ইহুদি খ্রিষ্টান এবং মুসলমানদের পূর্বপুরুষ এক। তথাপি ইহুদি খ্রিষ্টান এবং মুসলমানরাই ধর্ম নিয়ে সবচেয়ে বেশি রক্তাক্ত হয়েছে। এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে। এর রহস্য উন্মোচন করতে আসুন আরেকবার ইতিহাস উল্টে ধরি.....
.
আদম আর হাওয়া দম্পতির প্রথম দুই পুত্রসন্তান হাবিল আর কাবিল। হাবিলকে খুন করে কাবিল হলো অভিশপ্ত । তাই ঈশ্বর আদমকে আরেকটি পুত্র সন্তান দিলেন যার নাম শীশ। আমরা সবাই এই শীশের বংশধর। শীশের এক বংশধর নূহের সময় মহাপ্লাবনে তাঁর ৩-ছেলে, ছেলের ৩-বউ, আর স্ত্রী ছাড়া সবাইকে ঈশ্বর ধ্বংস করে দেন।
ইহুদী, খ্রিস্ট এবং ইসলাম ধর্ম প্রত্যেকেরই ইব্রাহিমের উপর একটি বিশেষ দাবি রয়েছে। ইব্রাহিম বা আব্রাহামের ইহুদি ধর্ম প্রবর্তনের বা ঈশ্বরের সাথে দেখা করার আগের নাম ছিল ‘ আব্রাম’ ও তার স্ত্রী সারাহ’ র পূর্ব নাম ছিল ‘ সারাই’। ঈশ্বর নিজেই ‘ আব্রাহাম’ এবং ‘ সারাহ’ এই নতুন নামকরণ করেছেন। ক্যানানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার আগে এই দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন।
আব্রাহাম মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধী ছিলেন। ঈশ্বর তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে নিজ ভূমি 'উর' ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। এর পরিবর্তে ক্যানানে আব্রাহামের বংশধরদের পূর্ণ অধিকার দিলেন। ঈশ্বরের এই প্রতিশ্রুতির প্রতি অনুগত্য প্রকাশের প্রমাণস্বরূপ ঈশ্বর আব্রাহামকে নিজের এবং আব্রাহাম থেকে পরবর্তী সকল ভবিষ্যৎ ছেলে বাচ্চাদের খৎনা জন্মের অষ্টম দিনে সম্পূর্ণ করার বিধান দিলেন। তখন আব্রাহামের বয়স ছিল ৭৫ এবং তার স্ত্রী সারাহ এর ৬৫।
এসব কথা লিখা আছে ইহুদী ধর্মের পবিত্র আদি পুস্তকে; যাকে ওল্ড টেষ্টামেন্ট বলে। আদি পুস্তকের জেনেসিস (সৃষ্টিতত্ত্ব) চ্যাপ্টারে। পাঁচ খণ্ডের আদি পুস্তকের নাম হল - GENESIS, EXODUS, LEVITICUS, NUMBERS এবং DEUTERONOMY - এই পাঁচটি সম্পূর্ণই শুধুমাত্র ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ যাকে ইহুদীরা 'বাইবেল' নামে সম্বোধন করে।
খ্রিষ্টানরা এই পাঁচটি পুস্তককে বাইবেলের পুরাতন নিয়ম হিসাবে মান্য করে, যা মূলধারার ইহুদীরা সম্পূর্ণভাবেই অগ্রাহ্য করে। OLD TESTAMENT বলে কোন নামকরন ইহুদীরা স্বীকার করে না, তেমন খ্রিস্টানদের NEW TESTAMENT বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব তাদের বাইবেলে আছে বলে ইহুদীরা স্বীকার করেনা।
'পবিত্র পুস্তকে রয়েছে 'নেভিইম' বা নবীর তালিকা। জসুয়া,সামুয়েল, ইসাইয়াহ, জেরেমিসহ ইহুদীধর্মের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে আসা নবীদের নাম উল্লেখ রয়েছে এই অংশে। এছাড়া রয়েছে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ইহুদীদের ভক্তিগীতি এবং উপদেশ এবং নীতিকথা মূলক প্রবচনসমূহ। ইহুদীরা তাদের 'সিনাগগ' এ 'পবিত্র গ্রন্থের' যে অংশকে টেবিলের উপর রেখে পাঠ করে তাকে বলা হয় ফরমান বা Torah স্ক্রুল। তোরাহতে যে মৌখিক অংশ রয়েছে তা পরিচিত 'তালমুদ' নামে। এই তালমুদেই ইহুদীদের জন্য অনুসরনীয়। এখানেই ইহুদিদের বাধ্যতামূলক ধর্ম আইনসমূহ লেখা রয়েছে। তালমুদ দুই প্রকার; ব্যাবলনীয় তালমুদ এবং জেরুজালেম তালমুদ।
ক্যানানে আসার পর আব্রাহাম /ABRAHAM এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন যার নাম ইসমাইল কিন্তু সে আব্রাহামের স্ত্রী সারাহ -র SARAH ‘গর্ভজাত নয়, ইসমাইলের মাতার নাম ‘হ্যাগার / HAGAR বা হাজেরা ‘যিনি ছিলেন মুলত আব্রাহামের স্ত্রী সারাহ এর মিশরীয় সহচারী।
সারাহ এর বয়স যখন ৬৫ এবং তিনি ছিলেন নিঃসন্তান; বংশ রক্ষার তাগিদে সারাহ তার দাসী হ্যাগারকে আব্রাহামের কাছে সপে দেন। হ্যাগারের গর্বে যখন ইসমাইলের জন্ম হয় তখন আব্রাহামের বয়স ছিল ৮৬ বৎসর। আর ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি শর্ত অনুযায়ী সারাহ যখন ইসহাকের জন্ম দেন তখন আব্রাহামের বয়স ছিল ১০০ বছর আর সারাহ এর বয়স ৯০ বছর।
এখানেই মূল টুইস্ট। ইহুদিরা সারার মাধ্যমে জন্ম হওয়া আইজাক বা ইসহাকের বংশধর। অন্যদিকে মুসলমানরা হ্যাগার বা হাজেরার মধ্য জন্ম হওয়া ইসমাইলের বংশধর।
ইসহাক এর ছেলের নাম ‘ইয়াকুব / জ্যাকব(Jacob); এই ইয়াকুবেরই অন্য আরেকটা নাম হলো ‘ ইসরাইল’। ইহুদিরা এই ইসরাইল নামটাই গ্রহণ করেছে এবং সম্ভবত একমাত্র জাতি যারা তাদের নবী/ধর্মপুরুষের নামে তাদের রাষ্ট্রেরও নামকরণ করেছে।
ইয়াকুব বা ইসরাইল এর ছিল বারো পুত্র। সেই বারো পুত্রের বংশধর থেকে হলো ইসরাইলের ১২ গোত্র। ইহুদিরা হলো বনী ইসরাইল। ইসমাইল এর বংশধর মুসলিমরা হলো বনী ইসমাইল।
খ্রিস্টানরা বনী ইসরাইল সম্প্রদায়। যিশুখ্রিস্ট স্বয়ং ইহুদি ছিলেন। তিনি ইহুদি সম্প্রদায়কে নতুন বাণী শোনালেন। নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র দাবি করলেন। পরবর্তীতে ইহুদিদের হাতেই যীশুখ্রিস্ট মৃত্যবরণ করলেন।
হাজার হাজার বছর ধরে ইহুদি-খ্রিস্টান-মুসলিম বৈরিতার নেপথ্য কারণ ধর্মগত ধর্মবিশ্বাসগত।
© কপি ফ্রমঃ রাজিক হাসান।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................