পৃথিবীর সম্পর্কগুলোর সঙ্গে ছিন্নতা মেনে না নিতে পারা থেকেই পরকালের জন্ম।

মানুষ জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজবে কিন্তু পাবে না। যা নেই তা কি করে খুঁজে পাবে? মানুষ নিজেকে প্রশ্ন করেছে এই জীবনের উদ্দেশ্য কি? কিছু উদ্দেশ্য নেই। কোন গন্তব্য নেই। কিন্তু সেটি মানুষ বুঝতে পারবে কি করে? মরলে পর কেউ ফিরে এসে তো বলে যায়নি। আসলে মরার সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ শেক্সপিয়র দস্তয়ভস্কি আইনস্টাইন তাদের কারোই তো স্মৃতি থাকেনি। যে মস্তিষ্ক স্মৃতি ধরে রাখে, নিজের খ্যাতি যশের অনুভূতি টের পায় সেটাই পঁচে না হয় আগুনে পুড়ে শক্তির রূপান্তর ঘটে অনু পরমাণুতে মিশে গেছে। বেঁচে থাকতে রবীন্দ্রনাখ অভিমানে গান বেঁধেছিলেন, ‘তারার পানে চেয়ে চেয়ে না-ই বা আমায় ডাকলে’ সে অভিমান বেঁচে থাকতেই। আসলে এই অভিমান, কল্পনা, পৃথিবীর সম্পর্কগুলোর সঙ্গে ছিন্নতা মেনে না নিতে পারা থেকেই পরকালের জন্ম।

আমরা কাফকার দূর্গ উপন্যাসে দেখি কাফকার নায়ক কিছুতে দূর্গে যাবার পথ খুঁজে পায় না। কেউ তাকে সেই পথ বাতলেও দিতে পারছে না। এমনকি সে দেখতে পায় এমন লোককে যারা দূর্গে যাবার জন্য দূগের নিচে গ্রামে নিরন্তর প্রচেষ্টারত আছে সুদীর্ঘকালব্যাপী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাফকা তার নায়ককে দূর্গে পাঠাতে পারেন না। এই দূর্গ হচ্ছে ঈশ্বর, জীবনের লক্ষ্য, জীবনের অর্থ, জীবনের গন্তব্য। এর আগে বিচার উপন্যাসে কাফকা দেখান তার নায়ক আদালত থেকে একটি চিঠি পান যে, তিনি অপরাধ করেছেন কিন্তু কি অপরাধ সেটা বলে না। সে বহু চেষ্টা করেও জানতে পারে না কিসের কারণে তার বিচার করতে চায় আদালত। ক্রমে সে অপরাধবোধে ভুগতে থাকে কিন্তু কি তার অপরাধ বুঝতে পারে না। এ হচ্ছে প্রতিটি মানুষের কর্মফলের হিসাব। আদমের গন্ধম খাওয়ার পাপবোধ। জন্মই তা্র আজন্ম পাপ! 


…জীবনের উদ্দেশ্যহীনতার স্বরূপ উন্মোচন করে তুলে ধরেছিলেন কাফকা। এটিই ‘অস্তিত্ববাদী’ দর্শন। এই দর্শন মানুষকে হতাশ হতে বলে না। বরং সত্যকে মেনে নিয়ে জীবনের একটা অর্থ দিতে চায়। জীবনের কোন পরিণতি নেই, মৃত্যুই একমাত্র গন্তব্য। জীবনে যা-ই করো, যত ছুটাছুটি, খ্যাতি যশ কীর্তি টাকাকড়ি- কোন কিছুর মূল্য নেই কারণ সব কিছু ফেলেই আমাদের চলে যেতে হবে।

আলবেয়ার ক্যমু বলেছেন, দশ হাজার বছর পর শেক্সপিয়রের নাম মুছে যাবে। সব কীর্তিই বিলিন হয়ে যাবে। আমাদের দেহ যে অনু পরমাণুতে গঠিত, মাটিতে পঁচে না হয় আগুনে পুড়ে নতুন শক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে আরেক অনু পরমাণুতে পরিণত হবে। এটাই ‘পরকাল’। জান্নাত জাহান্নাম স্বর্গ নরক নয়। সে হিসেবে মানুষের বিলিন নেই। ধুলো হয়ে এই পৃথিবী আর মহাবিশ্বে সে মিশে যায়। এর মাঝখানে যে ‘জীবন’ তার কোন উদ্দেশ্য নেই।

#সুষুপ্তপাঠক
28 May 2022

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted