানোর ঘটনা বলতেই বোঝায় বিহারের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের
১১৯৩ খ্রষ্টাব্দে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী নালন্দা আক্রমন করে, এ সম্পর্কে পারস্য ইতিহাসবিদ মিনহাজ তাঁর “তাবাকাত-ই-নাসি
“হাজার হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুকে আগুনে পুড়িয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে সেখানে ইসলাম প্রচারের চেষ্টা করেন খিলজী।”
এরপর খিলজি নির্দেশ দেয়, বই পুস্তকগুলোর মধ্যে কোনো কোরান আছে কিনা তা দেখতে। মূর্খ মুসলমানরা দেখে সেগুলোর কোনো বই ই আরবিতে লেখা নয়। এতে তারা ধরে নেয় যে, ওগুলোর মধ্যে কোনো কোরান নেই। এরপর খিলজি নির্দেশ দেয়, বই পুস্তকগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিতে। এরপর সৈন্যরা সেগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়। লাইব্রেরীতে বইয়ের পরিমান এত বেশী ছিল যে প্রায় ৩ মাস সময় লেগেছিল সেই মহা মূল্যবান বই গুলো পুড়ে ছাই হতে। খিলজী শুধু নালন্দাকে পুড়িয়ে ছাই করে নি, একই সাথে পুড়িয়ে ছাই করেছে একটি জাতির সভ্যতা, ইতিহাস, প্রাচীন জ্ঞান বিজ্ঞানের অমূল্য বই যা থেকে আমরা জানতে পারতাম সে যুগের ভারত বর্ষের শিক্ষার অবকাঠামো, তৎকালীন সামাজিক-সাংষ্কৃ
এভাবে মুসলমানরা যখনই যে দেশ বা এলাকা তরবারির জোরে দখল করেছে, তখনই সেই দেশের প্রাচীন সবকিছু, সেই দেশের জীবিত নাগরিকদেরকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য, পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে বই পুস্তকের মতো মহামূল্যবান সবকিছু, এরপর তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে কোরান এবং হাদিস এবং বলেছে, এটাই সর্বোচ্চ জ্ঞান, এর উপরে কোনো জ্ঞান নেই এবং এখন থেকে তোমরা মুসলমান।
বিজয়ীদের মুখের কথাই আদেশ, তাই জীবিত পরাজিতদের বলার বা করার কিছু ছিলো না; কারণ, তারা চোখের সামনে দেখেছে মুসলমানরা তাদের আত্মীয় স্বজনকে কিভাবে কচুকাটা করেছিলো, তা থেকেই তারা বুঝে গিয়েছিলো, বেঁচে থাকতে হলে মুসলমানদের নির্দেশকে মেনে চলতে হবে। এই নির্দেশ মেনে তারা হয়তো বেঁচে গিয়েছিলো, কিন্তু বই পুস্তকের মধ্যে সঞ্চিত প্রাচীন জ্ঞানকে হারিয়ে তারা এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়ে পড়েছিলো অজ্ঞান তথা মূর্খ, সেই মূর্খদের বংশধরেরাই হলো আজকের মুসলমানরা। এজন্য হিন্দুদের সাথে উঠাবসা করে হিন্দু সংস্কৃতিতে প্রভাবিত মুসলমান লেখক কাজী আব্দুল ওদুদ, তার এক প্রবন্ধে বলেছে,
“সভ্যতার জ্ঞান বিজ্ঞানের ইতিহাসে মুসলমানরা একটি মোমবাতিও জ্বালাতে পারে নি।”
জ্বালাবে কিভাবে, যে মুসলমানরা বই জ্বালিয়ে জল গরম করে স্নান করে, তারা বই পুস্তক বা জ্ঞানের মর্ম এবং তার সুদূর প্রসারী উপকার বুঝবে কী করে ? তারা শুধু বুঝে তৎক্ষণাৎ প্র্যাকটিক্যাল লাভ, যা শুধু গনিমতের মাল তথা ধন সম্পদ এবং নারী ও শিশুর মধ্যেই মধ্যেই পাওয়া যায়।
বই-পুস্তক হচ্ছে মানুষের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের সঞ্চয়, যা অনন্তকাল ধরে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর মানুষকে জ্ঞানের আলোয় পথ দেখায়, আর সেই জ্ঞানের আলোকে পাইকারী দরে নিভিয়ে দিয়েছে মুসলমানরা এবং এভাবে তারা সভ্যতাকে এগিয়ে যেতে না দিয়ে পৃথিবীকে পিছিয়ে দিয়েছে হাজার হাজার বছর।
জয় হিন্দ।
নিচে দেখে নিন, উপরে উল্লেখ করা কোরান হাদিসের কয়েকটি রেফারেন্স :
“তাদের উপর চারেদিক হতে অভিশাপ বর্ষিত হবে, যেখানেই তাদেরকে পাওয়া যাবে, তাদেরকে পাকড়াও করা হবে ও নির্মমভাবে মারা হবে।" - (কোরান, ৩৩/৬১)
এখানে কিসের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, সেটা আর ব্যাখ্যা করে বলার দরকার আছে বলে মনে করছি না। কিন্তু নিচের এই আয়াতটির একটু ব্যাখ্যা দেওয়া প্রয়োজন, আগে পড়ে নিন সেটা-
“কোনো নবীর জন্য এ শোভা পায় না যে তার নিকট বন্দী লোকজন থাকবে, যতক্ষণ সে যমীনে সে শত্রু বাহিনীকে খুব ভালো করে মথিত না করবে। তোমরা দুনিয়ার স্বার্থ চাও, অথচ আল্লা চান তোমাদের পরকালের সাফল্য।”- ( কোরান, ৮/৬৭)
সাধারণ মুসলমানরা পরাজিত গোত্রগুলোর পুরুষদেরকে বন্দী করে রাখতো, যাতে তাদেরকে পরে ক্রীতদাস হিসেবে বাজারে বিক্রি করে টাকা পয়সা আয় করা যায়। কিন্তু এটা কখনো কখনো বিপদজনক হয়ে উঠার সম্ভাবনা ছিলো; কারণ, পরাজিতরা যদি সংখ্যায় বেশি হয়ে যায়, তাহলে তারা সংগঠিত হয়ে মুসলমানদের উপর হামলা করতে পারে, এজন্যই কোরানের এই আয়াতে বলা হয়েছে,
“কোনো নবীর জন্য এ শোভা পায় না যে তার নিকট বন্দী লোকজন থাকবে, যতক্ষণ সে যমীনে সে শত্রু বাহিনীকে খুব ভালো করে মথিত না করবে।”
অর্থাৎ শত্রুদেরকে ভালো ভাবে মথিত বা দমন না করা পর্যন্ত লোকজনদেরকে বন্দী করে রাখা কোনো নবীর জন্য উচিত নয়, এজন্য ততক্ষণ পর্যন্ত শত্রুদেরকে হত্যা করে যেতে হবে, যতকক্ষণ তারা সংখ্যায় কম না হয়। কিন্তু মুসলমানরা কেনো বন্দীদেরকে জীবিত রাখতে চাইতো, যা নিষেধ করে এই আয়াত নাজিল হয় ?
আসলে মুসলমানরা চাইতো জিহাদের নামে বিজনেস করতে, আগেই বলেছি, তারা বন্দীদেরকে ক্রীতদাস হিসেবে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হতে চাইতো, এজন্যই এই আয়াতের পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে,
“তোমরা দুনিয়ার স্বার্থ চাও, অথচ আল্লা চান তোমাদের পরকালের সাফল্য।”
এখানে দুনিয়ার স্বার্থ মানেই ক্রীতদাস বিক্রির ব্যবসা। কিন্তু আল্লা বলছে, এই সব ক্রীতদাস বিক্রি করে আর কতটুকু লাভবান হবে ? জিহাদের নামে সকল কাফের হত্যা ক’রে তোমরা আমার কাছে এসো, তারপর দেখো, আমি তোমাদের কত কী দিই ? এত খাবার দেবো যে তা খেয়েও শেষ করতে পারবে না, আর এত হুর দেবো যে, তা দুচেও(প্রথম দুটি বর্ণের স্থানান্তর করে নিন) শেষ করতে পারবে না।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................