নূপুর শর্মা অনুভূতিতে আঘাত লাগার মত কি বলেছে? হযরত মুহাম্মদ আয়েশাকে ৬ বছর বয়সে বিয়ে করেন আর আয়েশার যখন ৯ বছর তখন তার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর মত বসবাস করেন- এটা বলে নূপুর শর্মা কেমন করে মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত করলো যে কাতার পর্যন্ত ভারতীয় দুতকে ডেকে প্রতিবাদ জানালো? দুদিন আগেই এই হাদিসটা আয়েশার বিয়ে সংক্রান্ত পোস্টেই দিয়েছিলাম। আবার দেখুন: সহি বুখারি, ভলুম-৭, বই -৬২, হাদিস নং- ৬৫
“আয়েশা হতে বর্নিত- মহানবী তাকে ছয় বছর বয়েসে বিয়ে করেন, নয় বছর বছর বযেসে তাদের বিবাহিত জীবন শুরু হয়। হিসাম জানিয়েছিল- আমি জেনেছি আয়েশা মহানবীর মূত্যুর আগ পর্যন্ত নয় বছর যাবত বিবাহিত জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।“
সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হচ্ছে জ্ঞানবাপী মসজিদে শিবলিঙ্গ পাওয়া নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে ভারতেই মুসলমানরা শিবের লিঙ্গ নিয়ে হাসি তামাশা বিদ্রুপ উপহাস করে হাজার হাজার ফেইসবুক পোস্ট টুইট করেছে। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছিলো কমিউনিস্টরা। এমনকি ভারতের বাইরে থেকে আরব ও অন্যান্য মুসলিম দেশের মুসলমানরা ভারতের জ্ঞানবাপী মসজিদে সম্প্রীতি শিবলিঙ্গ পাওয়া নিয়ে চূড়ান্ত মাত্রায় হিন্দু ধর্মের উপর মকারী করে ভরিয়ে ফেলেছে। কিন্তু তখন কারোর মনে আসেনি এটা একটা ধর্মের বিশেষ দেবতাকে নিয়ে মকারী হচ্ছে? ভারতও কোন দেশের দুতকে ডেকে প্রতিবাদ জানায়নি। জাকির নায়েকের শত শত ভিডিও, হাজার হাজার ইসলামী স্কলারের ভিডিও আছে যেখানে তারা বুখারী শরীফ থেকে বলছেন আয়েশাকে নবী ৬ বছর বয়সে বিয়ে করে ৯ বছর বয়সের সময় স্ত্রীর মত ব্যবহার করেছেন। নূপুর শর্মা সেটাই বলছিলো শিবলিঙ্গ নিয়ে যেভাবে বিদ্রুপ করা হয়েছে ইসলাম ধর্ম নিয়েও সেরকম করা যেতে পারে। তারপরই তিনি এই উদাহরণটা দিয়েছিলো। এগুলো নতুন কিছু নয়। ইবনে হিশাম নবী জীবনীতে নবীর দাসি রাখার কথা লিখে গেছেন, তার ১১ স্ত্রী ২ দাসী ছিলো এসব তথ্য লেখা হিশাম লিখিত ‘সিরাতুন নবী’ বইটি মুসলমনরা চুমু খায় ভক্তিভরে। সেই একই বই থেকে যদি আপনি উদারহণ দেন, যদি আপনি নাস্তিক হোন বা অন্য কোন ধর্মের- তাহলেই সেটা মুসলমানদের আহত করে!
আমার আসলে এটা পয়েন্ট না। আসল পয়েন্ট হচ্ছে গোটা বিশ্বে মুসলমানরা ‘ধর্ম অবমননা’ বলতে কেবলমাত্র ইসলামকেই বুঝানো প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। আরবের অর্থ, তারা বড় মার্কেট সেটা ধরে রাখতেই তাদের এই সব ফালতু সেন্টিমেন্টকে সবাই গোণায় ধরছে। বাণিজ্যের কারণেই পশ্চিমারা মুসলমানদের ‘ইসলামোফোবিয়া’কে পাত্তা দেয়। কিন্তু আমাকে ভাবায় ভারতীয় মুসলমানদের নিয়ে। ওমর আবদুল্লাহ টুইট করে আরবদের প্রতিক্রিয়াকে এমনভাবে সেলিব্রেট করেছে তাতে ভারতীয় মুসলমানদের পিতৃভূতি কিংবা তাদের গার্জিয়ান হিসেবে তাদের দেখানো হচ্ছে। শিব লিঙ্গ জ্ঞানবাপী মসজিদে পাওয়া গেলে সেটি এতটাই স্বাভাবিক যেমনটা আলু খেতে গেলে আলু পাওয়া যাওয়ার মতই। কাশি গয়া হচ্ছে হিন্দুদের তীর্থ। সেখানে মন্দির ছাড়া আর কি আশা করা যায়? ঔরাঙ্গজেব সেই কাশিতে মসজিদ যখন করেছিলো তখন মন্দির ভেঙ্গেই করেছিলো। বিদ্যাসাগর রবীন্দ্রনাখ পর্যন্ত সে ইতিহাস সকলে জানলেও (রবীন্দ্রনাথের কবিতায় ঔরাঙ্গজেবের সাম্প্রদায়িক আচরণের কথা লেখা আছে) এরপর থেকে কমিউনিস্ট পন্ডিতরা ভারতের যে ইতিহাস লেখে সেখানে ইংরেজ আমলকে নরক বানিয়ে মুসলিম শাসনকে দেখানো হয় হিন্দু মুসলমানের মিলন মেলা হিসেবে। সেসব কথা এখন নতুন করে আর না-ই বা বললাম। আসি নূপুর শর্মার কথায়। হাদিসের তথ্যগুলো বলে তিনি কেন একা অপরাধী হবেন? এই যে ভারতকে হিন্দুত্ববাদী দেখাচ্ছেন, সেখানে মুসলিমরা নির্যাতিত, নোয়াম চমেস্কি কয়েক মাস আগেই বলেছিলো ভারতে মুসলিমফোবিয়া ছড়ানো হচ্ছে, অরুন্ধতী রায় দুদিন আগে বলল, হিন্দুত্ববাদীরা মুসলমানদের ভারত থেকে বিতাড়িত করতে চায়- তাহলে এরকম নিরহ পীড়িতরা এখন নূপুর শর্মাকে রেপ করা থ্রেট কি করে দিচ্ছে? হত্যার হুমকিগুলি ভারতে বসেই কারা দিচ্ছে? আর উত্তর প্রদেশে রাস্তায় নেমে ইট পাটকেল যারা ছুড়ছে তারা কি ভারতে হিন্দুদের ভয়ে কুঁকড়ে থাকে? বাংলাদেশের ধর্ম ব্যবসায়ীদের পেইজগুলি থেকে নূপুর শর্মার বক্তব্য নিয়ে উশকানি দেওয়া হচ্ছে- কেন লোকজন রাস্তায় নামছে না। নূপুর শর্মা বিজেপির রাজনীতি করতেন বলেই তার হয়ে কথা বলা যাবে না? বিজেপির একজন নেত্রী বলেছেন বলেই এখন মুসলিম মৌলবাদীদের পক্ষ নিবেন?
#সুষুপ্তপাঠক
6 June 2022
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................