আইনস্টাইন নাকি বলেছিলেন, “ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান অসহায় বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অসহায়”! আস্তিকদের আইনস্টাইনের নাম ব্যবহার করে অন্য আস্তিকদের ঈমান মজবুত করতে এই মিথ্যাচারটি করতে হয়। যাতে আস্তিকরা মনে করতে পারে এতবড় বিজ্ঞানী হয়ে যদি তিনি ধর্ম বিশ্বাসী হতে পারেন তাহলে নিশ্চয় ধর্ম সত্য। আর ধর্ম সত্য হলে “একমাত্র সত্য ধর্ম” তো ইসলামই হবে! মূলত এই রকম আত্মপ্রতারণা করে বড় বড় বিজ্ঞানীদের নাম ব্যবহার করে তাদের মুখ দিয়ে এমন সব কথা বলানো হয় যা সেইসব মহান মানুষগুলি বেঁচে থাকতে কোনদিনই বলেননি। যেমন মাইকেল এইচ হার্টের লেখা বই দেখিয়ে বলা হয় পশ্চিমা একজন খ্রিস্টান লেখক হযরত মুহাম্মদকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ বলেছেন- অথচ তিনি আদৌ সেরকম কোন কথাই বলেননি। সে সম্পর্কেও নিচে আলোচনা করব। মহাকবি দান্তে তার ডিভাইন কমেডিতে হযরত মুহাম্মদের কথা বলেছেন এটাও আমি শুনেছি আস্তিকদের কাছে। এটা বলে তারা বুঝাতে চায় খালি নাস্তিকরা হযরত মুহাম্মদকে ছোট করে দেখালেও কবি দার্শনিকরা ঠিকই প্রফেট মুহাম্মদকে বড় করে দেখে। কিন্তু যখন আপনি ডিভাইন কমেডি পড়বেন তখন জানতে পারবেন সেখানে মুহাম্মদ ও আলীকে দান্তে নরকের আগুনে শাস্তি পেতে হচ্ছে বলে দেখিয়েছেন- প্রশংসা করেননি!
আইনস্টাইন যে ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান অচল’ এরকম কথা বলেছেন তার স্বপক্ষে কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন রেফারেন্স কেউ সামনে আনতে পারেনি। আপনি যখন এইসব মুমিন তাকিয়াবাজদের কাছে রেফারেন্স চাইবেন তখন কোন একটা ইংরেজি ব্লগ সাইট বা নিউজ সাইটের লিংক সামনে হাজির করবে। এগুলো তো কোন রেফারেন্স নয়। রেফারেন্স হবে আইনস্টাইনের কোন ভাষণ, থিসিস, ইন্টারভিড। এই যে আমি এই লেখাটা লিখছি, এখানে যদি কোন প্রমাণ ছাড়াই শুধু বলি আইনস্টাইন এমন কথা বলেনি সেটা কি কোন কিছু প্রমাণিত হবে? হবে না। আসুন দেখি আইস্টাইন আসলে ধর্ম সম্পর্কে কি বলেছিলেন। যেহেতু ‘ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান অচল’ এমন কথা আইনস্টাইন বলেননি সেটা আর কি করে সামনে হাজির করব? ঈশ্বর নেই সেটা যেমন আস্তিকদের ঈশ্বরকে দেখিয়ে প্রমাণ করা কর্তব্য ঈশ্বর আছে তেমনি আইস্টাইন ধর্মের পক্ষে বলেছেন তেমন অথেনটিক প্রমাণ আস্তিকদেরই সামনে আনা উচিত। আমি এখানে ১৯৫৪ সালে দার্শনিক এরিক গুডকিন্ডকে লেখা আইনস্টাইনের বিখ্যাত ‘গড লেটার’ তুলে ধরব। আইনস্টানের কাছে সাধারণ মানুষ দেখা হলেই জানত চাইত তিনি ঈশ্বরের বিশ্বাস করেন কিনা? আইনস্টাইন এই প্রশ্নে হেঁয়ালী করে উত্তর দিয়ে মজা করতেন। কিন্তু মৃত্যুর কয়েক বছর আগে দার্শনিক বন্ধুর কাছে লেখা চিঠিতে আইনস্টাইন লিখেন ঈশ্বর মানুষের দুর্বল মনের কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। বাইবেল তার কাছে শিশুতোষ কথাবার্তা ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না...। গুডকিন্ডকে লেখা আইনস্টাইনের সেই চিঠিটা নিচে দিচ্ছি-
Princeton, 3. 1. 1954
Dear Mr Gutkind,
Inspired by Brouwer’s repeated suggestion, I read a great deal in your book, and thank you very much for lending it to me. What struck me was this: with regard to the factual attitude to life and to the human community we have a great deal in common. Your personal ideal with its striving for freedom from ego-oriented desires, for making life beautiful and noble, with an emphasis on the purely human element. This unites us as having an “unAmerican attitude.”
Still, without Brouwer’s suggestion I would never have gotten myself to engage intensively with your book because it is written in a language inaccessible to me. The word God is for me nothing more than the expression and product of human weakness, the Bible a collection of honorable, but still purely primitive, legends which are nevertheless pretty childish. No interpretation, no matter how subtle, can change this for me. For me the Jewish religion like all other religions is an incarnation of the most childish superstition. And the Jewish people to whom I gladly belong, and whose thinking I have a deep affinity for, have no different quality for me than all other people. As far as my experience goes, they are also no better than other human groups, although they are protected from the worst cancers by a lack of power. Otherwise I cannot see anything “chosen” about them.
In general I find it painful that you claim a privileged position and try to defend it by two walls of pride, an external one as a man and an internal one as a Jew. As a man you claim, so to speak, a dispensation from causality otherwise accepted, as a Jew the privilege of monotheism. But a limited causality is no longer a causality at all, as our wonderful Spinoza recognized with all incision, probably as the first one. And the animistic interpretations of the religions of nature are in principle not annulled by monopolization. With such walls we can only attain a certain self-deception, but our moral efforts are not furthered by them. On the contrary.
Now that I have quite openly stated our differences in intellectual convictions it is still clear to me that we are quite close to each other in essential things, i.e; in our evaluations of human behavior. What separates us are only intellectual “props” and “rationalization” in Freud’s language. Therefore I think that we would understand each other quite well if we talked about concrete things.
With friendly thanks and best wishes,
Yours,
A. Einstein
(ইন্টারনেট থেকে আইনস্টাইনের ‘গড লেটার’ পড়ার লিংক কমেন্টে দিলাম)
এই হচ্ছে ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে আইনস্টাইনের অবস্থান। আইনস্টাইন যে ধর্ম ও ঈশ্বরকে দুই পয়সা দিয়ে দাম দিতেন না, এগুলো যে মানুষের আদিম অজ্ঞতার ফসল সেটা তিনি বন্ধুর কাছে অকপটে বলে গেছেন। তবু আশ্চর্যজনকভাবে আইনস্টাইনের নাম ব্যবহার করে ধর্ম ও ঈশ্বর সম্পর্কে সাধারণ আস্তিকদের বিভ্রান্ত করা হয়। মুসলমানদের মধ্যে আরেকটি জনপ্রিয় অপপ্রচার হচ্ছে মাইকেল এইচ হার্টের লেখা “A ranking of the most Influencial persons in History” বই নিয়ে। প্রথমেই বাংলাতে এই বইটির নাম অর্থগতভাবে বিকৃত করা হয়েছে। বাংলাদেশে এই বইটির অনুবাদ করা হয়েছে বিশ্বের একশজন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ! অথচ হার্ট তার বইয়ের নাম দিয়েছেন যার বাংলা করলে অর্থ হয় “ইতিহাসের সবার্ধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিগণের তালিকা”। এই বইটি হার্ট হিটলারকেও রেখেছেন তালিকায়। কারণ তিনি বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লিস্ট করেছেন। সেখানে নরপিশাচ থেকে সাধুসন্ত যারাই তাদের সময় পৃথিবীকে প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন তাদেরকেই তিনি তালিকাতে রেখেছেন। সেক্ষেত্রে হার্টের মনে হয়েছে তিনি তালিকায় হযরত মুহাম্মদের নাম সবার আগে রাখবেন তাই তিনি রেখেছেন। হার্টের মুহাম্মদের নাম সবার আগে রাখার অন্যতম কারণটি ছিলো, মুহাম্মদ সেই সপ্তম শতাব্দীতে নিজে একটি ধর্ম তৈরি করে, একজন সেনানায়ক হিসেবে রাজ্য বিস্তার করে আরব জাতীয়তাবাদকে ‘মুসলিম’ পরিচয়ে এক করে বাধতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে মুহাম্মদের এই দর্শন প্রায় সমগ্র বিশ্বকে ইসলামী খিলাফতের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছিলো। এ জন্য ইসলাম ও তার ফাউন্ডার মুহাম্মদ ছিলো সপ্তম শতাব্দীতে সবচেয়ে আলোচিত। মাইকেল এইচ হার্টের লেখা বইও মুসলমানরা পড়ে দেখেনি। যদি দেখত তাহলে ভুলেও তারা এই বইয়ের নাম মুখে নিতো না। কারণ হার্ট তার বইতে মুহাম্মদকে প্রথমে স্থান দিয়ে তার নবীত্ব যে সবই গাঁজাখুরি গল্প সেটা স্পষ্ট করে বলেছেন এভাবে, “…Moreover, he is the author of the Moslem holy scriptures, the Koran…”। অর্থ্যাৎ, মুহাম্মদ যে নিজেই কুরআন লিখেছে এই বইতেই সেটা হার্ট জানাচ্ছেন। অথচ এই বই দেখিয়েই মুসলমানরা মুহাম্মদকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ বলে দাবী করে!
-সুষুপ্ত পাঠক
#সুষুপ্তপাঠক
2 July 2022
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................