মসজিদের সামনের দেয়ালের মাঝামাঝি যে বাড়তি একটা খুপড়ি আমরা দেখতে পাই সেটিকে বলে ‘মেহরাব’। সারা বিশ্বে যত মসজিদ দেখতে পাবেন, আপনার গ্রামে শহরে আপনার মহল্লার মসজিদে গিযে দেখুন ইমাম যেখানে দাঁড়ায় তার সামনের দেয়াল থেকে একটি খুপড়ি বের করা হয়েছে। তাই কোন মসজিদ যদি একটি চতুভুজ স্থাপত্য হয়ে থাকে তার সামনের সমান রেখার মাঝখান কেটে একটি অর্ধ ডিম আকারে বাড়তি অংশ দেখতে পাওয়া যায়, এটাই মেহরাব। কেন এটা তৈরি করা হয়? এর ঐতিহ্যটা কি? এখানে কিন্তু ইমাম দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে না। এটাকে সরাসরি মসজিদের অংশ ধরা হয় না। তাহলে কেন এই অংশ? উত্তরটা শুনতে তিতা লাগবে। মসজিদের মেহরাব মানে ঐ বাড়তি অংশ হচ্ছে অস্ত্র রাখার স্থান!
আরবী ‘হারব’ অর্থ যুদ্ধ বা সশস্ত্র যুদ্ধ। হারব শব্দ থেকে ‘মেহরাব’ ইসলামী পরিভাষাটি এসেছে যার অর্থ অস্ত্র রাখার জায়গা। এখানে তীর ঢাল তরোয়াল রাখা হতো। মসজিদে ধাঁরালো এই অস্ত্রগুলো সামনে রেখেই নামাজ পড়া হতো। আজো ইসলামী ঐতিহ্য হিসেবে মসজিদে এই মেহরাব থেকে গেছে। কিন্তু যুগ বদলের সঙ্গে সঙ্গে মসজিদের ভেতর অস্ত্র রাখার জায়গাকে সকলে জেনে গেলে যদি ইসলাম সম্পর্কে খারাপ ধারণা হয়ে যায় এই শংকায় মেহরাবকে কিবলা নির্দিষ্ট করার জায়গা বলা হয় যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার।
ইসলাম অর্থ ‘শান্তি’ জেনে যেমনটা আপনি প্রতারিত হয়েছেন, ইসলাম অর্থ ‘আত্মসমর্পন’। আপনি ইসলামের কাছে আত্মসমর্পন করবেন। মসজিদ ধ্যানের জায়গা না। মসজিদে বিচার আচার, জিহাদের প্লাণ প্রোগাম চলত। এখান থেকেই মুজাহিদরা জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যেত। কুরআনের সাড়ে ছয়শো (কিতাল কতলের আয়াতসহ) জিহাদের আয়াত আর মসজিদের এই মেহরাব রহস্য আপনাকে ঠিক কি রকম অনুভূতি এনে দিচ্ছে জানি না। তবে এটাকে যে ইসলাম প্রচার বলে না সেটা নিশ্চয় কমনসেন্স থেকে বুঝবেন। অস্ত্র দিয়ে কি কোন কিছু প্রচার চলে? আপনি কাউকে ভয় দেথিয়ে পালন করাতে পারবেন? কেউ গ্রহণ করছে না আপনার ধর্ম তাহলে কি আপনি সেই গ্রামে হামলার জন্য রওনা হবেন? যদি আপনার ধর্ম সকল মানুষ গ্রহণ করুক এটাই আপনার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে তাহলে জিজিয়া কর দিয়ে কেন তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে দিলেন? এর মানে হচ্ছে আপনি ঐ ধর্মকে মেনে নিলেন। এর অর্থ হচ্ছে, ইসলাম ধর্ম প্রচার করাটা এক জিনিস আর কোন গ্রাম দখল করে সেখানে জিজিয়া কর জারি করে ইসলামী শাসন কায়েম করা আরেক জিনিস। দুটোই ইসলামের অংশ। অতি সাধারণ মানুষ প্রথম অংশটিকে নিজের ধর্ম হিসেবে জানে। দ্বিতীয় অংশটিকে জঙ্গিবাদ হিসেবে সহি ইসলাম সম্মত নয় বলে মনে করে। এটা আমাদের সৌভাগ্য এখনো বিপুল পরিমাণ মুসলমান দ্বিতীয় অংশকে ইসলাম মনে করে না। তবে দ্রুত পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। প্রকৃত ইসলাম কি, কি চায়, মসজিদের মেহরাব কি উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছে সেসব প্রচার করে মাদ্রাসার হুজুররা সাধারণ মুসলমানদের সন্ত্রাসের পক্ষে নিয়ে আসছে। যে মসজিদগুলি মেহরাবের উদ্দেশ্য খোলাখুলি বলা শুরু করছে সেসব মসজিদগুলি জঙ্গিবাদের আস্তানা হিসেবে পরে সরকারীভাবে চিহ্নিত হচ্ছে। ফ্রান্স অস্ট্রিয়া বেলজিয়াম জার্মানিসহ ইউরোপের অনেক দেশের মত পাকিস্তানের অনেক মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এই মেহরাবকে আবার আক্ষরিক অর্থে ফিরিয়ে আনার কারণে।
এবার আপনি কি বুঝলেন সেটা আপনার বুঝ!
#সুষুপ্তপাঠক
18 May 2022
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................