হাদিস কুরআনের কথা যতদিন যাচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে বিব্রতকর হয়ে উঠছে কেন??

হাদিস কুরআনের কথা যতদিন যাচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে বিব্রতকর হয়ে উঠছে। অন্তত বিবেক আছে যাদের। ফলে এক শ্রেণীর ইসলামী স্কলারের চেষ্টা হচ্ছে কুরআন হাদিসের ঐ বক্তব্যগুলিকে অস্বীকার করা। আজকে শুধু হুর নিয়ে কথা বলি। সবাই জানে স্পষ্ট আকারে হাদিসে প্রতিটি জান্নাতী পুরুষদের জন্য ৭২টি হুর দেওয়া হবে বলে লেখা আছে। এমনকি কুরআনের হুর বিষয়ক সব আয়াত পড়লেও সেগুলিকে ‘হিন্দি সিনেমার আইটেম সং গার্ল’ ছাড়া আর কিছু মনে হবে না। কিন্তু ইন্টারনেটের ফলে নাস্তিকরা যখন বলছে মুসলিম পুরুষরা ৭২ হুর পেলেও মুসলিম নারীদের জন্য জান্নাতে কিছু নেই। উল্টো তাদের জন্য স্বামীর ৭২ হুরের সর্দানির দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এগুলো পড়ে মুসলিম নারীদের মনে প্রশ্ন উঠছে লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে। ফলে ইসলামকে এখন বাঁচাতে হবে যেমন করেই হোক...

গতকাল আমি ইউটিউবে প্রয়াত মাওলানা খন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গিরের একটি টেলিভিশন প্রশ্ন-উত্তর অনুষ্ঠানের অংশ দেখলাম। সেখানে এক নারী টেলিফোনে প্রশ্ন করেছিলেন জান্নাতে পুরুষদের জন্য ৭২ হুর দেওয়ার কথা বলা আছে অথচ আমাদের নারীদের জন্য সেরকম কিছু দেওয়ার কথা নেই কেন? আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর একটুও না ঘাবড়ে অবলীলাক্রমে বলা শুরু করলেন এগুলো হচ্ছে বাংলা অনুবাদের কারণে হয়েছে। আসলে হুর কোন পুরুষ বা নারীবাচক শব্দ নয়। এগুলো ক্লীবলিঙ্গ মানে যা নারী পুরুষ উভয়কেই বুঝায়। ফলে জান্নাতের ‘হুর’ পুরুষ বা নারী কিছুই নয়, তারা উভয় লিঙ্গের জন্য। তাই বলা যেতে পারে হুর নারীরাও পাবে...

মাওলানা সাহেব মিথ্যা বলেছেন। আরবী ‘হাওরা’ শব্দ থেকে হুর শব্দটি এসেছে। হাওরা একটি স্ত্রীবাচক শব্দ এবং স্ত্রীবাচক শব্দের বহুবচন স্ত্রীবাচকই হয় ব্যাকরণ অনুযায়ী। তাই হুর শব্দের অর্থ ‘বহুনারী সঙ্গ’। এগুলো ছাড়াও কুরআনে হুরদের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তার সবগুলিই নারীদেহের উপর। যেমন সুরা ওয়াকিয়া আয়াত ৩৬-৩৭ অংশে বলা হয়েছে হুররা কুমারী সোহাগীনী। এগুলো কি কোন পুরুষের চরিত্রের সঙ্গে যায়? “ওদেরকে আমরা সৃষ্টি করেছি বিশেষরূপে–ওদেরকে করেছি কুমারী, সোহাগিনী ও সমবয়স্কা,”। [সূরা আল-ওয়াকি'আহঃ ৩৫–৩৭] সুরা আন নাবা আয়াত ৩১-৩৩ অংশে বলা হয়েছে ‘মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে সাফল্য, উদ্যান, আঙ্গুর এবং স্ফীত স্তনবিশিষ্টা সমবয়সী বালিকা।’ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর কি ‘স্ফীত স্তনবিশিষ্টা’ কোন পুরুষ আজ পর্যন্ত দেখেছেন? এটা কি নারী পুরুষ উভয়কেই বুঝায়?

এই হাদিস থেকে কি হুর ক্লীবলিঙ্গ বুঝায়? ‘দুনিয়াতে কোন জান্নাতী পুরুষকে কোন নারী কষ্ট দিলে জান্নাতের হুরীরা সে জন্য কষ্ট অনুভব করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোন মহিলা যখনই কোন জান্নাতী পুরুষকে দুনিয়াতে কষ্ট দেয় তখনি তার জান্নাতী হুর স্ত্রী বলতে থাকে, “তোমার ধ্বংস হোক, তুমি তাকে কষ্ট দিও না, সে তো তোমার কাছে সাময়িক অবস্থান করছে, অচিরেই সে তোমাকে ছেড়ে আমাদের নিকট চলে আসবে”। (তিরমিযী: ১১৭৪, ইবনে মাজাহ: ২০১৪)। এখানে কি হুররা যে নারী তা কি স্পষ্ট নয়?

স্পষ্ট বুঝা যায় বলেই জান্নাতের লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে কথা উঠছে। এরকম প্রশ্ন নাস্তিকরা ফেইসবুকে ব্লগে তুলতে তুলতে মানুষের মাথায় চিন্তার বিজ ঢুকিয়ে দিয়েছে। এরকম শত শত বিষয় নিয়ে রোজ অনলাইন মাধ্যমে লেখালেখি চলছে। যার ফলে ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ মানুষ অনেক বেশি জানছে। আর জানছে বলেই এখন ইসলামী স্কলারদের কাজ বেড়ে গেছে। তাদের কখনো বলতে হচ্ছে অনুবাদের ভুল। কখনো বলছে কুরআন ছাড়া আর কিছু গ্রহণযোগ্য নয়। উনারাই আবার হাদিস থেকেই নবীর স্ত্রীদের নামধাম জানেন। অজু নামাজ আজান হজ যাকাত সব কিছু পালন করেন। আসলে দ্রুত মাইনক্কা চিপায় পড়ে যাচ্ছে বুজর্গ আলেম ওলামাগণ। এসব কারণে তাই আরেক শ্রেণীর আলেম আছে যারা ঠিক করেছে কোন রাখঢাগ নয়। ইসলাম যেমন তেমন করেই প্রচার করব। যা আল্লার নির্দেশ তা যেমনই হোক তা নিয়ে প্রশ্ন চলবে না। ফলে অটোমেকলি ‘উদার আলেম’ ও ‘উগ্র আলেম’ দুই শ্রেণীর জন্ম লাভ করেছে। বস্তুত উদার নামের আলেম যে একটা ঠগী তা তো উপরে যা লিখলাম তা থেকেই বুঝে গেছেন!

#সুষুপ্তপাঠক
29 May 2022

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted