প্যান ইসলামিজম, নবীর জন্য চোখের নিমিষে নিজের বাপ-মাকেও হত্যা করতে পারে! এটাকে কি বলে জানেন?
২০১০ সালে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের গভর্নর সালমান তাসির পাকিস্তানের খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে বানোয়াট ব্লাসফেমি মামলার বিরোধীতা করে কথা বলেন এবং ব্লাসফেমি আইন বাতিলের দাবী করেন। ৯৭ পার্সেন্ট মুসলমানের দেশ পাকিস্তান সালমান তাসিরের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সাধারণ মুসলমানরা তাসিরকে ইহুদীনাসারা নাস্তিক ইত্যাদি বলে ক্ষোভ ঝারতে থাকে। সালমান তাসির তার নিজের দেহরক্ষীর হাতেই সে বছর খুন হোন। তাসিরের খুনিকে লাল গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে জেলের ভেতর সম্বর্ধনা জানানো হয়। জেলের বাইরে ও জেলের ভেতর তাসিরের খুনি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হোন।
পাকিস্তানের সালমান তাসিরের হত্যার পর সেখানকার রাজনীতিবিদদের একটি বড় শিক্ষা হয়েছিলো। এরপর পাকিস্তানের একজন মন্ত্রী ইসলাম অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হলে তাকে চরমপন্থিরা হত্যার হুমকি দিলে তিনি সরকারের কাছে বিশেষ দেজরক্ষী চেয়ে আবেদনে উল্লেখ করেন সেখানে যেন কোন মুসলিম নিরাপত্তারক্ষী না থাকে। তিনি অমুসলিম নিরাপত্তারক্ষী রাখার আবেদন করেন। ৯৭ পার্সেন্ট মুসলমানের দেশে অমুসলিম নিরাপত্তা রক্ষী পাওয়াই মুশকিল। পাকিস্তানের সংখ্যালঘু ৩ পার্সেন দরিদ্র ও অশিক্ষিত হয়ে আছে। তাদের মধ্যে যারা লেখাপড়া শিখে একটু ভালো জায়গায় যেতে পেরেছে তাদের দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে মুসলমানরা ব্লাসফেমিতে ফেলে তাদের ক্যারিয়ার ধ্বংস করে ফেলে। অথচ খুবই কৌতুককর শোনালেও বলতে হয় যে কোন মুসলিম প্রধান দেশ পুরোপুরি নরক উঠে উঠার হাত থেকে বাঁচাতে হলে ধর্ম জাতি সম্প্রদায়ের বৈচিত্র খুব বেশি করে দরকার মুসলমানদের জন্যই!
পাকিস্তানের একজন প্রফেসর কথিত ‘ইসলাম অবমাননা’ করে যখন ব্লাসফেমি আইনে জেলে গেলেন তখন তাকে জেলখানার মধ্যে খুন করে এক কয়েদি। খুনি নিজেই খুন ধর্ষণ করে জেল খাটছিলো। বলাই বাহুল্য সে ধর্ম পালন করত না। ‘ধার্মিক মুসলমান’ বলতে যা বুঝায় এই খুনি তা নয়। কিন্তু তাতে কি? ইসলাম তার ধর্ম। হযরত মুহাম্মদ তার নবী। এই নবীর জন্য সে হাসতে হাসতে গলায় ফাঁস দিতে পারে। তার নবীর জন্য চোখের নিমিষে নিজের বাপ-মাকেও হত্যা করতে পারে! এটাকে কি বলে জানেন? প্যান ইসলামিজম। ১৪০০ বছর আগে নবী মুহাম্মদের সময় থেকেই প্যান ইসলামিজম ছিলো। আপনি ধার্মিক মুসলমান না হলেও ইসলামের একজন সৈনিক হতে পারেন। পেতে পারেন ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণ করে সরাসরি জান্নাতে যাবার টিকিট...।
বাংলাদেশের মানুষ যাত্রা দেখুক, ফাতরামী করুক, বাঈজী পাড়ায় যাক, গান শুনুক বা অনৈসলামিক যা যা করুক, কিন্তু তারা মুসলমান। তাদের কাছে তাদের নবী হচ্ছে সবচেয়ে প্রিয়। এই নবীর অবমানার জন্য তারা যে কারোর জান নিয়ে নিতে পারে। ইসলাম হচ্ছে আর্মি ক্যান্টনমেন্ট আর মুসলমান হচ্ছে আর্মি। এই ধর্মের সঙ্গে অন্য ধর্মের তুলনা করা হচ্ছে আপনার অজ্ঞতা। প্রতিটি মুসলমান তার পরিবার থেকে যে শিক্ষা পায় হাজার মাইল দূরের নাইজেরিয়া কিংবা মিশরের আরেকটি মুসলমান পরিবার একই শিক্ষা পেয়ে থাকে। নবী অবমাননাকারীকে ফাঁসিতে ঝুলাও। তাকে হত্যা করো। ইসলামের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের অধিকারকে অপরাধ হিসেবে শাস্তি দাও। এই বিষয়ে কোন মুসলমানের দ্বিমত নেই। এখানে ইসলাম পালন করা -না করার কোন সম্পর্ক নাই। যীশুর কার্টুন ছাপার কারণে শার্লি এবোদে কোন পাদ্রি বা সাধারণ খ্রিস্টানরা হামলা চালায়নি। ধর্মকে দিয়ে পৃথিবীতে এখন আর কোথাও রাজনীতি সম্ভব নয়। ভারতে ‘হিন্দু জাতীয়তাবাদ’-কে রাজনীতির ঘুঁটি বানানো গেছে হিন্দু ধর্মকে নয়। পাকিস্তান থেকে ভারতের নিরাপত্তা, ভারতের মাদ্রাসাগুলিতে মিনি পাকিস্তানের ছায়া, হিন্দুদের উদ্বাস্তু হওয়ার ভীতি এইসব থেকে হিন্দু জাতি হিসেবে ভারতের হিন্দুরা নিজেদের কারোর কাছে ঐক্যবদ্ধভাবে নিরাপত্তা চাইছে কিন্তু হিন্দু ধর্মের শাসন চাওয়ার মত রাজনীতির বাস্তবতা নেই। ভারতের রাম যেমন দেবতা বারণও দেবতা। উভয়েই হিন্দু। কাজেই রামরাজ্য বলে হিন্দুদের এক করা যাবে না। হিন্দুদের খিলাফত করার সুযোগ নেই। বিজেপি জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করছে যেমন মুসলিম লীগের জাতীয়তাবাদ। এটা ছাড়া গোটা বিশ্বে মুসলমানরা ছাড়া আর কোথাও রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করা যায় না। এরদোয়ান তার দেশের অর্থনৈতিক বেসামাল অবস্থা থেকে দৃষ্টি ঘুরাতে ও নির্বাচনে নিজের পক্ষে ভোট টানতে হায়া সোফিয়া গির্জাকে মসজিদে পরিণত করেছে। ৫৭টি স্বঘোষিত মুসলিম দেশে ‘তৌহদী জনতা’ নামের যে অঘোষিত ইসলামিক আর্মি সোর্স সেটা কি আপনি খ্রিস্টান ইহুদী শিখ জৈন হিন্দু বৌদ্ধদের মধ্যে দেখাতে পারবেন? এক বাবরী ঘটনা বেচে আর কত খাবেন?
শুধু অমুসলিম নয়, মুসলমানদের মধ্যে যারা সত্যিকারের প্রগতিশীল রাজনীতি সমাজের সমর্থক তারাও কতখানি ‘ইসলামোফোবিয়াতে’ আক্রান্ত তার উদাহরণ আসিম সাঈদ। পাকিস্তানের এই এক্টিভিস্ট ফেইসবুকে লেখালেখি করেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সমালোচনা করায় তাকে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ব্লাসফেমির অভিযোগ করে যে আসিম ইসলাম অবমানোনা করেছে। আসিম যুক্তরাজ্যে পালিয়ে গেছেন। কিন্তু সেখানেও তিনি ভীত কারণ ‘ব্রিটিশ মুসলিমদের’ থেকেও তিনি যে কোন সময় হামলার আশংকা করেন। তিনি কোনদিনই পাকিস্তানে ফেরার স্বপ্ন দেখেন না। কারণ তিনি মনে করেন পাকিস্তানের সাধারণ মুসলমান তার জীবন শেষ করে দিবে। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, "একবার ব্লাসফেমির সুর উঠলে কারও পক্ষে পাকিস্তানে ফেরা বিপজ্জনক। এক দশক পরে ফিরলেও আপনি খুন হতে পারেন"।
বাংলাদেশে এখন যত রকমের ঘটনা ঘটছে ইসলাম অবমাননার অভিযোগে তার মূল টার্গেট অমুসলিম সম্প্রদায়। এর নানা রকম হিসেব থাকতে পারে। নির্বাচন বা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি থেকে চোখ সরিয়ে অন্যদিকে ঘোরানোর উদ্দেশ্য যা বলেন সবই মেনে নিলাম। কিন্তু আপনি জানেন মুসলমানদের ধর্ম দিয়ে ক্ষেপিয়ে তোলা সম্ভব, ইসলামকে রাজনীতিতে ব্যবহার খুব সহজ, অমুসলিমদেরকে মুসলমানদের কাছে টার্গেট করা খুব সম্ভব তাহলে আপনি সেটাই ট্রাই করবেন। ইংরেজরা জানত হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে মারাত্মক সাম্প্রদায়িক বিভেদ আছে তাই তাদেরকে একে অন্যের বিরুদ্ধে লাগাতে পেরেছে। এর জন্য যতটা দোষ ইংরেজদের তার চাইতে হাজার গুণ বেশি দোষ এই দেশের হিন্দু মুসলমানদের। ফলে এখন বাংলাদেশের মানুষজনকে বেহুদা আলাভোলা ধর্মকর্মহীন আউল বাউল বানিয়ে গুটি কয়েক ধান্দাবাজদের জন্য এইসব ঘটছে জাতীয় জোকারী করে মূল পয়েন্ট থেকে সরে যাবেন না। এদেশের মানুষ মৌলবাদী গোঁড়া নয় অবশ্যই। এদেশের ৯৯ ভাগ মুসলমান যদি টাকনুর উপর পায়জামা প্যান্ট পরে ঘুরত তাহলে বলা যেতো এখানকার ৯৯ ভাগ মুসলমানই মৌলবাদী। মানে যারা ইসলামের একদম মূল ধরে অনুসরণ করে। কিন্তু পাড়া মহল্লায় থ্রি-কোয়াটার প্যান্ট পরা পোলারও ইসলামের প্রতি হো/গা ভর্তি কারেন্টকে ব্যাখ্যা করতে হবে। যেটা আমি উপরে করেছি। টেলিভিশন সিনেমার মডেল নায়ক নায়িকাদের ইসলামের পক্ষে লাইভকে আপনি ব্যাখ্যা করতে পারবেন না যদি না আপনি ইসলামের সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্ক বুঝতে না পারেন। এমন একটি মুসলিম দেশের কথা বলা যাবে না যেখান থেকে অমুসলিমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। আফগানিস্থানের বৌদ্ধরা সব গেলো কোথায়? এই দেশটাই ছিলো বৌদ্ধদের! পাকিস্তানের বড় বড় শহর লাহোর করাচি ছিলো হিন্দু প্রধান। হিন্দুদের সবচেয়ে বড় তীর্থ হিংলাজ পাকিস্তানে পড়েছে। করাচি লাহোর আজ দেখলে মনে হবে না কোনদিন এখানে হিন্দু সমাজ ছিলো। হিংলাজ তীর্থ করার সুযোগ পাকিস্তানের বাইরের হিন্দুদের এখন নেই। কিন্তু ভারতের বড় বড় শহরগুলির মুসলিম ঐতিহ্য ইতিহাস শাসনের চিহ্ন আজো বিদ্যমান। এসব সত্য কথা বললে ভারতের দালাল ছাড়া কপালে কিছু জুটবে না। এমন কি নিজের আত্মীয় স্বজনদের কাছেই গুপ্ত হত্যার ভয়ে নিজ মুখ পরিচয় দেখিয়ে লেখালেখি করতে পারি না। পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনের সমালোচকদের একের পর এক হত্যাকান্ডের পর এখন এই মামলায় ভিকটিমদের পক্ষে হয়ে আদালতে লড়াই করতে আইনজীবী পাওয়া যায় না। এমনকি ভয়ে এসব মামলায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিচারক নিজে থেকে সরে দাঁড়ান। বাংলাদেশেও তাই। এটা পুরো মুসলিম বিশ্বে সত্য। লেখালেখি বলেন, আদালতে লড়াই বলেন, রাজপথে প্রতিবাদ বলেন, সবখানে মুসলমানরাই মুসলমানদের থেকে বিপদ আশংকা করেন। ভয়ে তারা ঘটনার প্রতিবাদ করেন না। আবার তারাই পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ‘ইসলামোফোবিয়া’ অভিযোগ করেন! কী ফানি, ইসলাম নিয়ে নাকি অমুসলিমদের অহেতুক ভয়! আরে মুসলমানরাই তো ভয়ে আছে বেকুব!...
#সুষুপ্ত পাঠক
9 April 2022
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................