কে এই মোহাম্মদ জুবায়ের? ‘মুসলিম বিদ্বেষের’ দেশে একজন ‘হিন্দু’ নারীকে রেপ করার ওপেন আস্ফলন তাহলে কারা দিচ্ছে?

নূপুর শর্মার ইন্টারভিউ শুনে যে ‘মুসলিম উম্মাহ’ পলিট্রিক্যাল প্লাটফর্মের কথা চোখের সামনে ফুটে উঠে সে প্লাটফর্মের কথা আমি বহুদিন ধরে বলে আসছি। যে প্লাটফর্মের সদস্য আসলে প্রতিটি ধর্ম বিশ্বাসী মুসলমান! পুরো ভিডিও (আমার পেইজে আপলোড করেছি) দেখে আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, ভারত যদি ‘হিন্দুদের দেশ’ হয়ে থাকে, যেমনটা মুসলমানরা দাবী করে থাকেন ক্ষোভ থেকে, তাহলে বিজেপির একজন কেন্দ্রীয় মুখপাত্রকে ৭০ হাজার খুন, রেপ করার হুমকি সম্বলিত ম্যাসেজ কারা দিচ্ছে? অরুন্ধতীকে জবাব দিতে হবে এই থ্রেট কি মুসলিমরা দিচ্ছে? নাকি কমিউনিস্টরা? ‘মুসলিম বিদ্বেষের’ দেশে একজন ‘হিন্দু’ নারীকে রেপ করার ওপেন আস্ফলন তাহলে কারা দিচ্ছে? এই উত্তর মাওবাদী লেখিকাকে দিতেই হবে কারণ তিনি ভারতকে বহির্বিশ্বে ‘মুসলিম বিদ্বেষী’ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করে তুলেছেন। এরা কি কোনদিন মোহাম্মদ জুবায়েরদের মত ‘মুসলিম উম্মাহ’ পরিচালনাকারীদের নিয়ে কথা বলেছেন? বলেননি। এখনো বলবেন না। চুপ করে মোহাম্মদ জুবায়েরদের বিজয় দেখতে চাচ্ছেন...।

কে মোহাম্মদ জুবায়ের? এই সেই লোক যে সেদিনের টিভি টকশো ভিডিও এডিট করে নূপুর শর্মার বক্তব্য খন্ডিত করেছে। তারপর নিজের ফেইক নিউজ সাইটে সেটা আপলোড করেছে। তার মালিকানায় একাধিক ফেইক নিউজ পোর্টাল রয়েছে। সেই পোর্টাল ও তার টুইট থেকেই নূপুর শর্মাকে ‘নবীকে গালি দেওয়ার’ খবর প্রচার করা হয়। কিন্তু কোথায় গালি? কোথায় নবী অবমাননা? তিনি শুধু বলেছেন নবী আয়েশাকে ৬ বছর বয়সে বিয়ে করে ৯ বছর বয়সকালে তার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মত ব্যবহার করেছেন। সেটাও বলেছেন যখন হিন্দু ধর্ম নিয়ে মুসলমানরা ও কমিউনিস্টরা ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে তখন তিনি বলেছেন যদি এখন আমি নবী সাহেবের এটা নিয়ে কিছু বলি তো কেমন হবে? উড়ন্ত ঘোড়া (বুরাক) নিয়ে যদি প্রশ্ন করি...। নূপুর শর্মা বলছে ভারত ও ভারতের বাইরে থেকে মুসলিম আইডিগুলো থেকে তাকে থ্রেটের পাশাপাশি ভগবান কৃষ্ণ তাকে বলাত্কার করছে এমন এডিটিং ছবি পাঠানো হচ্ছে। এরকম ছবি লক্ষাধিক! এগুলো কি কোন ধর্ম অবমাননা নয়?

একদমই নয়। কেননা মুসলমানদের যে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম ‘মুসলিম উম্মাহ’ আছে সেটি আর কারোর নেই। চিন্তা করুন, ফেইক নিউজ দিয়ে কাতার সৌদি আরবকে দিয়ে ভারতীয় দুতকে ডেকে ক্ষোভ প্রকাশ করানো সম্ভব! কিভাবে সম্ভব? কারণ এরকম ফেইক নিউজ ছড়ালে ‘মুসলিম উম্মাহ’ যার যার জায়গায় দাঁড়িয়ে সেটাকে প্রতিষ্ঠিত সত্য করতে কাজ করে যায়। ইসলাম একটি মেলিটারি ধর্ম। মুসলমান একটি সেনাবাহিনীর অংশ। তাই কোন অমুসলিম প্রধান রাষ্ট্রের মুসলমানরা কখনোই সেই দেশে মিশে যেতে পারে না। তারা চেষ্টা করতে থাকে কি করে নিজেদের ‘মুসলিম দেশ’ করা যায়। ইংলেন্ডে বসবাস করা ৯৯ ভাগ পাকিস্তানী বাংলাদেশী ভারতীয় আফ্রিকান মুসলমান চায় ইংলেন্ড হোক মুসলমানদের দেশ। ফ্রান্স বেলজিয়াম জার্মানি সব জায়গায় নিজেদের দেশ করার মিশনে অতি সাধারণ মুসলমানরা, যাদের কোন সংঘের সঙ্গেই যোগ নেই, কিন্তু পারিবারিক ধর্মীয় শিক্ষায় তারা জানে একমাত্র সত্য ‘কুরআনের আইনে’ দেশ চলতে হবে...।

খুবই মজার কথা হচ্ছে, নূপুর শর্মা ইন্টারভিউতে জানাচ্ছেন, গোয়েন্দারা তাকে সতর্ক করে দিয়েছেন তিনি ও তার পরিবার হামলার মুখে আছেন যেটা হালকা করে দেখার কোন সুযোগ নেই! যে দেশে নাকি গরুর মাংস খেলেই মুসলমানদের ধরে ধরে মারে, জোর করে জয় শ্রীরাম পড়ায় সেদেশে ‘ভয়ংকর একজন হিন্দুত্ববাদী’ নারীকে হত্যা করার সাহস কে করে? ভোলানাথ সেনকে যারা হত্যা করেছিলো তারাও সেই ১৯৩৪ সালে নিজেদের হিন্দুদের অধিনে নির্যাতিত বৈষম্যের শিকার দাবী করত। রঙ্গিলা রসূল বইটিও লেখা হয়েছিলো সীতাকে কুলটা নারী হিসেবে আখ্যায়িত করে একটা বইয়ের পাল্টা জবাব হিসেবে। কিন্তু রঙ্গিলা রসূল লেখায় খুন হোন প্রকাশক। হৈ চৈ পড়ে যায় ভারত জুড়ে। জিন্না বিনা ফিতে মামলা লড়েন খুনিকে বাঁচাতে। শেষ রক্ষা হয়নি সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ বিচারকের কারণে। খুনির ফাঁসি হলে তার জানাজায় দাঁড়িয়ে কবি আল্লামা ইকবাল কেঁদে উঠে বলেন, আমরা এই মুসলমান তরুণের (খুনির) মত হতে পারলাম না...। অথচ হিন্দুদের কাছে সীতা মুসলমানদের নবীর মতই সন্মানিত। তাকে বেশ্যা বানিয়ে বই লেখায় হিন্দুরা কোন সাড়াশব্দ করেনি। শুধুমাত্র একজন লেখক (অগ্যাত)‘রঙ্গিলা রসূল’ বই লিখে প্রতিবাদ জানায়। সেটাই অপরাধ হলো। আগেরটা কোন অপরাধ নয়। আজো সেই ধারা চলছে। মুসলমান বিশ্বে শুক্রবার মানে মূর্তি পুজা নিয়ে বিদ্বেষ, ইহুদী খ্রিস্টানদের নিয়ে বিদ্বেষ কটুক্তি করার দিন। কোথাও এ জন্য কাউকে ডেকে জেরা করা হয় না। মসজিদ থাকতেও রাস্তা আটকে নামাজ পড়ার চেষ্টা করে অমুসলিম দেশে নিজেদের নিপীড়িত সাজায় যখন প্রশাসন বাঁধা দেয়। সারাদিন নিজেদের নির্যাতিত, নিপীড়িত, ফোবিয়ার শিকার বলতে তাদের আছে বিনিসুতায় গাঁথা ‘মুসলিম উম্মাহ’। আর সুতোয় বাঁধা সংগঠনের নাম ওআইসি। এরকম সাম্প্রদায়িক সংগঠনকে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ যারাই কিনা ভারতে ‘হিন্দুত্ববাদ’ জেগে উঠায় উদ্বিগ্ন!

শেষ কথা ভারতীয় লিবারাল সেক্যুলার কমিউনিস্ট এক্টিভিস্টদের কেউ নূপর শর্মার পক্ষে দাঁড়ায়নি। এই ঘরোনার কোন নারীরাও তাকে সাপোর্ট করেনি। নূপুর শর্মাকে ওপেন রেপ করার ঘোষণার পরও তারা চুপ থেকেছে কারণ নূপুর শর্মা ‘হিন্দুত্ববাদী’। নূপুর শর্মা ইন্টারভিউ শুনতে শুনতে মনে হয়েছে ভারতীয় এই নারী অনেক অনেক স্বাধীন অন্যান্য নারী থেকে। হিন্দুত্ববাদ ভুল জাতীয়তাবাদ ঠিকই কিন্তু কোন মুসলিম শাসনে থাকা নারী চাইতে ভারতীয় সমাজে হিন্দু সমাজে জন্ম নেয়া নূপুর কি অনেক স্বাধীন আধুনিক নয়? তালিমের দলের বোরখায় মুড়া, হাত মোজা পা মোজা পরা মুমিনা আর নূপুর শর্মা কি এক? তাহলে দুটো মৌলবাদ কেমন করে এক করে দেখবো? মুসলিম লীগের রাজনীতি যেমন আমার কাছে পরিত্যাজ্য তেমন করে হিন্দু জাতীয়তাবাদের রাজনীতিও আমার কাছে পরিত্যাজ্য- কিন্তু দুটো কি একই পাল্লায় মাপা যায়? অরুন্ধতী রায়রা কি মনে করেন ভারতে মুসলিম শাসন আরো দীর্ঘ হলে কোন সমস্যা ছিলো না? ইংরেজরা এসেই ভারতকে পরাধীন করেছিলো? এর আগে ভারত পরাধীন হয়নি? এই যে ডিবেট এখানে আপনি নূপুর শর্মার মত শিক্ষিত নারী পাবেন, তিনি আপনাকে বলবে না মনুর আইন বাস্তবায়ন করাই একমাত্র সমাধান। বলছি তার রাজনীতি আমার পথ নয়। কিন্তু ভারতে নূপুর শর্মারা কি মোহাম্মদ জুবায়েরদের থেকে বেশি বিপদজনক? যারা ফেইক নিউজ বানিয়ে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঘাম ছুটিয়ে দিতে পারে, পার্টির নেত্রীকে রেপ থ্রেট খাওয়াতে পারে, আল কায়দাকে দিয়ে হামলা করানোর সুযোগ করে দিতে পারে তাদের অনিষ্ট করার ক্ষমতাকে মুখে স্বীকার না করলেও এদের ক্ষমতা দেখে আরো বেশি করে যে এদের কাঁধে চেপে বিপ্লব করার খোয়াব গাঢ় হবে বলাই বাহুল্য...।

#সুষুপ্তপাঠক
9 June 2022

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted