কাফিরিস্তানের হিন্দু কাফের দের (হিন্দুদের) শেষ পরিনতি।

“কাফিরিস্তানের হিন্দু কাফের দের (হিন্দুদের) শেষ পরিনতি”

******(আমার লেখা বই 'হিন্দুরাজাদের স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রাম= সামান্য লিখতে বাকী আছে। মহারাজ শীবাজী এবং রানা প্রতাপের কাহিনী লিখেই ছাপিয়ে নেবো)

আমি আগেই লিখেছি, আফগানিস্তানের ইতিহাস না জানলে কোনো ক্রমেই বোঝা যাবে না, কি করে আমাদের ভারত বর্ষ ইসলামী দখলে এলো। সেই ইতিহাস জানতে গিয়ে আমরা একে একে জেনেছি পৌরানিক আফগানিস্তানে যে তিনটি অঞ্চল ছিলো (গান্ধার, কম্বোজ এবং কেকয়) তার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

আমরা জেনেছি, রামায়ন মহাভারতের যুগে এবং তার পরবর্তিতে একবারে হাল আমলের ইতিহাস। এমনকি গুপ্ত সাম্রাজ্যের সময় আফগানিস্তানের বিস্তীর্ন অঞ্চল হিন্দুদের শাসনে ছিলো। এর আগে, নানা সময়ে বিভিন্ন ভীন 
দেশী সম্রাটেরা সামরিক অভিযান চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে আফগানিস্তানের প্রাচীন জনপদ গুলিকে। ধুলায় মিশে গেছে স্থাপত্য, সাংষ্কৃতিক ঐতিহ্য, মানুষের জীবন যাত্রা। একে একে এসেছে পারস্য সম্রাট সাইরাস, আলেকজান্ডার, ইরান কেন্দ্রিক সাসানিদ, সামানিদ কুষানেরা। গুপ্ত রাজাদের সময় সমগ্র আফগানিস্তান আর পুনরুদ্ধার হয়নি, হয়েছিলো গান্ধার। প্রাচীন কম্বোজ এবং কেকয় জাতির বংশধরেরা পালিয়ে বেশীর ভাগ হিন্দুকুশ পার হয়ে মুল ভারতে আশ্রয় নেয়। আজ সেই বংশধরেরা ভারতীয় জীবনধারার অঙ্গীভুত হয়ে গেছে, যেমন জাঠেরা (প্রাচীন কম্বোজ জাতি)। 

সবাই আসেনি বা আসতে পারেনি (যেমন বর্তমান বাংলাদেশের হিন্দুরা)। তাদের কি হলো? 

এরা তাদের ঘরবাড়ি ,প্রাচীন জনপদ ছেড়ে চলে গেলো হিন্দুকুশের উত্তুংগ পর্বত শিখর দিয়ে ঘেরা, দুর্গম এবং সাধারন জন জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন এক পাহাড়ী উপত্যকায়। এরা উদবাস্তু জীবনে ভুলে গেলো তাদের সহজ স্বাভাবিক সমাজ জীবন, নিত্য জীবন। মাঝে মাঝে এলো কিছু বিদেশীরা যারা তাদের প্রভুদের হাত থেকে কোনো কারনে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলো । এলো সাইরাসের সংগে এবং শাসনাধীনে থাকা কিছু পারসী,আলেকজান্ডারের সৈন্য বাহিনীর সংগে আসা গ্রীক দের কিছু কিছু। পরে সাসানিদ, সামানিদ এবং পরিশেষে  কুষান সকলের রাজত্বের সময় ই কিছু না কিছু  উদ্বাস্তুর ঢল এসেছে ওই পাহাড়ি কন্দরে । এরাও বর্তমানে হয়ে আছে এক মিশ্র জাতি। বহু দিন এরা হিন্দু হয়েই ছিলো। কিন্তু সেই ধর্ম পরিবর্তন করতে বাধ্য হলো হাল আমলে। 

হতভাগ্য সেই হিন্দু উদবাস্তু কলোনীর নাম হলো “কাফিরিস্তান” (কাফেরদের জায়গা= কাফীরীস্তান।  ইরান ইসলামিক দেশে পরিনত হয়েছিলো ৬৩৭ সালে। এই ইসলামিক ইরান, তুর্কি খলিফার আশীর্বাদ ধন্য থাকতেই দিতে হতো নজরানা এবং নানা উপোঢৌকন। পারসী অধিকার পালটে ইসলামিক অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হতে বেশ সময় লেগেছিলো।  মুলত  ইরান , বর্তমান বালুচিস্তান , আফগানিস্তানের হিরাট (কেকয়) এবং আরো উত্তরে ‘ট্যাক্সোমানিয়া’ (সেন্ট্রাল এশিয়ার এক বিস্তীর্ন অঞ্চল) নিয়ে এক নতুন শাসক বংশ তৈরী হলো যার নাম ‘সামানিদ বংশ’। পারসী ‘সামান খুদা’ র নামে এই বংশ। 

আমরা জেনেছি, আফগানিস্তানের ‘কাফিরিস্তান’ যার বর্তমান নাম ‘নূরীস্তান’ প্রাচীন কেকয়, কম্বোজ এবং গান্ধার থেকে পালিয়ে বাঁচা হিন্দু উদবাস্তুদের শেষ আশ্রয় স্থল ছিলো।  কিন্তু সেই শেষ আশ্রয়স্থল টুকুও আর রইলো না। 

গজনীর মাহমুদ ঘোর পৌত্তলিক বিরোধী ছিলো। ‘শান্তির ধর্মের প্রতিষ্ঠার জন্য পুতুল পুজা কারীদের হয় ধর্ম পরিবর্তনে বাধ্য করা বা তাদের নিকেশ করাই ছিলো মাহমুদের জীবনের ব্রত। সেই জন্যই সে ১৭ বার ভা্রতে আসে। তাছাড়া প্রায় ৭ বার আফগানিস্তানের প্রাচীন হিন্দুদের শেষ আশ্রয় স্থল “কাপিশি” যাকে ‘কাফিরিস্তান’ বলে ডাকতো, সেই পৌত্তলিকদের আক্রমন করেছিলো।  ঐতিহাসিক ‘ফারিস্তা’ লেখেন, “ভারত এবং হিন্দুকুশের মাঝখানে “নারদিন’ (কাপিশি র অন্তর্গত) নামক অঞ্চলে সে এক নিদারুন হত্যা লীলা চালায়। নারদিন এ একটি খুব বড়ো এবং সুন্দর প্রাচীন মন্দির ছিলো। সেটিকে গুড়িয়ে দিয়ে সেই মন্দিরে রক্ষিত এক প্রাচীন (বৈদিক যুগের) পাথর লিপি নিয়ে চলে আসে। 

১৬০২ সালে, লাহোর থেকে চীনে যাবার পথে  ‘বেনেদিক্টাস গোমস’ নামে এক পর্তুগীজ মিশনারী এই “কাফিরিস্তান পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার বসবাসকারী হিন্দুদের সভ্যতার ভুয়ষী প্রশংষা করে লিখেছেন তার ভ্রমন বৃত্তান্তে।  এমনই আরো বেশ কিছু বিদেশী ঐতিহাসিক, পরিব্রাজক, ধর্ম যাজক এই অঞ্চল ঘুরে এই কথা স্বীকার করেছেন যে,  বিভিন্ন প্রাচীন হিন্দু জনগোষ্টির মাতৃভুমি এই আফগানিস্তান। সেই জনগোষ্টি নানা বৈদেশিক আক্রমনে তাদের নিজস্ব ভুমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং অনেকেই হিন্দুকুশ পেরিয়ে বর্তমান ভারতে চলে আসে। যারা রয়ে যায়, তারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে রাখে ‘কাপিশি’ নামক গিরি উপত্যকায়। আজ তারাও হারিয়েছে তাদের স্বাধীনতা, প্রাচীন ধর্ম বিশ্বাস। বাধ্য হয়েছে এক ভীন দেশী ধর্ম মতকে গ্রহন করতে শুধু মাত্র তাদের প্রান রক্ষা করতে।  

এই কাফিরস্তান (কাপিশি) আজ ১০০% মুসলিম । সেটা হয়েছে মাত্র ১৮৯৬ সালে, সিপাহী বিদ্রোহের অনেক পরে, রাক্কৃষ্ণ পরমহংস দেবের সমসাময়িক সময়ে।  "দ্বিতীয় এঙ্গলো- আফাগান যুদ্ধ” এ এই কাফিরস্তানের ক্ষত্রিয় জাতি  তাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য প্রবল সংগ্রাম করে। সেই জন্যই ব্রিটিশ আর আফগানিস্তান আক্রমন করেনি। ‘ডুড়ান্ড লাইন”নামে খ্যাত চুক্তিদ্বারা আফগানিস্তানের শাসক আমীর আবদুর রহমান খানের সংগে শান্তি চুক্তি করে। সেটা ১৮৯৩ সালে। তার ঠিক ৩ বছর পর ব্রিটিশের প্রচ্ছন্ন মদতে আমীর আবদুর রহমান খান কাফিরস্তান আক্রমন করে। এক প্রবল রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করে আফগানিস্তানের প্রাচীন হিন্দু জাতির শেষ আবাসস্থল টুকু চলে যায়। আমীর বেচে থাকা হিন্দুদের ইসলাম কবুল করতে বাধ্য করে।

এই হচ্ছে, রামায়নের কৌকেয়ী র মাতৃভুমি , কুন্তীর পাঁচ বোনের পাঁচ সন্তানের মাতৃভুমি, প্রাচীন কম্বোজ জাতির (ভারতের জাঠ) মাতৃভুমি এবং গান্ধারীর মাতৃভুমির ইতিহাস। গজনীর মাহমুদের তান্ডবী লীলা এই ইতিহাসের এক মুখ্য ফলশ্রুতি। প্রাচীন হিন্দু রাজ্য আজ তালিবানী এবং আমেরিকান খেলোয়াড়দের খেলার মাঠ।। 

তবে এই "কম্বোজ জাতি" একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। ভারতে আছে 'বর্মন' হয়ে। অনেকে তিব্বতের মাল্ভুমি পার হয়ে চলে যায় বর্তমান 'কম্বোডিয়া" নামে স্তানে এবং সেখানে রাজা সুর্য্য বর্মন প্রথম রাজত্ব শুরু করেন এবং 'আঙ্কোর ভাট' নামে বিষ্ণু মন্দির তৈরী করেন এবং আজ সেখানে আছে প্রায় ৩৬০ টি হিন্দুদের নানা মন্দির। 

আমি মোট ৩ বার গেছি। ভাবছি এই নিয়ে একটা ডকুমেন্টারী করে রেখে যাবো।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted